‘সম্পর্ক থেকে বের হতে চাইলে মেয়েটি আমাকে হুমকি দিচ্ছে’

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।

পাঠকের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ব্যারিস্টার মিতি সানজানা
পাঠকের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ব্যারিস্টার মিতি সানজানা

প্রশ্ন: আমি পুরুষ, বয়স ১৮ বছর। গত বছর একটি মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরবর্তী সময়ে দুজনের সম্মতিতে আমরা কয়েকবার অন্তরঙ্গ হই। আমার পরিবার তাকে মেনে নেবে না, তাই আমি এখন এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে চাইছি। কিন্তু মেয়েটি নানাভাবে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার ভয় দেখাচ্ছে। এখন আমি আইনগত কোনো প্রতিকার কি পেতে পারি?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনার বয়স অনেক কম। আপনি জানিয়েছেন, গত বছর অর্থাৎ যখন আপনার বয়স ১৭ ছিল, তখন আপনি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন। অল্প বয়সে এ ধরনের সম্পর্ক উভয় পক্ষের জন্যই ক্ষতির কারণ হতে পারে। সবকিছুর একটা সঠিক বয়স রয়েছে। প্রেম, ভালোবাসার জন্যও সঠিক বয়স রয়েছে। তার আগে দরকার মানসিক বিকাশ। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সবার আগে দরকার। কারণ, প্রেম, ভালোবাসার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করতে হলে নিজেকে তার যোগ্য করে তোলা প্রয়োজন।

যা–ই হোক, যেহেতু কোনো কারণে সম্পর্কটি আপনি আর রাখতে চাচ্ছেন না, তাই আপনার প্রেমিকারও জোর করে সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখা বা বাধ্য করাটা যুক্তিসংগত নয়। আপনার প্রশ্ন থেকে বোঝা যাচ্ছে, আপনার প্রেমিকা সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়ার জন্য আপনাকে বাধ্য করতে চাচ্ছে। সেই সঙ্গে মেয়েটি আপনাকে হুমকি প্রদর্শন করছে এবং সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

কেউ হুমকির শিকার হলে তাঁকে অবশ্যই থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। হুমকির শিকার ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ তদন্ত করবে। তদন্ত করে যদি দেখা যায়, হুমকি দেওয়ার ঘটনা সঠিক, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীনে অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি হতে পারে দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারেন।

কেউ হুমকি দিলে, ভয়ভীতি দেখালে বা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাওয়া যায়। ১০৭ ধারায় মামলা করার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শান্তি বজায় রাখার জন্য বন্ড সম্পাদনে বাধ্য করা যায়। এ ধরনের মামলা করতে হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। আপনি যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, সে ক্ষেত্রে কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি উপস্থাপন করবেন। আরজিতে মূল অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম-ঠিকানাসহ সব ঘটনার বিবরণ স্পষ্ট করে লিখতে হবে। আপনার অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকলে তা আরজির সঙ্গে দাখিল করতে হবে।

১০৭ ধারার আশ্রয় নিলে আদালত প্রাথমিক শুনানিতে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মুচলেকা সম্পাদনের জন্য আদেশ দেবেন। ভবিষ্যতে তিনি আর কোনো ধরনের হুমকি বা ভয়ভীতি দেখাবেন না, এই মর্মে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে।

তবে আপনি তাকে ‍ভালোভাবে বোঝাতে পারেন, আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিলে আপনারা দুজন ও আপনাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনাদের দুজনের ভবিষ্যৎ ও পড়ালেখা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে কোনো অভিভাবক বা শুভাকাঙ্ক্ষীর সাহায্য নিন।