প্রায় তিন বছর আগের কথা। একটি ধারাবাহিক নাটকের শুটিং নিয়ে খুবই ব্যস্ত মৌসুমী হামিদ। অনেক দিন ধরে শুটিং চলছিল। সেই শুটিংয়েই প্রথম দেখা হয় এক তরুণের সঙ্গে। জানতে পারেন যে তিনি নাটকটির চিত্রনাট্যকার, আবু সাইয়িদ রানা। সেই সূত্রে দু–একটি কথা হতো। যেহেতু নাটকের শুটিং হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে, তাই দেখাটাও নিয়মিত হতে থাকে। নাটকের গল্প নিয়েই কথার শুরু। পাশাপাশি বিশ্ব জলবায়ু থেকে জীবন–প্রকৃতির নানা বিষয়ে কথা বলতে থাকেন দুজন।
আড্ডা দিতে দিতেই মৌসুমী বুঝতে পারেন, ছেলেটির প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা প্রবল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেছেন, সাপ আর ব্যাঙ নিয়ে করেছেন গবেষণা। তাঁর এই প্রকৃতিপ্রেম ভালো লেগে যায় মৌসুমীর।
একসময় আরও বেশি কথা হতে থাকে। রানার মধ্যে নতুনত্বের খোঁজ পান এই অভিনেত্রী। দ্রুত গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। সাইয়িদ রানা শান্ত প্রকৃতির। শুটিংয়ে দেখা হলে চুপচাপ থাকেন। মৌসুমী তাঁকে বোঝার চেষ্টা করেন। একসময় মৌসুমী খেয়াল করেন যে ছেলেটির পকেটে ওয়ান টাইম চায়ের কাপ, কখনো কাগজের প্যাকেট, ফলের খোসা ইত্যাদি। অবাক হয়ে মৌসুমী জিজ্ঞাসা করেন ‘এগুলো কেন পকেটে নিয়ে ঘোরেন?’ রানা জানান, তিনি কোনো ময়লা যেখানে–সেখানে ফেলেন না। পরিবেশের ক্ষতি হবে, এমন কিছু করেন না। কথাগুলো মৌসুমীর মনে ধরে। বলা যায়, সেখান থেকেই ভালো লাগার শুরু।
মৌসুমী বলেন, ‘পরিবেশের প্রতি সে যে এতটা সচেতন, এটা আমাকে দারুণভাবে মুগ্ধ করে। আমার কাছে মনে হয়, যার প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা আছে, সে খারাপ হতে পারে না।’
দুজনই বুঝতে পারেন যে তাঁদের মধ্যে নানা বিষয়ে মিল। এরপর তাঁরা পরিকল্পনা করেন ঘুরতে যাওয়ার। দুজনের পছন্দ ছিল পাহাড়। সাইয়িদ রানা ট্রেকিং করতে ভালোবাসেন। কিন্তু মৌসুমীর ইচ্ছা থাকলেও কখনো সে পথে যাননি। এবার সেই সুযোগ কাজে লাগালেন।
মৌসুমী বলেন, ‘পাহাড় আমার ভীষণ ভালো লাগে। জীবনে প্রথমবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেকিং করে গভীর অরণ্যে ছুটে গিয়েছি। বলা যায়, বিরতিহীনভাবে পাহাড়ে উঠেছি। এই পুরো সময়ে সাইয়িদ আমাকে চারপাশটা দেখিয়েছে। কীভাবে ওপরে উঠব, বলে দিয়েছে। প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়েছে নতুনভাবে। যতই গভীর জঙ্গলে গিয়েছি, জীবনকে ততই নতুন করে দেখেছি। পাহাড়ে যেতে যেতেই আমাদের প্রেমটা হয়ে যায়। হাবুডুবু খেতে থাকি প্রেমে।’
প্রায় আড়াই বছর প্রেম করলেও সেটা কাউকে বুঝতে দেননি মৌসুমী হামিদ বা সাইয়িদ রানা। তবে দুজনের ভ্রমণের ছবি দেখে দুই বাড়িতেই পরিবারের লোকেরা ছিলেন কৌতূহলী। একসময় তাই দুজনে বাড়িতে জানিয়ে দেন ভালো লাগার কথা। দুই পরিবারই রাজি হয়ে যায়।
মৌসুমী হামিদ বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় এটাও চেয়েছি যে বিয়ে না হলেও আমাদের বন্ধুত্বটা যেন থাকে। অনেক কিছু ভাবার পরে মনে হলো, বিয়ে তো একদিন করতেই হবে। দিল্লিকা লাড্ডু খেয়েই পস্তাই।’
সাইয়িদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, মৌসুমী হামিদকে কেন পছন্দ করেছেন? কেন মনে হয়েছে যে তাঁর সঙ্গে সংসার করা যায়? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি তার সোলকে কানেক্ট করতে পেরেছি। আমার কাছে সব সময়ই মনে হয়েছে যে মৌসুমীর ভেতর–বাহির সমান। সে মুখে যা বলে, ভেতরেও তা–ই। তার মধ্যে কোনো প্রিটেন্ড নেই। এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। আমাদের বোঝাপড়া, পছন্দ অনেক কিছুরই মিল ছিল। আড়াই বছর প্রেম করার পর তাই মনে হয়েছে যে বিয়ে করলে মন্দ হয়
না।’
অবশেষে নতুন বছরের ১১ জানুয়ারি বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন তাঁরা। সাক্ষাৎকার নিতে যখন ফোন করলাম, সাইয়িদ রানা বলেন, ‘বিয়ের পর প্রথমবার
সাতক্ষীরায় শ্বশুরবাড়িতে এসেছি। সংসারটা এখনো ঠিকঠাক শুরু করতে না পারলেও শ্বশুরবাড়িতে দারুণ সময় কাটছে। জামাই আদরটা উপভোগ করছি।’
লেখাটি বর্ণিল বিয়ে ২০২৪ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত