পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার
প্রশ্ন: আমি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বয়স ২৪ বছর। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রীর সঙ্গে আমার ছয় বছরের প্রেমের সম্পর্ক। কলেজে পড়ার সময়ই আমাদের প্রেম হয়েছিল। সবকিছু ভালোই চলছিল। আজকাল আমাদের এক বান্ধবীর সঙ্গে মেশাকে কেন্দ্র করে সে আমাকে সন্দেহ করছে। আর এই কারণে এক সপ্তাহ আগে সে নিজের হাত ব্লেড দিয়ে কাটাছেঁড়া করে। একই সঙ্গে আত্মহত্যার হুমকি দিতে থাকে। যে কারণে ওই বান্ধবীর সঙ্গে মেশা আমি বন্ধ করে দিয়েছি। তার কথামতো চলার চেষ্টা করছি। তারপরও সে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে আমাকে আত্মহত্যার ভয় দেখায়, ব্লেডের ছবি দেখায়। বিভিন্নভাবে আত্মহত্যা করবে বলে নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে, যা আমার কাজকর্ম ব্যাহত করছে। এই অবস্থায় আমার কী করা উচিত, আইনি প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ আছে কি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। প্রশ্ন থেকে বুঝতে পারছি যে আপনার প্রেমিকা আত্মহত্যা করার হুমকি দিচ্ছে, সেই সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে আপনাকে ভীতি প্রদর্শন করছে। এ জন্য উনাকে অবশ্যই একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে এ ধরনের আবেগপ্রবণতা দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে কেউ কেউ আবার সত্যি সত্যিই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
এবার আসি আইনি দিকে। দণ্ডবিধি ১৮৬০–এর ৩০৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যা করে, তাহলে যে ব্যক্তি আত্মহত্যায় সাহায্য করবে বা প্ররোচনা দান করবে, সে ব্যক্তিকে ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা হবে।
সাক্ষ্য আইন ১৮৭২–এর ৩২ ধারায় বলা আছে, আত্মহত্যাকারীর মৃত্যুর আগে রেখে যাওয়া সুইসাইড নোট প্ররোচনাদানকারীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবে। তবে শুধু একটি সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। সুইসাইড নোটের সমর্থনে আরও সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। তাই আপনার সঙ্গে কোনো মনোমালিন্যের সূত্র ধরে আপনাকে দায়ী করে তিনি যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটান, তবে অবশ্যই আপনি আইনগত জটিলতার মুখোমুখি হতে পারেন। সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে কারও বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা গেলে তখনই শাস্তি প্রদান করা যাবে।
আপনার উচিত হবে অতি দ্রুত মেয়েটির পরিবারের লোকজনদের এই বিষয়টি জানানো, যাতে তাঁরা মেয়েটিকে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। তা ছাড়া আপনি যদি মনে করেন পরিস্থিতি গুরুতর, সে ক্ষেত্রে নিকটস্থ থানায় গিয়ে এই মর্মে একটি সাধারণ ডায়েরি করে রাখতে পারেন।
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ডাক ঠিকানা প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA