কর্মক্ষেত্রে নানা ধরনের মানুষের সঙ্গেই মানিয়ে চলতে হয় প্রত্যেককে। সহকর্মীদের মধ্যে মতের অমিল থাকতেই পারে, কিন্তু তা থেকে যদি বিভেদের সৃষ্টি হয় কিংবা নষ্ট হয় কাজের পরিবেশ, তবেই মুশকিল। বিষাক্ত পরিবেশে নিজের কর্মদক্ষতাও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। আর এমন পরিবেশের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যক্তিজীবনেও। সহকর্মীর খারাপ আচরণের কারণে আপনি আত্মবিশ্বাস হারাতে পারেন, দুশ্চিন্তা কিংবা বিষণ্নতায় ভুগতে পারেন, খিটখিটেও হয়ে যেতে পারেন। পরিবারের ওপর মেজাজ দেখানোর মতো ভুল আচরণও করে বসেন অনেকে। এমন পরিস্থিতি সামলাতে কী করবেন?
প্রথম কথা হলো, আপনাকে মানসিক দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে চাকরি বদলের মতো বড়সড় সিদ্ধান্তও নিতে হতে পারে। তবে হুটহাট চাকরি ছেড়ে আরেকটা চাকরিতে ঢোকা যেমন সহজ নয়, তেমনি নতুন জায়গাতেও কেউ আপনার সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না, সেই নিশ্চয়তাও কেউ আপনাকে দেবে না। তাই চলমান পরিস্থিতি সামলে নিতে উদ্যোগী হোন।
এটা ঠিক যে নিজের খারাপ লাগার কথা কারও কাছে বলতে পারলে অনেকটা হালকা লাগে। কিন্তু আপনি যদি একজন সহকর্মীর কাছে অন্য সহকর্মীর খারাপ দিকের কথা বলেন, তাহলে কিন্তু পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে পড়তে পারে। আবার বাড়ি ফিরে যদি আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ক্রমাগত এ বিষয়ে কথা বলতে থাকেন, তাহলে তাঁরা আপনার জন্য দুশ্চিন্তা করবেন। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, খারাপ ঘটনা বা খারাপ কথোপকথনের পর আপনি যতক্ষণ সেটা নিয়ে অভিযোগ করছেন, ততক্ষণ কিন্তু আপনি ওই ঘটনার ভেতরেই থাকছেন। তা থেকে বের হতে পারছেন না। আপনার সময় এবং শক্তি আপনি ওই খারাপ ঘটনার পেছনেই ব্যয় করছেন। তাই কারও কাছে অভিযোগ না করে নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলুন অন্য কাজে।
ভাবতে ভালো লাগে—আপনার সহকর্মী আপনার সঙ্গে ঠিক তেমন আচরণই করবেন, যেমনটা আপনি চান। কিন্তু বাস্তবতা এ ভাবনার সঙ্গে মিলবে না অনেক সময়ই। আপনি অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। তাই অহেতুক তর্ক বা কথা–কাটাকাটিতে যাবেন না। বরং সহকর্মীর নেতিবাচক আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে আপনি নিজেকে কীভাবে ইতিবাচক রাখবেন, সেটা ভাবতে পারেন।
অন্যের খারাপ আচরণে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেন না? এর অর্থ হলো, আপনি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। অন্যের কথায় কেন আপনি প্রভাবিত হবেন? কেউ যদি আপনার সঙ্গে নেতিবাচক আচরণ করেন আর আপনি যদি সে বিষয় নিয়েই বিরক্ত হন, তাহলে তো ওই ব্যক্তিই জিতে গেলেন! অন্যের খারাপ আচরণে আপনি কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, জীবনযুদ্ধে আপনার জয় নিশ্চিত করতে হলে আপনাকে এ সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
কারও সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা না করলে কখনোই অন্য কাউকে দিয়ে পরোক্ষভাবে কাজের কথা সারতে চেষ্টা করবেন না। কথা বলুন সরাসরি। তবে বেঁধে দিন সীমা। কাজের কথার বাইরে কথা এগোতে দেবেন না। কেউ গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে চাইলে তাঁকে স্পষ্টভাবে বলুন, আপনি এ বিষয়ে কথা বলতে চান না। কেউ উসকানিমূলক খুদে বার্তা পাঠালে কিংবা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিলেও শান্ত রাখুন নিজেকে।
জীবনধারা রাখুন স্বাস্থ্যকর। খাবার, ঘুম, শরীরচর্চা হোক ঠিকঠাক। শখের কাজে সময় দিন। ধ্যান করতে পারেন। কাছের মানুষের সঙ্গে সময় কাটান। সবকিছুর পরও মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে মনোরোগবিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। আর আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে রাখুন মানবসম্পদ বিভাগকে। সম্ভব হলে অভ্যন্তরীণ বিভাগ পরিবর্তনও করতে পারেন।
সূত্র: ফোর্বস