২০১৯ সালে একটি সিরিজের শুটিংয়ে তাঁদের প্রথম দেখা হয়। আগে থেকে অর্ষাকে চিনলেও ইমরান সেদিনই প্রথম সামনে থেকে দেখেন। প্রথম দিনগুলোতে তাঁদের শুধু কাজ নিয়েই কথা হয়েছে। বিরতি দিয়ে আবার তাঁদের আরেকটি কাজে দেখা হয় একসঙ্গে। এর পর থেকেই বন্ধুত্ব জমে যায়। চলতে থাকে কথা। কিন্তু বিয়ের প্রশ্ন তখনো ছিল অনেক দূরে।
আপনাদের মধ্যে কোন বিষয়ে সবচেয়ে বেশি মিল, জানতে চাই নাজিয়া হক অর্ষার কাছে। অভিনেত্রীর উত্তর, ‘আমরা দুজনের মধ্যে মিল–অমিল খুঁজিনি। কাজ প্রসঙ্গেই আমাদের আলোচনা হতো। এর মধ্যে করোনা চলে আসে। শুরু হয় লকডাউন। তখন ইন্ডাস্ট্রি, শিল্পীদের অবস্থা কেমন হতে পারে, এই নিয়ে আমাদের কথা হতো। সেই কথা বলাটা ভালো লাগতে থাকে।’
দুই অভিনয়শিল্পীকে করোনা আরও কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দেয়। পরে শুটিং শুরু হলে তাঁদের আবার দেখা হয়। তত দিনে দুজনের সম্পর্কটা বেশ গভীর হয়েছে। দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি হতে থাকে। তত দিনে একসঙ্গে চরকি ফ্লিক ‘জাহান’ ও পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘সাহস’–এ অভিনয় করেছেন।
সেই সময় নিজেদের মধ্যে মিল–অমিল না খুঁজলেও বুঝতে পারেন, তাঁদের মধ্যে বেশ কিছু মিল আছে। প্রথমত, তাঁরা দুজনই চুপচাপ স্বভাবের। তাঁদের চিন্তাচেতনার জায়গা এক। তাঁরা কমন বন্ধুবান্ধবের বাইরে তেমন একটা যান না। নিজেদের মতো থাকতে পছন্দ করেন। এই মিলগুলো তাঁদের আরও কাছে নিয়ে আসে। তাঁদের ভালোবাসার গল্পের পাতা বাড়তে থাকে। কিন্তু তখনো প্রেম বা বিয়ের কথা আসেনি।
তাহলে বিয়ের কথা কীভাবে এল? সেই কথা শুনব অর্ষার মুখে, ‘মায়ের অসুস্থতার কারণে বেশ কয়েকবার ইমরান আমাদের বাড়ি এসেছিল। একসময় দেখি মায়ের সঙ্গে ওর যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। ছেলে হিসেবে মায়ের ওকে ভালো লাগে। এর মধ্যেই মা বুঝতে পেরেছিলেন ইমরান আমাকে পছন্দ করে। আমি তখনো মাকে কিছু বলিনি। একসময় দেখলাম মায়ের সঙ্গে ওর বন্ডিংটা অনেক ভালো। সে-ই প্রথম বিয়ের প্রস্তাবটা করে। এতে মা খুশি হয়েছিলেন।’
বিয়ে নিয়ে সরাসরি হবু শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলায় অর্ষা কিছুটা অবাক হয়েছিলেন। কারণ, তখনো তিনি বিষয়গুলো ভাবনার পর্যায়ে রেখেছিলেন। বিয়ের জন্য সময় নিতে চাইছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল বিয়ে অনেক বড় দায়িত্বের ব্যাপার। অর্ষা বলেন, ‘এর মধ্যে হঠাৎ করেই আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। অনেক ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল। পুরো সময় ইমরান আমাদের পাশে ছিল। পরে যখন মা ফিরে এলেন, তখন মনে হলো আর খুব বেশি সময় নেওয়া ঠিক হবে না। দুই পরিবারে আলোচনা হলো। দুই পরিবারের সবকিছু ঠিকমতো হয় কি না, এটা নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল। দুই পরিবারের বোঝাপড়াটাও ভালো ছিল।’
অর্ষার পরিবার ঢাকা থাকলেও ইমরানের পরিবার থাকে বাগেরহাট। সেখানে থেকে তাঁরা আসেন কনে দেখতে। সেদিন দুই পরিবার প্রথম একসঙ্গে বসে। অর্ষার মা ও হবু শাশুড়ি চেয়েছিলেন আংটি পরিয়ে রাখা হোক। পরে দুই পরিবারের সিদ্ধান্তে আকদের সিদ্ধান্ত হয়। অর্ষা বলেন, ‘একদমই হুট করে আমাদের বিয়েটা হলো। পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়েছে। গত বছর আমরা বিয়ে করলেও, বিয়ের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে জানিয়েছি কিছুদিন আগে।’
বিয়ের পর রীতিমতো সংসারও করে দিয়েছেন ইমরান ও অর্ষা। এই অভিনেত্রী জানান, দুজনই ঢাকায় থাকেন। সুযোগ পেলেই শ্বশুরবাড়ি চলে যান। এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমরা যেমন যাওয়া–আসার মধ্যে থাকি, তেমনি শ্বশুরবাড়ির লোকজনও যাওয়া–আসার মধ্যে থাকেন। সবকিছু মিলিয়ে দুজনের সংসার ভালোই চলছে। আসলে আমরা একে অন্যকে বুঝি। দুজনের পেশা অভিনয়। সেই জায়গা থেকে আমাদের গল্প চরিত্র নিয়ে অনেক কথা হয়। এই বোঝাপড়াগুলো দিন দিন বাড়ছে। আমরা সংসারী হয়ে উঠছি।’