বিয়ের মতো বিরাট আয়োজনে দুই পক্ষের পরিবারের অনেক মানুষ সরাসরি যুক্ত থাকেন। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, এমনকি পাড়াপ্রতিবেশী পর্যন্ত। ব্যক্তিভেদে মতের তফাত থাকে, থাকে নানা রকম চাওয়া। সব বিষয়ে সবার মতামত কিংবা চাওয়ার প্রতি সমান গুরুত্ব দেওয়াটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তাই আনন্দের এই উৎসবেও মন–কষাকষি হতে পারে। নিজের পক্ষের কিংবা হবু শ্বশুরবাড়ির পক্ষের কারও সঙ্গে কোনো বিষয়ে মতের অমিল হলে সবচেয়ে বেশি মুশকিলে কিন্তু পড়েন বর আর কনেই। শেষ পর্যন্ত বিয়েটা তো তাঁদেরই সারা জীবনের বন্ধন। সুন্দরভাবে এই ঝঞ্ঝাট সামলানোও একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে তাঁদের জন্য।
ধরা যাক, কনের ইচ্ছা, তাঁর মায়ের শাড়ি পরে বিয়ে করবেন। এদিকে তাঁর হবু শাশুড়ি চান, তাঁর পছন্দে কেনা শাড়িটাই থাকবে হবু বৌমার পরনে। আবার এমনও হতে পারে, বরের বাড়ি থেকে দেওয়া শাড়িতে বিয়ে হওয়ার ব্যাপারে দুই পক্ষই রাজি। কিন্তু বিপত্তি বাঁধল শাড়ির রং নিয়ে। এক পক্ষ চায় লাল টুকটুকে বৌ সাজ, অন্য পক্ষ চায় ভিন্নতার পরশ। কোথায় বিয়ের অনুষ্ঠান হবে কিংবা কত লোককে নেমন্তন্ন করা হবে, এসব নিয়েও মতভেদ দেখা দিতে পারে। নিজের বাড়িতেও আপনজনেদের সঙ্গে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হতে পারে একটি বিয়েকে কেন্দ্র করে। এমন হলে কী করতে পারেন হবু বর কিংবা কনে? জানালেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিণ হক।
যাঁর সঙ্গেই মতের অমিল দেখা দিক না কেন, চেষ্টা করুন তাঁর সঙ্গে সমঝোতায় আসতে। আপনি হয়তো নিজের বিয়ে নিয়ে একভাবে পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু আপনার কিংবা আপনার হবু জীবনসঙ্গীর আপনজনেদেরও এই বিয়ে নিয়ে আলাদা ভাবনা থাকতে পারে। তাঁদের ভাবনাকেও সম্মান করুন। সব বিষয়ে যে নিজের ইচ্ছেপূরণ করতেই হবে, তা তো নয়। বিয়ে একটি সামাজিক আয়োজন। তাই সামর্থ্য থাকলে এবং সুযোগ পেলে অন্যদের কিছু ইচ্ছাও পূরণ করে দিন। নিজের শুভাকাঙ্ক্ষীদের খুশির জন্য বিয়েতে কিছু করতে পারাটাও তো দারুণ ব্যাপার। আপনি যে পরিবারের অংশ হতে যাচ্ছেন, তাদের জন্যও একইভাবে ভাবুন। নিজের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে তাদের জন্য খানিকটা আত্মত্যাগ করতে পারলে নতুন জীবনের শুরুটা মসৃণ হবে। তারাও আপনাকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারবে। দুই পরিবারের আর্থিক সঙ্গতির কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। আবার সঙ্গতি থাকলেও অপচয় করা উচিত নয়। তাই প্রাপ্তবয়স্ক ও বিবেকবান মানুষ হিসেবেই বিয়ের আয়োজনের পরিকল্পনা করুন।
তবে সব বিষয়েই যে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতাও নেই। নিজের শখ-আহ্লাদও তো পূরণ করতে হবে নিজের বিয়েতে। তাই যে বিষয়ে আপনি অন্যদের মতামত গ্রহণ করতে চাচ্ছেন না, তা নিয়ে তাঁদের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করুন। বিয়ের বিশেষ কোনো বিষয় নিয়ে আপনার মধ্যে যে আবেগ কাজ করছে, তা তাঁদের বুঝিয়ে বলুন। ধরুন, বিয়েতে নিজের পছন্দের পোশাকটাই পরতে চাচ্ছেন আপনি, কিন্তু আপনার জন্য শ্বশুরবাড়ির তরফ থেকে পছন্দ করা হয়েছে অন্য পোশাক। তাহলে কিন্তু বৌভাতে তাদের পছন্দকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত আপনার। তাদের রুচি বা পছন্দকে একেবারে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন, ব্যাপারটা যেন এ রকম মনে না হয়। তাঁদের সঙ্গে সরাসরি সব বিষয় আলাপ করতে না পারলে হবু জীবনসঙ্গীর সাহায্য নিন। তাঁকে বুঝিয়ে বলুন। তিনি আপনার ভাবনাটা তাঁর পরিবারকে বুঝিয়ে বলবেন। এখান থেকেই কিন্তু দুজন দুজনের ভরসা হয়ে উঠতে পারেন।
বিয়েতে কী কী আনুষ্ঠানিকতা হলো, তার মধ্যে কিন্তু সত্যিকার সুখ খুঁজে পাওয়া যায় না। জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন, হইচই, চমৎকার সিনেমাটোগ্রাফি যদি না-ও হয়, তবু আপনি সুখী হতে পারবেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্কের জায়গায় আপনি যদি প্রশান্তি না পান, তাহলে বাদবাকি সব অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে। ভবিষ্যতে কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের লাইক–কমেন্টে কিংবা নিজের ডিজিটাল ডিভাইসের ছবি-ভিডিওতেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে আপনার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আনন্দের স্মৃতিটুকু। তাই দেখনদারির বিষয়ের চেয়ে সম্পর্কগুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বিয়ের কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর থেকে দুই পক্ষের আপনজনেদের প্রতিই মনোযোগী হোন। বিশেষত দুই পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের মতামতকে সম্মান করুন।