সম্পর্ক যদি বিষাক্ত হয়ে ওঠে, অর্থাৎ সম্পর্কের কারণে যদি কারও জীবনের স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়ে যায়, তবে তা থেকে বেরিয়ে আসাটাই ভালো। বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এলে জীবনের সৌন্দর্যকে নতুনভাবে উপভোগ করার সুযোগ বাড়ে। তবে এই বেরিয়ে আসা বা বিচ্ছেদের পরামর্শ দেওয়াটা যত সহজ, বাস্তবে তা করা ততটাই কঠিন। কিন্তু কেন?
একজন মানুষ কতটা আত্মবিশ্বাসী এবং তিনি কতটা আত্মপ্রত্যয়ী বা স্বাধীনচেতা হিসেবে বেড়ে উঠেছেন, সেসবের ওপর নির্ভর করে তাঁর বড়সড় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা। যিনি টক্সিক সম্পর্কে ‘অ্যাবিউজড’ হন, তাঁর সেই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বা আত্মবিশ্বাস কম থাকে।
টক্সিক সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া, মানিয়ে নেওয়া, অভ্যস্ততা, টক্সিক মানুষটির প্রতি ‘মায়া পড়ে যাওয়া’, সন্তানের কী হবে—এসব কিছু সম্পর্কের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেই সঙ্গে পরোক্ষ ভূমিকা রাখে তাঁর নিজ দেহের কিছু হরমোন, শারীরবৃত্তীয় ব্যাপারস্যাপারও। অর্থনৈতিক কারণেও অনেকে টক্সিক সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসে না।
টক্সিক সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে না পারার বেশ কিছু কারণ জানালেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ। তাঁর কাছ থেকেই জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
‘এই আমার ভাগ্য, জীবনের বাস্তবতা’
নিজের জীবনকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে একজন মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পিছপা হতে পারেন। শৈশব থেকেই যিনি নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে কিংবা ছোটখাটো সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম, তাঁর পক্ষে বিচ্ছেদের মতো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। কেউ কেউ ভাবতে পারেন, সম্পর্ক ভাঙাটা অন্যায় কিংবা এটি হয়তো তাঁর ভাগ্য, জীবনের বাস্তবতা, দুর্বলতা, ব্যর্থতা বা গ্লানি। এমন ভাবনার কারণে বিষাক্ত সম্পর্ক টিকিয়ে রাখেন অনেকে।
লোকে কী বলবে
বিচ্ছেদের পর বহু মানুষকেই প্রায়ই সামাজিক চাপের সম্মুখীন হতে দেখা যায়। আত্মীয়, প্রতিবেশী, সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব—অনেকেই তিক্ত মন্তব্য বা ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসেন। নানা প্রশ্নে তাঁদের জর্জরিত করে তোলেন। এই চাপকেও ভয় করেন অনেকে। উপরন্তু তাঁদের যদি সন্তান থাকে, তার পারিবারিক বা সামাজিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও কাজ করতে পারে।
হরমোনও কাজ করে অনুঘটক হিসেবে
আমাদের দেহের এপিনেফ্রিন, ডোপামিন বা সেরোটোনিনের মতো রাসায়নিকের পরোক্ষ প্রভাব আমাদের সম্পর্কগুলোর ওপর পড়ে। একটা সম্পর্কে পরস্পরের প্রতি যে বিশেষ নির্ভরশীলতা সৃষ্টি হয়, তাতে এগুলোর খানিকটা প্রভাব থাকে। এই যোগসূত্রের কারণেও একটা সম্পর্ক ভাঙা খুব একটা সহজ হয় না। বরং সম্পর্ক ভাঙতে গেলে খারাপ অনুভুতি গ্রাস করে।
সম্পর্ক টিকে থাকবে জীবনভর, এমনটাই কাম্য। তবু যদি তা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে এবং কোনো ভাবেই আর আপস করা সম্ভব না হয়, তাহলে নিজের প্রতি বিশ্বাস বাড়াতে চেষ্টা করুন। ভেবেচিন্তে সঠিক সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করুন। ভয় পাবেন না। বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করে তুলুন, সম্পর্ক ভেঙে গেলেই যাতে একলা হয়ে না পড়েন। নানা কাজে নিজের দক্ষতা বাড়ান। নিজের সামাজিক অবস্থান দৃঢ় করুন। শরীর-মন কিংবা সমাজের দিক থেকে যত বাধা আসুক, সামলে নিন। কাছের মানুষ, প্রয়োজনে পেশাদারদের সাহায্য নিন।