সুন্দরভাবে সম্পর্ক শেষ করার সাত ধাপ

কোনো বিচ্ছেদই কাম্য নয়। তারপরও অনেক সময় জীবনে বিচ্ছেদের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বেশির ভাগ সম্পর্কের সমাপ্তিটা হয় খুব বাজে আচরণ আর কাদা-ছোড়াছুড়ির ভেতর দিয়ে। মনে রাখা দরকার, সব সম্পর্ক জীবনের শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে না। সবচেয়ে ভালো হয় সম্পর্ক খুব জঘন্য অবস্থানে যাওয়ার আগেই তার সুরাহা করা। ধরুন, আপনি আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। ভাববেন না কাজটা খুব সহজ। ভালো আচরণের মাধ্যমে সম্পর্ক শেষ হলে আপনার প্রিয়জনের ভালোবাসার স্মৃতিটুকুই বড় হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে বাকি জীবন পথ চলার শক্তি। বাজে আচরণের ট্রমায় মিলিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় না। তাই চেষ্টা করতে হবে একসময়ের সুন্দর সম্পর্কটি যেন একটি বিশ্রী সংঘাতের মধ্য দিয়ে শেষ না হয়। আমরা এখানে বলব, কীভাবে আপনি বিচ্ছেদের সময় খারাপ দৃশ্য তৈরি হওয়া এড়িয়ে চলতে পারেন। সাইকোলজি টুডে ও গার্ডিয়ান অবলম্বনে জেনে নেওয়া যাক সুন্দরভাবে সম্পর্ক শেষ করার কয়েকটি টিপস।

১. আকস্মিক বা খামখেয়ালিভাবে সম্পর্ক ভাঙবেন না

সম্পর্ক ভাঙার কাজটি অফিসে যাওয়া বা বাজার করার মতো গতানুগতিক কাজ নয় যে হুট করে একটা সিদ্ধান্ত নেবেন। আপনার সঙ্গী আর আপনাদের সম্পর্ককে সম্মান করুন। পরিকল্পনা করুন কীভাবে আরও সামনে এগোনো যায়। সময় নিন। ধীরেসুস্থে কাজটি করুন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দুজনে আলাদা থাকুন। ভাবুন। পরিস্থিতি আরও সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করুন। আপনি ভরসা করতে পারেন, এমন অভিভাবক বা অন্য কারও সঙ্গে কথা বলুন।

২. বার্তা পাঠান ই-মেইল বা চিঠিতে

কারও জন্য এটি হতে পারে মুক্তি, আবার কারও জন্য সর্বনাশ। সম্পর্ক ভাঙার অবস্থায় বেশির ভাগ মানুষ নিজের মনের প্রকৃত অবস্থার কথা বলার মতো মানসিক অবস্থায় থাকেন না। তাঁদের জন্য মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, চিঠি, এসএমএস বা ই-মেইলই শ্রেয়। সময় নিয়ে সুন্দরভাবে তখন মনের ভাব প্রকাশ করা সহজ হয়। এভাবে একদিকে তিনি যেমন অনুভূতির বিশদ বর্ণনা দিতে পারবেন, অন্যদিকে বাগ্‌বিতণ্ডা বা সংঘাত এড়িয়ে চলা যাবে। দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেকের ক্ষেত্রে লিখিত রূপ খুব ভালো কাজ করেছে।

কোনো বিচ্ছেদই কাম্য নয়। তারপরও অনেক সময় জীবনে বিচ্ছেদ জরুরি হয়ে পড়ে

৩. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সাবধান

ফেসবুক, টুইটার বা সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন সাইটে আপনি যখন স্ট্যাটাস, ছবি বা কোনো ধরনের কমেন্ট পোস্ট করেন, বিচ্ছেদের আগে সেটা যেমন সবাই দেখতেন, বিচ্ছেদের খবরও সবাই দেখবেন। তাই যৌথ জীবনের ব্যক্তিগত ছবি যত কম পোস্ট করবেন, মানুষকে আপনার সম্পর্ক নিয়ে কথা বলার অধিকার ততটাই কম দেওয়া হবে। অনেক হাসিমুখের, আনন্দময় মুহূর্তের ছবি পোস্ট করার পর যখন আপনি বিচ্ছেদের ঘোষণা দেবেন, তখন পুরোনো ছবি নিয়ে ট্রল হতেই পারে। লোকে যেসব কথা বলবেন, তাতে বিচ্ছেদের মানসিক অবস্থায় আপনার সংকট বহুগুণে বেড়ে যাবে। তাই বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এড়িয়ে চলুন।

৪. ধীরে কিন্তু দৃঢ়ভাবে এগোতে হবে

সম্পর্ক ভাঙার সবচেয়ে ভালো পথ হলো ধীরে এবং দৃঢ়ভাবে এগোনো। এর অর্থ হলো সঙ্গীকে বোঝানো যে আমাদের সম্পর্কটি আর আগের মতো কাজ করছে না। তবে এ ধারণার প্রতি অভ্যস্ত হওয়ার জন্য আপনার সঙ্গীকেও কিছু সময় দিতে হবে। তাহলে সম্পর্কচ্ছেদটি কারও জন্যই বড় ধরনের বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে না।

৫. সব অপরাধের দায় সঙ্গীর কাঁধে চাপাবেন না

যখন আপনি পুরোপুরিভাবে সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন একতরফাভাবে সঙ্গীর ওপর দোষ চাপাবেন না। চিন্তায়, কথায় বাস্তববাদী হোন। তাঁকে বলুন, এ সম্পর্কচ্ছেদ আমাদের দুজনের জন্যই ভালো হবে। এই পরিণতির জন্য আপনারা দুজনেই দায়ী। কেউ বেশি আর কেউ কম।

৬. যথাসম্ভব গোপনে বিচ্ছেদ করুন

বিচ্ছেদ যেন আপনাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট না করে, সেটি নিশ্চিত করুন। বিচ্ছেদ যেন জনসমক্ষে না হয়। কারণ, আপনি নিশ্চয় চাইবেন না আপনাদের বাগ্‌বিতণ্ডা, বিশ্রী ঝগড়া অন্যরা উপভোগ করুক বা তাঁরা এতে যুক্ত হয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলুক।

৭. মিথ্যা প্রতিজ্ঞা করবেন না

যদি আপনার সঙ্গী খুব আবেগপ্রবণও হয়ে থাকেন, তবু তাঁর সঙ্গে কোনো মিথ্যা প্রতিজ্ঞা করবেন না।

মনে রাখবেন, বিচ্ছেদ জীবনের নয়া অধ্যায়। সময়টি সহজ নয়। তাই যতটা সম্ভব জটিলতা আর নেতিবাচকতা কমিয়ে সহজভাবে শুরু করুন নতুন জীবনের যাত্রা। আরেকটু ভালো থাকার জন্য, ভালো জীবনের আশায় মানুষ বিচ্ছেদকে বেছে নেয়। সাবেক সঙ্গীকে ক্ষমা করে সেটি যথাসম্ভব ইতিবাচকতায় ভরে তুলুন।