পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার
প্রশ্ন: আমার স্ত্রীকে নিয়ে খুব ঝামেলার মধ্যে আছি। আমাদের দুই বছরের একটা মেয়ে আছে। আগে তার বেশ কয়েকটি বিয়ে হয়েছিল, যা আমি বিয়ের পর জানতে পারি। অনেকের কাছ থেকে কাবিনের টাকা নিয়ে ডিভোর্স দিয়েছে। আমার সঙ্গে বিয়ের পরও আগের কয়েকজন স্বামীর সঙ্গে সে যোগাযোগ রাখত। তা ছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোকের সঙ্গে ফোনে-মেসেঞ্জারে কথা বলে, দেখা করে। আমার কাছে ধরা পড়লে বলে, ‘আর করব না, মাফ করে দাও।’ বিভিন্ন অজুহাতে বারবার মা-বাবার বাড়ি যায়। তার মায়ের সহযোগিতায় আগের এক স্বামীর সঙ্গে দেখা করে।
এসব জানার পর আমি নোটারি পাবলিক ও কাজির মাধ্যমে তাকে ডিভোর্স দিই। কিন্তু সে ডিভোর্স মানতে চায় না, বারবার মাফ চায়। এসব দেখে একপর্যায়ে কাজির কাছে গিয়ে ডিভোর্স পেপার তুলে নিই। কিন্তু তারপরও সে ঠিকমতো সংসার করে না, আবার ডিভোর্স দিলে অনেক টাকা দাবি করবে বলে জানায়। এমনকি অফিসে গিয়ে ঝামেলা করবে বলেও হুমকি দেয়।
মানসম্মানের ভয়ে আমি কিছু বলতে পারি না, বারবার তাকে মেনে নিই। আরেকবার তালাকের পর সে আমার বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করে, কিছুদিন আগে যেটা খারিজ হয়ে গেছে। সে আমার হাতে-পায়ে ধরে মাফ চায়। মেয়ের কথা চিন্তা করে শেষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে তালাক প্রত্যাহার করি। তাকে নিয়ে সংসার করতে থাকি। এর মধ্যে এখন জানতে পেরেছি, আমার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গেও সে সম্পর্কে জড়িয়েছে। তার মা আমার বাসায় এলে দেখি, মায়ের সঙ্গে আগের স্বামীর নিয়মিত যোগাযোগ আছে। সম্ভবত আমার স্ত্রী তার মায়ের নম্বর দিয়ে ওই লোকের সঙ্গে কথা বলে। আমি এখন কী করতে পারি? আইনি সমাধান কী?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনার প্রশ্ন পড়ে মনে হচ্ছে, আপনার স্ত্রী আপনার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে আরও কয়েকটি বিয়ে করেছেন, যা আপনি আগে জানতেন না। কাবিননামার একটি কলামে বৈবাহিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্য দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে আপনার স্ত্রী যদি কোনো মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকেন, অর্থাৎ তালাকপ্রাপ্তা হয়েও যদি অবিবাহিতা লিখে থাকেন, তাহলে সেটা প্রতারণা এবং দেশের আইন অনুযায়ী একটি অপরাধ।
আইনানুগভাবে বিবাহবিচ্ছেদ করলে পুরুষ বা নারীর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বা একাধিক বিয়েতে কোনো বাধা নেই। তবে স্ত্রী যদি দ্বিতীয় বা পরবর্তী বিয়ে করার সময় যাঁকে বিয়ে করছেন, তাঁর কাছে আগের বিয়ের কথা গোপন করেন, তাহলে সেটি দণ্ডবিধির ৪৯৫ ধারা অনুসারে একটি অপরাধ। এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা। বিয়েসংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নিকটস্থ থানা বা আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর এজাহার দাখিল করা যায়।
আপনি দুবার তালাকের নোটিশ দিয়ে আবার প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আপনার স্ত্রী এখন পর্যন্ত নিজেকে সংশোধন করেননি। লিখেছেন তিনি নানা মানুষের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছেন। এবং আপনি তালাক দিলে সে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করার ভয় দেখাচ্ছে। আপনাকে নানাভাবে হয়রানি করছে। এ অবস্থায় আপনি যদি তালাকের সিদ্ধান্ত নেন, সে ক্ষেত্রে আগে আপনি নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করবেন। স্ত্রী আপনাকে হুমকি দিচ্ছে—এই মর্মে ডায়েরি করবেন। আপনি যদি শুধু হয়রানির কারণে তালাক প্রত্যাহার করে থাকেন, তাহলে সেটি প্রত্যাহার না করে আইনসংগতভাবে মোকাবিলা করা উচিত ছিল।
তালাকের নোটিশ পাঠানোর পর যদি ৯০ দিন পার হয়ে যায় অর্থাৎ তালাক কার্যকর হওয়ার পর স্বামী বা স্ত্রী যদি অন্যত্র বিয়ে না করেন, তাহলে তাঁরা পুনরায় নতুন করে বিয়ে করে নিতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, একই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তৃতীয়বারের মতো তালাক কার্যকর হলে পুনরায় তাঁদের বিয়ের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে।
এ অবস্থায় আগের বিয়ের তথ্য গোপন করে প্রতারণার জন্য স্ত্রীর বিরুদ্ধে আপনি মামলা করতে পারেন। সেই সঙ্গে তালাক প্রদান করতে পারেন। তবে তিনি হয়রানিমূলক মামলা করতে পারেন, এটি মাথায় রাখবেন এবং আইনগতভাবে সেটিকে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। আপনি আপনার অফিসে আগে থেকে সবকিছু জানিয়ে রাখবেন। প্রয়োজনে জিডির একটি কপি দিয়ে রাখবেন।
আশা করি, আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। আপনার জন্য শুভকামনা।
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ডাক ঠিকানা প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA