কাছের মানুষকে ওজন কমানোর কথা কীভাবে বলবেন?

ওজন এমনই এক ব্যক্তিগত বিষয়, যা নিয়ে অন্য মানুষের কথা বলাটা সব সময় ঠিক শোভন নয়। তারপরও একেবারে কাছের বন্ধু কিংবা পরিবারের সদস্যদের কাউকে ওজন কমাতে বলাটা অনেক ক্ষেত্রেই দায়িত্ব হয়ে পড়ে। তাই বলতেই যদি হয়, এমনভাবে বলুন, যাতে তা দোষারোপ বা অভিযোগের মতো না শোনায়। এই যেমন জীবনসঙ্গীর ওজন বেশি হলে আপনি যদি বলেন, ‘আমার পাশে তোমাকে মানাচ্ছে না’, তাহলে কিন্তু তিনি ওজন কমাতে উৎসাহিত না-ও হতে পারেন। উল্টো হয়তো সংসারে অশান্তি নেমে এল। কীভাবে বললে কাছের মানুষকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে উৎসাহ দিতে পারবেন, বলতে শুরু করার আগেই তা ভেবে নেওয়া জরুরি।

সঙ্গীকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য একসঙ্গে ডায়েট শুরু করা যায়
ছবি: পেক্সেলস

সরাসরি ওজন কমাতে বলা কিংবা খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের কথা বলাটা ঠিক নয়। বরং বিষয়গুলো একটু ঘুরিয়ে বলা উচিত। ওজনের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে আলাপ করার সময় আপনাকে অবশ্যই কণ্ঠস্বর নম্র রাখতে হবে। কোনো অবস্থায়ই এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করবেন না। কথা হবে ইতিবাচক। ওজন নিয়ে কেন সবারই সচেতন হওয়া উচিত, এমনকি আপনার নিজেরও—সেই বিষয়গুলো নিয়েও খানিকটা বলতে পারেন। আপনজনকে ওজন কমাতে উৎসাহ দেওয়ার এমন কিছু উপায় জানালেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক।

সবার জন্যই সচেতনতা

‘ইদানীং আমাদের সবারই ওজন বাড়ছে। চিন্তা করছি, খাওয়াটা একটু কমাতে হবে’, যাঁর ওজন বেশি, তাঁকে এমন একটা বাক্য বলা হলে তাঁর মনঃকষ্টে ভোগার আশঙ্কা কম। তবে বক্তার নিজের ওজন একেবারে কম হলে, অর্থাৎ তিনি নিজে একেবারেই শুকনা হলে অবশ্য এমন বাক্য তাঁর মুখে মানানসই হবে না।

একসঙ্গে শরীরচর্চা করতে পারেন

তবে ওজন যেমনই হোক, সুস্থ থাকতে শরীরচর্চা তো সবাইকেই করতে হবে। তাই শরীরচর্চার বিষয়টার উল্লেখ করতে পারেন যে কেউই। ‘কয়েক দিন ধরেই ভাবছি, শরীরটাকে ঠিক রাখতে হাঁটার অভ্যাস করা প্রয়োজন। কিন্তু কিছুতেই রুটিনে আসতে পারছি না। কী করা যায় বলো তো?’ এমন বাক্য কিন্তু তাঁকে শরীরচর্চায় উৎসাহ জোগাতে পারে।

স্বাভাবিক ওজনের ব্যক্তির শরীরের কিছু কিছু জায়গায় কিন্তু মেদ জমতে পারে। নিজের শরীরে মেদ জমার বিষয়টা উল্লেখ করেও তিনি উৎসাহ দিতে পারেন কাছের মানুষকে, যাঁর ওজন বেশি। যেমন তিনি বলতে পারেন, ‘আমারও তো শরীরে মেদ জমছে, চেষ্টা করেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। চলো তো ভেবে দেখি, কীভাবে আমরা সুস্থ থাকতে পারি?’

আমি আছি তোমার পাশে

আপনিও আপনার কাছের মানুষটির সঙ্গে শরীরচর্চায় অংশ নিতে পারেন রোজ। উৎসাহ দিতে তাঁর সঙ্গে যেতে পারেন। দুজন মিলে শরীরচর্চার একটা রুটিন দাঁড় করাতে পারেন। কাছেপিঠে মাঠ নেই, তাতে কী? ভোরে ফাঁকা রাস্তায় বা ছাদে হাঁটতে উৎসাহ দিন। হয়তো তিনি বললেন, ভোরে তাঁর ঘুম ভাঙে না। সে ক্ষেত্রে আপনিই না হয় দায়িত্ব নিলেন সময়মতো তাঁর ঘুম ভাঙিয়ে দেওয়ার। এমনকি আপনি যদি দূরেও থাকেন, তবু ওই সময়ে তাঁকে ফোন করে উঠিয়ে দিতে পারেন। আপনি নিজেও উঠতে না পারলে দুজন মিলে একসঙ্গে সময়মতো ওঠার বুদ্ধি বের করতে পারেন। আপনি নিজে কখনো ওজন নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়ে থাকলে তাঁর সঙ্গে সেই অভিজ্ঞতাও ভাগ করতে পারেন। তাঁকে স্বাস্থ্যকর, সুস্বাদু খাবার তৈরি করে দিতে পারেন। মোটকথা, যতভাবে সম্ভব, ওজন কমাতে তাঁর সহযোগী হওয়ার চেষ্টা করুন।

খেয়াল রাখুন

যে বন্ধুটির ওজন বেশি, আড্ডার সময় হয়তো তাঁকে নিয়েই হাসাহাসি হয়। হাসতে হাসতে নানা নেতিবাচক কথাই বলে ফেলেন কেউ কেউ। তিনি নিজেও কিন্তু তখন সবার সঙ্গে হাসতে পারেন বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, মনের কোণে কষ্ট চেপেই হয়তো তিনি অন্যদের সঙ্গে হাসছেন। এভাবে হাসাহাসি বা বক্রোক্তি করা একেবারেই উচিত নয়।

কেবল অস্বাস্থ্যকর জীবনধারার জন্যই কিন্তু ওজন বাড়ে না। ওজন বাড়ার পেছনে বিভিন্ন রোগও দায়ী হতে পারে। তাই আপনার কাছের কোনো মানুষ চেষ্টা করেও ওজন কমাতে না পারলে তাঁকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিন।