অন্যের সামনে নিজেকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করার বাসনা যেকোনো মানুষেরই সহজাত প্রবৃত্তি। সেই বাসনা মেটাতে যুগে যুগে মানুষের কত না প্রচেষ্টা! তবে এমন কিছু মৌলিক বিষয় আছে, যেসব ভুলে গেলে বাকি সব চেষ্টাই বৃথা।
কেউ রামগরুড়ের ছানা হয়ে বসে থাকলে কি তাঁকে আপনি আকর্ষণীয় মনে করবেন? নিশ্চয়ই না। হাসিখুশি মানুষ, যাঁর আচরণ বন্ধুত্বপূর্ণ, তাঁকেই বেশি আকর্ষণীয় মনে হয় সবার কাছে।
আকর্ষণীয় হওয়ার জন্য রসবোধ থাকতেই হবে। জীবনে কাজ থাকবে, চাপ থাকবে; কিন্তু কেবল কাজের কথা আর কাঠখোট্টা আচরণ কখনোই আপনাকে আকর্ষণীয় হিসেবে উপস্থাপন করবে না। রোজকার জীবনে এমন অনেক ঘটনাই ঘটে, যা থেকে হাসির অনেক উপকরণ খুঁজে নেওয়া যায়। তাই ইতিবাচক থাকুন। হাসুন ও অন্যকেও হাসাতে চেষ্টা করুন।
পথেঘাটে, কাজের মধ্যে নানান সময়ই মেজাজ হারিয়ে ফেলি আমরা। অথচ অন্যের ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে, মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখলে ‘দিনটাই মাটি হয়ে গেল’–জাতীয় ভাবনা আপনার মনে জায়গাই পাবে না। অন্যেরাও আপনাকে ভিন্ন চোখে দেখবে। হয়তো রিকশাচালকের দোষে আপনার গাড়িতে স্ক্র্যাচ পড়ে গেল। আপনি যদি গাড়ি থেকে নেমে তাঁকে দু ঘা লাগিয়ে দিয়ে নিজের মনের ঝাল মিটিয়ে নেন, তাতে আপনার পাশের আসনে বসা মানুষটার কাছে কিন্তু আপনি ‘হিরো’ হয়ে যাবেন না! হতদরিদ্র মানুষ এবং অসহায় প্রাণীর প্রতি সদয় আচরণ করুন। সৃষ্টিকুলের যাকে যেভাবে পারেন সাহায্য করুন। ধৈর্য ও দয়ালু মনোভাবের কারণেই পাশের মানুষটার কাছে আপনি হয়ে উঠতে পারেন ‘সুপারহিরো’।
পোষা প্রাণীর সঙ্গে মানুষের মিথস্ক্রিয়া হয় নানানভাবেই। কোনো প্রাণীর দায়িত্ব নিতে পারলে এটাও প্রমাণ হয় যে আপনি একজন দায়িত্বশীল মানুষ। আপনার এই দায়িত্বশীলতাই আপনাকে অন্যের কাছে আকর্ষণীয় হিসেবে উপস্থাপন করবে।
এই পরামর্শ মূলত পুরুষের জন্য—চুল এলোমেলো রাখবেন না। সময়মতো চুল, গোঁফ, দাড়ি ছেঁটে নিন। অপরিচ্ছন্ন বদভ্যাস ত্যাগ করুন। পোশাকের প্রতি উদাসীন থাকবেন না। এসবের যেকোনো একটিই আপনাকে অনাকর্ষণীয় করে তোলার জন্য যথেষ্ট। বরং নিজের প্রতি যত্নশীল ও পরিপাটি মানুষকে অন্যরা বেশি পছন্দ করে।
নির্ঘুম রাতের ছাপ যদি পড়ে চেহারায়, তাহলে কিন্তু মুশকিল। চোখ বসে গেলে বা চোখের নিচে কালি পড়লে কিংবা কারও মধ্যে প্রাণোচ্ছলতা না থাকলে কিন্তু তাঁকে একেবারেই আকর্ষণীয় দেখায় না। তাই দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন। জীবনকে সহজভাবে নিন।
আপনার সামনে থাকা মানুষটা যদি আপনার আবেগ, অনুভূতি সহজে উপলব্ধি করতে পারে, তাহলে এই বিষয় আপনাকে তার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলবে। এমনটাই জানা গেছে জার্মানির এক সাম্প্রতিক গবেষণায়। তাই নিজের আবেগ-উৎসাহ চাপা দিয়ে রাখবেন না। নিজের অনুভূতি প্রকাশে অনুৎসাহী ভাবটাই আপনার সামনে থাকা মানুষটার সঙ্গে দূরত্বের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট