প্রেমিকের বয়স ২৭ আর প্রেমিকার ৪০, পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নিচ্ছে না

পাঠকের কাছ থেকে মনোজগৎ, ব্যক্তিজীবন ও সন্তান পালনের মতো সমস্যা নিয়ে ‘পাঠকের প্রশ্ন’ বিভাগে নানা রকমের প্রশ্ন এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম নির্বাচিত একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।

মেহতাব খানম

প্রশ্ন: আমি পুরুষ। বয়স ২৭ বছর। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। ছয় মাস ধরে একটি মেয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। আমরা আগে একই অফিসে চার বছর কর্মরত ছিলাম। তখন আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক হয়নি। মেয়েটি বিবাহিত এবং তার বয়স ৪০ বছর। স্বামীর শারীরিক সমস্যার কারণে স্বামীর কাছে থাকে না। তাঁদের বিয়ের বয়স সাত বছর, তবে কোনো সন্তান নেই। মেয়েটি আমাকে খুব ভালোবাসে, আমাকে বিয়ে করতে চায়। আমিও তাকে ভালোবাসি। আমার পরিবারকে অনেকবার জানিয়েছি। কিন্তু বয়স বেশি হওয়ার কারণে পরিবার রাজি নয়। মেয়েটি জানিয়েছে, আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। এ অবস্থায় আমি কাজে মন দিতে পারছি না। কারও সঙ্গে মিশতে ভালো লাগে না। মন খারাপ থাকে। সারাক্ষণ এগুলো মাথায় ঘোরে। এই সমস্যা থেকে সমাধানের উপায় কী?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: পরস্পরবিরোধী দুটি বিষয় আপনার মনে দোদুল্যমান অবস্থা তৈরি করেছে। এক দিকে মেয়েটিকে বিয়ের ব্যাপারে পরিবারের নিষেধাজ্ঞা, অপর দিকে আপনাকে ছাড়া মেয়েটির থাকতে না পারা। এই দুঃসহ পরিস্থিতি আপনাকে তীব্র মানসিক চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আপনি লিখেছেন, মেয়েটিকে ভালোবাসেন, তবে এই মুহূর্তে তাঁকে বিয়ে করতে চান কি না বা পারবেন কি না, তা উল্লেখ করেননি। মেয়েটি যে আপনার চেয়ে বয়সে বড় এবং বিবাহিত—এই বাস্তবতা পরিবার বিবেচনা করছে। এগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা করা বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামোয় স্বাভাবিক। এ ধরনের বিষয় নিয়ে আমাদের চারপাশের লোকজন অনেক বেশি আলোচনা করেন।

আপনার প্রেমিকার বয়স ৪০ হয়ে গেছে এবং স্বামীর শারীরিক ত্রুটির কারণে তিনি এখনো নিঃসন্তান। আমরা নিশ্চিতভাবে ধরে নিতে পারি যে তাঁর ‘মা’ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ রয়ে গেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে চল্লিশোর্ধ মেয়েরাও এখন সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম, তবে চিকিৎসকেরা প্রথম সন্তানটি ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে জন্মদানের ব্যাপারে উৎসাহিত করে থাকেন। কারণ, মায়ের বেশি বয়সে সন্তানের জন্ম হলে কিছু ঝুঁকি থেকে যায়। আপনার পরিবার যেহেতু আপনাকে ভালোবাসে, এ বিষয়ও হয়তো তাদের ভাবাচ্ছে। এ ছাড়া সাত বছরের বিবাহিত জীবনে মেয়েটিকে নিশ্চয়ই অনেক ধরনের মানসিক টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। সেসবের কারণে মেয়েটির মধ্যে ক্ষত সৃষ্টি হওয়ার কথা। যদি তিনি এর মধ্যে কোনো মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করে না থাকেন, তাহলে সেগুলোর বহিঃপ্রকাশ আপনাদের পরবর্তী জীবনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, বলা খুব মুশকিল।

আমাদের মস্তিষ্কের দুটি আলাদা কেন্দ্র থেকে যুক্তি ও আবেগের অনুভূতি আসে। মনে হচ্ছে, আপনার আবেগের কেন্দ্রটি কখনো কখনো এতটা শক্তিশালী হয়ে যায় যে যুক্তিপূর্ণ ভাবনাগুলো তখন দুর্বল হয়ে পড়ে। আর সে কারণে আপনি এখন যুক্তির মন ব্যবহার করে আবেগ মোকাবিলা করে সুদৃঢ় একটি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে কোনো একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। হয়তো পরিবারের মতামত অনুযায়ী জীবনে চলার অঙ্গীকার করছেন, কিন্তু পরক্ষণেই সেই সিদ্ধান্তের জায়গা নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে, কতটা কষ্টে আছেন আপনি। যদি সম্ভব হয়, ভালো কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করার কথা ভাবতে পারেন। আপনারা দুজনই সেবা গ্রহণ করতে পারেন। এতে আবেগের বশে সিদ্ধান্ত না নিয়ে ফেলার ঝুঁকি থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখা সম্ভব হতে পারে।

তাড়াহুড়া না করে সময় নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করুন।

পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর

পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ডাক ঠিকানা প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA