কাছের মানুষকে আলিঙ্গন করা কত জরুরি, জানেন?

কাছের মানুষকে মাঝেমধ্যে গভীরভাবে কয়েক মুহূর্ত জড়িয়ে ধরলেও নাকি জীবনটা সহজ হয়ে যায়। ভার অনেকখানি নেমে যায়! নিজেকে হালকা ও চনমনে লাগে।
আবেগের এক দারুণ বাহ্যিক প্রকাশ আলিঙ্গন। সেই আবেগের পেছনে থাকতে পারে খুশির হররা কিংবা জমে থাকা কষ্টের মেঘ। আবেগটা যেমনই হোক, আলিঙ্গনের মতো বাহ্যিক প্রকাশে দেহ ও মনে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এমনকি জীবনের পথে এগিয়ে চলার পাথেয়ও হয়ে উঠতে পারে প্রিয়জনের একটি আলিঙ্গন।

কিছু কিছু মুহূর্তে প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরলে মনে হয়, সব সমস্যা বুঝি নিমিষেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল

সেই ছোট্ট শিশুটির কথা ভাবুন, পরীক্ষার দুর্দান্ত ফল হাতে পেয়ে যে দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে। সেই রাগান্বিত কিশোরের কথা ভাবুন, যার দুর্বার জেদ নিমেষেই মিলিয়ে যায় বাবার একটি উষ্ণ আলিঙ্গনে। বিজয়ের উল্লাসে একে অপরকে জড়িয়ে ধরা তরুণদের কথাও ভাবুন। একজন মানুষের বয়স যতই হোক, তিনি যে মানসিক অবস্থাতেই থাকুন না কেন, কাছের মানুষের আলিঙ্গন তাঁর জন্য একটি ইতিবাচক বিষয়। এ হলো ভালোবাসার পরশ। এ হলো ভালো থাকার রসদ।

রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক বলেন, ‘জন্মের পর নবজাতকের সঙ্গে তার মায়ের প্রথম অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠে আলিঙ্গন আর মায়াময় স্পর্শের মধ্য দিয়ে। জীবনের প্রতিটি পর্যায়েই একজন মানুষের জন্য আলিঙ্গন, শারীরিক স্পর্শ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আলিঙ্গনের সঙ্গে শরীরের এমন কিছু হরমোনের ভারসাম্য গভীরভাবে সম্পর্কিত, যেগুলো আমাদের ইতিবাচক মনোভাব ও আবেগের জন্য দায়ী। কাছের মানুষের আলিঙ্গনে একজন ব্যক্তি গভীর প্রশান্তি অনুভব করেন। আলিঙ্গনের ফলে তিনি আবেগের ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হন। তিনি ভালো অনুভব করেন। তাঁর খারাপ অনুভূতিগুলোর তীব্রতা কমে আসে।’

আলিঙ্গনের সঙ্গে শরীরের এমন কিছু হরমোনের ভারসাম্য গভীরভাবে সম্পর্কিত, যেগুলো আমাদের ইতিবাচক মনোভাব ও আবেগের জন্য দায়ী

কেবল কাছের মানুষই নয়, আপনার প্রিয় প্রাণীটিকে আলিঙ্গন করলেও আপনি একইভাবে আলিঙ্গনের সব উপকারিতাই পাবেন। কেবল খেয়াল রাখতে হবে, প্রাণীটি আপনার আলিঙ্গনকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে পারছে কি না। প্রাণীটির সঙ্গে যদি আপনি মানসিকভাবে, আবেগীয় ভাবে জড়িত হন, তাহলে তার সঙ্গে আলিঙ্গনও আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। মনোবিজ্ঞানী শারমিন হকের পরামর্শ অনুসারে চলুন চট করে জেনে নিই, কেন করবেন আলিঙ্গন?

১. দেহ ও মনকে শিথিল করে

আলিঙ্গনে দেহ ও মন শিথিল হয়। কমে আসে মানসিক চাপ। আপনি হয়তো লম্বা সময়ের জন্য কাজের পাহাড়ে চাপা পড়ছেন, কিংবা হয়তো আপনাকে কেউ ক্রমাগত কোনো একটি বিষয়ে কটু কথা শুনিয়ে চলেছে, এমন পরিস্থিতিতে খানিকক্ষণের জন্য প্রিয় কাউকে আলিঙ্গন করতে পারেন। তাতে অবশ্য আপনার কাজের চাপ কিংবা অন্যের সমালোচনার পাহাড় কোনোটাই কমবে না, কিন্তু আপনার মনের ওপর থেকে গুরুভার নেমে যাবে। দুশ্চিন্তার বোঝা হালকা হবে।

২. কষ্ট ও হতাশা কমায়

আলিঙ্গনের সঙ্গে সঙ্গে নীরবেই মানুষ নিজের অনুভূতির আদান-প্রদান করে ফেলে। তাতে কষ্টের অনুভূতি কমে আসে। তীব্র কষ্টের সময় প্রিয়জনের আলিঙ্গনে আপনি কষ্টের ধাক্কা সামলে ওঠার সাহস পাবেন, শক্তি পাবেন। এমনকি হতাশাগ্রস্ত মানুষকেও তাঁর কাছের কেউ আলিঙ্গন করলে, তিনি কিছুটা ভালো অনুভব করেন।

৩. রাগ ও ক্ষোভ প্রশমনে

আপনার কাছের মানুষটি যখন রেগে থাকেন কিংবা ক্ষুব্ধ থাকেন, সেই সময় আপনি তাঁকে আলিঙ্গন করে শান্ত করতে পারেন। আপনার মধ্যকার ইতিবাচকতার পরশ এই আলিঙ্গনের ভেতর দিয়েই পেয়ে যাবেন তিনি।

কাছের কাউকে আলিঙ্গন করলে আপনি অনুভব করবেন, পৃথিবীতে আপনি একা নন। আপনার একেবারে ‘নিজের’ বলতে কেউ না কেউ আছে

৪. একাকিত্ব এড়াতে

কাছের কাউকে আলিঙ্গন করলে আপনি অনুভব করবেন, পৃথিবীতে আপনি একা নন। আপনার একেবারে ‘নিজের’ বলতে কেউ না কেউ আছে। কেউ না কেউ আপনার জন্য ভাবে। আপনার নিজের ভাবনার জগতেও অন্যের জন্য আলাদাভাবে একটা জায়গা আছে। এটা আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।

৫. উদ্যমী হয়ে উঠতে

কাছের কারও আলিঙ্গনের ফলে একজন ব্যক্তি কাজকর্মেও উদ্যমী হয়ে ওঠেন। তাঁর কাজের স্পৃহা বাড়ে। জীবনের ছন্দপতনের ঝুঁকি কমে।

৬. ঘুম ভালো হয়

গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের আগে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে আলিঙ্গন বা উষ্ণ শারীরিক পরশ ঘুমের মান বাড়াতে সাহায্য করে।