পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।
প্রশ্ন: কলেজে পড়ার সময়ে একটা ছেলের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক হয়। তিন বছর পর সেই সম্পর্ক থেকে আমি বের হয়ে আসি। কারণ, ছেলেটি আমাকে প্রতিনিয়ত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করত। আমি কার সঙ্গে কথা বলছি, কোথায় যাচ্ছি, কেন ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে মিশলাম, কেন জোরে হাসলাম, কেন সহপাঠীদের সঙ্গে আড্ডা দিলাম—সব সময় এসব নিয়ে ঝগড়া করত। তাই এই প্রেম থেকে আমি সরে আসি। কিন্তু সরে আসার পর থেকে ছেলেটি আমার নামে নানা রকম বাজে কথা বলে বেড়াচ্ছে। আমার পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে বাজে কথা বলছে। আমার সঙ্গে তার কোনো অন্তরঙ্গ সম্পর্ক হয়নি। কিন্তু সে বলে বেড়াচ্ছে, আমরা একসঙ্গে রাত কাটিয়েছি। অথচ প্রেমে থাকার সময়ে কয়েকটা সাধারণ ছবি ছাড়া তার কাছে আমাদের আর কিছু নেই। ইনবক্সেও কখনো আমাদের মধ্যে স্পর্শকাতর কোনো টেক্সট আদান–প্রদান হয়নি। তারপরও প্রতিনিয়ত সে এসব বলে বেড়াচ্ছে। আমি কি ছেলেটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারি? সম্ভব হলে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী
উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। ছেলেটি আপনার সম্পর্কে পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে কুৎসা রটাচ্ছেন, লোকজনের কাছে বাজে কথা বলছেন এবং এতে আপনার মনে হচ্ছে, আপনার মানহানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপনি আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। আইনে মানহানির সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করা আছে। কোন বিষয়গুলো মানহানি আর কোনগুলো মানহানি নয়, তা স্পষ্ট করে বলা আছে।
১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারামতে, কোনো ব্যক্তি যদি অন্য কোনো ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে কথিত বা পঠিত হওয়ার জন্য কথা বা চিহ্ন বা দৃশ্যমান কল্পমূর্তির সাহায্যে সেই ব্যক্তি সম্পর্কে কোনো নিন্দা প্রণয়ন বা প্রকাশ করেন, তবে সেটি মানহানি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট হবে জেনে বা সুনাম নষ্ট হতে পারে বলে বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ নিন্দা প্রণয়ন ও প্রকাশ করেন, তাহলে সেটিও মানহানি বলে গণ্য হবে। যেহেতু তিনি আপনার মানসম্মান হানির জন্য আপনার সম্পর্কে মিথ্যা কথা রটাচ্ছেন, কাজেই তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির মানহানি করে, তবে ওই ব্যক্তি দুই বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’
মানহানির ক্ষেত্রে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা উভয়ই করা যায়। ফৌজদারি আদালতে মানহানির মামলা করার ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের করতে হয়। সে অভিযোগ শুনে আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমন জারি করতে পারেন। তবে মানহানির মামলায় সরাসরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় না। সমন দেওয়ার পর যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতে হাজির না হন, সে ক্ষেত্রে বিচারক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।
Photo by Takeshi Charly, Pexels