সম্পর্ক

ভালোবাসার ওপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেল, বলছেন ভক্তরা

দুটি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। এক, শোয়েব মালিক ও সানিয়া মির্জার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। দুই, শোয়েব কোনো এক পাকিস্তানি অভিনেত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়েছেন। দুটি গুঞ্জনই সত্য প্রমাণ করে ৪১ বছর বয়সী শোয়েব মালিক ৩০ বছর বয়সী অভিনেত্রী সানা জাভেদের সঙ্গে বিয়ের ছবি প্রকাশ করেছেন। বিপিএল খেলতে পাকিস্তানি এই ক্রিকেটার এখন বাংলাদেশে। পাকিস্তানি একাধিক গণমাধ্যমের মতে এই জানুয়ারিতেই করাচিতে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে, ঘনিষ্ট আত্মীয়দের উপস্থিতিতে সারেন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। কঠিন বাস্তবতার মুখে শেষ হয়ে গেল শোয়েব–সানিয়ার রূপকথার প্রেমের গল্প। ছবি দেখতে দেখতে তাঁদের ১৩ বছরের দাম্পত্যজীবনের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলোতে আলো ফেলা যাক।

জীবনযাপন ডেস্ক
পাকিস্তান-ভারতের বৈরিতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভালোবাসার জয় হয়েছিল এখন থেকে ১৩ বছর আগে, ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
বড় ঝুঁকিটা সানিয়াই নিয়েছিলেন। তাঁকে ডাকা হচ্ছিল ‘দেশদ্রোহী’। শোয়েবকেও তোলা হয়েছিল কাঠগড়ায়। ভারতের হায়দরাবাদ থেকে আয়েশা সিদ্দিকী নামের এক নারী দাবি করেন, ২০০২ সাল থেকেই তিনি শোয়েব মালিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। প্রমাণ হিসেবে তিনি শোয়েবের সঙ্গে বিয়ের ভিডিও দেখিয়েছিলেন। সানিয়াকে বিয়ে করার জন্য ২০১০ সালের এপ্রিলে আয়েশাকে তালাক দেন শোয়েব। ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া অন্যান্য সূত্র থেকে জানিয়েছে, এই বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর করতে মধ্যস্থতা করেছিলেন অন্তত ১০ জন ব্যক্তি। আর এই বিচ্ছেদ থেকে ভরণপোষণ বাবদ ১৫ কোটি রুপি পেয়েছিলেন আয়েশা সিদ্দিকী
সেই সময় সানিয়াই শক্ত করে ধরেছিলেন শোয়েবের হাত। বলেছিলেন, যা–ই হোক, তাতে তাঁর কিছু আসে–যায় না
শোয়েব সানিয়ার বিয়ের ছবি ওখনো ভক্তদের চোখে ভাসে
এই বিয়েতে সানিয়া মির্জার পরিবারও নাকি রাজি ছিল না। ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন অনেকেই! সানিয়া তখন বলেছিলেন, ‘প্রেমে পড়ার সময় দেশকে বিবেচনা করার মতো ক্ষুদ্র, সংকীর্ণ মনের মানুষ আমি নই। আপনাদেরও হওয়া উচিৎ নয়।’ মাত্র এক বছরের পরিচয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই দুজন
২০০৯ সালে না ভারত, না পাকিস্তান—তৃতীয় এক দেশে দুজনের দেখা। দুজনই তখন ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ায়। শোয়েব গিয়েছিলেন জাতীয় দলের হয়ে সিরিজ খেলতে, সানিয়াও গিয়েছিলেন এক টুর্নামেন্টের জন্য। সানিয়ার সঙ্গে সোহরাব মির্জার বাগদান ভেস্তে গেছে তখন, ভাঙা হৃদয়ের প্রভাব পারফরম্যান্সের ওপরেও পড়েছিল। ওদিকে সানিয়ার মতো শোয়েবও ভাঙা হৃদয় নিয়ে ঘুরছিলেন। দুজনে মিলে ভারতীয় এক রেস্তোরায় খেতে গেলেন। সেটিই ছিল প্রথম ‘অফিশিয়াল ডেট’
খেলার ভুবনের দুই হাই প্রোফাইল তারকার ঘর বাঁধার ঘটনা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বৈরিতার আঁচ কিছুটা হলেও কমিয়েছিল। অনেকেই এই প্রেমকে দেখেছিলেন রূপকথার গল্পের মতো করে। শোয়েব আর সানিয়ার এই বিয়ে দুই দেশের, দুই সংস্কৃতির বহু বিয়েকে অনুপ্রাণিত করেছিল। দুই দেশে এই দম্পতির কোটি ভক্ত
বিয়ের আট বছর পর জন্ম নেয় শোয়েব ও সানিয়ার একমাত্র সন্তান ইজান মির্জা মালিক
ভাইরাল হয়েছিল এই জুটির প্রেগনেন্সি ফটোশুট
এক দশক ভালোভাবেই সংসার করেছেন দুজন। গত তিন বছর ধরে চলছিল বিচ্ছেদের গুঞ্জন
দেড় বছর ধরে আলাদা থাকছিলেন দুজন। তবে আলাদা থাকলেও সন্তানকে দুজনে মিলেই বড় করছেন
এসব ‘পারফেক্ট কাপল পিকচার’ এখন কেবলই স্মৃতি
সন্তানকে বড় করছেন দুজনে মিলেই
শোয়েবের ইনস্টাগ্রাম ‘বায়ো’র বর্ণনায় ছিল ‘একজন সুপারউইমেন সানিয়া মির্জার স্বামী।’
২০২৩ সালের আগস্টে এই পরিচয় মুছে ফেলেন শোয়েব। বদলে লেখেন ‘লিভ আনব্রোকেন’। বায়োতে সন্তানের বাবা এবং অ্যাথলেট পরিচয় আগেও ছিল, এখনো আছে। অর্থাৎ সানিয়ার স্বামী পরিচয়টাই শুধু আড়াল করেছেন শোয়েব
আইকনিক এই জুটির হাসিমাখা প্রেমময় এমনসব ছবি এখন ভক্তদের বুকে কাঁটা হয়ে বিঁধছে
২০২২ ও ২০২৩—এই দুই বছরে শোয়েব–সানিয়াকে একসঙ্গে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। কেবল ‘দ্য মির্জা মালিক শো’য়ে একসঙ্গে দেখা দিয়েছিলেন
২০২৩ সালের এপ্রিলে বিচ্ছেদের খবরকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন শোয়েব। তবে এটাও বলেন, সংসার জীবনে উত্থান–পতন থাকবেই
বুধবার সানিয়া নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে একটি পোস্টে লেখেন, ‘বিয়ে যেমন কঠিন, তেমনি বিচ্ছেদও কঠিন।’
শোয়েব মালিক আর সানিয়া মির্জার এই বিচ্ছেদ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ভক্তরা। এর ভেতর শোয়েবের নতুন বিয়ে তাঁদের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোয়েব আর সানার বিয়ে নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক
শোয়েবের পোস্টের নিচে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘চার্লস যেমন ডায়ানাকে ছেড়ে ক্যামিলাকে বিয়ে করেছিলেন, তেমনই এক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটল।’
শোয়েবের পোস্টের নিচে যতটা না ‘অভিনন্দন’বার্তা যুক্ত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি লেখা হচ্ছে ‘শকিং’। বেশির ভাগই বিষয়টাকে দেখছেন নেতিবাচকভাবে। অনেকেই লিখেছেন, ‘সানিয়া মির্জা যার বউ, সে কীভাবে আরেকটা প্রেমে পড়ে! অসম্ভব বলে আর কিছুই থাকল না!’, ‘পৃথিবীতে হচ্ছেটা কী! ভালোবাসার ওপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেল...’
বাংলাদেশি ফ্যাশন ডিজাইনার তাসমিত আফিয়াত লিখেছেন, ‘এবার নিজের সমমানের একজনকে পেলেন। সানিয়া মির্জা আপনার ধরাছোঁয়ার অনেক বাইরে। আপনি সানিয়ার যোগ্য কোনো দিনই ছিলেন না।’
আরও পড়ুন