বাড়িতে উৎসবমুখর পরিবেশ। অহনার (ছদ্মনাম) বিয়ের দিন পাকা হয়েছে। প্রায় দুই বছরের ভালো লাগা-ভালোবাসার পর আজ দিনটি ঠিক হলো। গত দুই বছরে বহুবার প্রেমিক আদিবকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার আকুলতা অহনাকে আচ্ছন্ন করেছে। কিন্তু দিন ঠিক হওয়ার পর থেকেই কেন যেন একটা ভীতি আর অনীহা কাজ করছে অহনার মধ্যে! এমন হওয়াটা কি স্বাভাবিক! কেনই-বা এত কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটিকে অনিশ্চিত মনে হচ্ছে, ভেবে পাচ্ছে না অহনা।
ভারতের কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট রচনা আওয়াত্রামানি বলেন, বিয়ের ঠিক আগে, একজন নারী বা পুরুষের এ ধরনের অনুভূতি হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। অনেকেই এ সমস্যা তাঁর কাছে নিয়ে আসেন। রচনা বলেন, একজন নারী বা পুরুষ বিয়ের পর আদর্শ জীবনসঙ্গী হতে পারবেন কি না, এই দ্বিধা থেকেই এই ভীতির সৃষ্টি হতে পারে। আর এ থেকেই অনেকে বিয়ে করতে পিছিয়ে যান। যদিও এটি ভাবার কোনো কারণ নেই যে বিয়ে ভেঙে দেওয়া বা নতুন এ সম্পর্ক থেকে সরে আসাই সমাধান। তবে এ ধরনের পরিস্থিতিতে কিছুটা সময় নেওয়া ও বোঝাপড়া করাটা জরুরি বলে মনে করেন এই মনোবিদ।
দীর্ঘ সময় একটি সম্পর্কে থাকার পর দুটি মানুষ যখন সামাজিকভাবে একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তাঁদের কোনো একজনের মধ্যে এই অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। মনোবিদের মতে, এ সময় নিজেকে আলাদা কিছু সময় দেওয়া উচিত, চিন্তা করা উচিত, কেন তিনি তাঁর প্রিয় মানুষটিকে জীবনসঙ্গী হিসেবে চেয়েছেন। এখন কেন এই সম্পর্কটিতে জড়াতে ভয় পাচ্ছেন, সেই কারণটিও খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কোনো ব্যক্তি অথবা কাউন্সেলরের পরামর্শ নিন।
পরে এই বিষয় নিয়ে আপনার হবু বর বা স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করুন। অনেক সময় খোলামেলা আলোচনা একে-অপরের ভয় দূর করতে সাহায্য করে। এমনও হতে পারে যে শুধু একজন নন, দুজনই বিয়ে নামের অধ্যায়টি নিয়ে শঙ্কিত। বিয়ে এমন একটি সামাজিক প্রথা, যার ভিত হচ্ছে, সারা জীবনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া, পারস্পরিক আস্থা ও দায়িত্ববোধ। আর এ জন্য বিয়ের আগে অনেকের মধ্যেই মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়, তা থেকে ভয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে দুজনেই একসঙ্গে বিয়ে-পূর্ব কাউন্সেলিং করাতে পারেন।
বিয়ের আগে নতুন জীবনের অজানা পথ পাড়ি দেওয়ার চিন্তা থেকেই মূলত এই ভয়ের সূত্রপাত। এ ছাড়া আরও নানা কারণ থাকতে পারে। নিজের অভ্যস্ত জীবন থেকে ভিন্ন জীবনে পা বাড়াতে হবে, ভেবেও অনেকে শঙ্কিত হন। তবে ভয় না পেয়ে এটা ভাবাই শ্রেয় যে জীবন স্থবির নয়, পরিবর্তনশীল। আর পরিবর্তন মানেই নেতিবাচক কিছু নয়। ভবিষ্যতে ইতিবাচক কিছু আসবে, এই মানসিক দৃঢ়তা তৈরি করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া