কয়েক স্তরের বিশাল কেক, সাদা আভিজাত্যপূর্ণ কাস্টমাইজড কেক, বলরুমে কোরিওগ্রাফড নাচ, ফুলেল সজ্জা, দামি খাবার—এসবই মার্কিন বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কয়েক বছর আগে এর সঙ্গে ছিল ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’–এর চল। তবে করোনা মহামারিকালের পর যে খাত থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ বাঁচানো হয়েছে, সেটি আর কিছুই নয়—বিয়ে।
সিএনএনের প্রতিবেদন অনুসারে, দ্য ওয়েডিং রিপোর্টের গবেষণায় উঠে এসেছে যে ২০২৩ সালে গড়ে একটা মার্কিন বিয়েতে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ডলার বা ৩৩ লাখ টাকা, যেটা ২০১৮ সালেও ছিল ৫০ হাজার ডলার। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে একেকটা অভিজাত বিয়েতে গড়ে ১০ কোটি টাকা খরচ হয়! সেটাই সব শ্রেণির সঙ্গে গড়ে ৩৩ লাখ টাকায় এসে ঠেকেছে। তাই এখন ৩৩ লাখ টাকার পর ‘মাত্র’ লেখাই যায়।
করোনা মহামারিকালে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়লে, আর্থিক সংকট দেখা দিলে তা মোকাবিলায় তড়িঘড়ি করে দুই ট্রিলিয়ন ডলার ছাপানো হয়। তবে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মতে, তা তিন ট্রিলিয়ন ডলারের কম নয়। আর বিশ্বের কমবেশি সব দেশেই ডলার চলে। এ কারণে মানুষের হাতে ডলার থাকলেও উৎপাদন বাড়েনি। ফলে দেখা দিয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। এ কারণে আপনাকে বাজারে দিতে হচ্ছে চড়া মূল্য। অন্যদিকে ইউক্রেন–রাশিয়ার যুদ্ধ তো চলছেই। ফলে জ্বালানি তেলের দামও বেশি। জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস—এই তিনটি এমন খাত, যেসবের দাম বাড়লে অন্য সবকিছুতে প্রভাব পড়ে। ফলে বাজারে জিনিসের দাম বেশি। এটা কেবল বাংলাদেশের বাস্তবতা নয়, যুক্তরাষ্ট্রেও একই চিত্র।
মার্কিন জনগণ তাঁদের খরচ কমানোর জন্য বিয়েকেই অন্যতম ‘টার্গেট’ করেছে। দ্য ওয়েডিং রিপোর্টের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও শেন ম্যাকমারি বলেন, ‘মিলেনিয়াল (১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে যাঁদের জন্ম) ও জেন–জিরা (১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে যাঁদের জন্ম) এমনিতেই বিয়ের ওপর থেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন। যাঁরা বিয়ে করছেন, তাঁরাও আয়োজন যথাসম্ভব সাদামাটা রাখছেন। ফলে আমাদের ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। বিয়েবিষয়ক কর্মকাণ্ডে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ও ভাটা পড়ছে। বিষয়টা যাঁরা বিয়ে করছেন, তাঁদের জন্য হয়তো ভালো; সামগ্রিক বিয়ে–অর্থনীতির জন্য আশঙ্কাজনক।’
টনি বুরোওয়েস যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার ৩০ বছর বয়সী শিক্ষক। গত মাসে তিনি বিয়ে করেছেন। বিয়েতে মোট উপস্থিত অতিথির সংখ্যা ছিল মাত্র ১৮! কেবল দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠজন আর কজন বন্ধুবান্ধব এসেছিলেন। টনি বলেন, ‘এত টাকা কেন এক দিনে খরচ করব? বরং সেই টাকা আমাদের সন্তানের জন্য জমিয়ে রাখব। বাড়ি কিনব। বিপদে–আপদে, অর্থনৈতিক দুঃসময়ে কাজে দেবে। নিজেকে প্রশ্ন করেছি, আমাদের কি বিয়েতে সত্যিই এত খরচের দরকার আছে?’
অর্থনৈতিক মন্দার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। আর বিয়ের কেক, খাবারে প্রচুর ডিম ব্যবহৃত হয়। এ জন্য ভেগান কেকের কয়েকটি শপ অনলাইনে অল্প দামে বিয়ের কেক সরবরাহ করছে। টেক্সাসে ‘কেক লামা’ নামে এমনই একটি প্রতিষ্ঠান চালান অ্যালিসা ইয়াং। অ্যালিসা বলেন, ‘আমার বান্ধবী আমাকে তার বিয়েতে ডিম ছাড়া কম খরচে একটা কেক বানিয়ে দিতে বলেছিল। এরপর সেই বান্ধবীর বান্ধবীরা আমার থেকে কেক নিতে শুরু করে। আর অন্যদেরও কেক নিতে বলে। একা আর কুলিয়ে উঠতে পারছিলাম না। তাই ভাবলাম, একটা প্রতিষ্ঠানই খুলে বসি। এখন আমাদের কেকসহ অন্যান্য ভেগান খাবারের অর্ডার আসে নিয়মিত। দয়া করে আমার কেকের রেসিপি জানতে চাইবেন না!’
বিয়ের অভিজাত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রিতে ভাটা পড়লেও বিয়ের নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই এ রকম ছোট উদ্যোক্তারা প্রতিষ্ঠা পাচ্ছেন নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে। তবে ভারতের ধনকুবের আম্বানিদের মতো না হলেও যাঁর যথেষ্ট সামর্থ্য আছে, তিনি বিয়েতে খরচ করবেন, হাজার মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়াবেন, বিনোদিত করবেন, তাতে ক্ষতি কী? বরং অর্থনীতির চাকা ভালো ঘুরবে।
সূত্র: সিএনএন