দাম্পত্যে সুখী থাকার ১০ উপায়

দাম্পত্য সম্পর্কে দুজনের কাছেই দুজনের আস্থাভাজন হওয়া জরুরি। মডেল: আইরিন ও জুলফিকার
ছবি: কবির হোসেন

মতের অমিল, ভুল–বোঝাবুঝি, অসহিষ্ণুতা, রুক্ষ মেজাজ, আমিত্বের মতো নানা কারণে সুন্দর দাম্পত্য জীবনে ঘটতে পারে ছন্দপতন। দুজন মানুষ একসঙ্গে থাকলে ঝগড়া হবে, তাই বলে ভালোবাসার চর্চা বন্ধ করা যাবে না। রাগের বশে জীবন এলোমেলো করে ফেলারও কোনো মানে হয় না। যৌবন থেকে জীবনের গোধূলি পর্যন্ত জীবনসঙ্গীর সঙ্গে হাসি–আনন্দে পথ চলতে চাইলে কিছু বিষয় সচেতনভাবে এড়িয়ে যেতে হয়, আবার কিছু বিষয়ের চর্চাও করতে হয়। ইউনিভার্সিটি অব ডেনভারের সেন্টার ফর ম্যারিটাল অ্যান্ড ফ্যামিলি স্টাডিজের সহপরিচালক হাওয়ার্ড মার্কম্যান বলেন, ‘দাম্পত্যে উভয় পক্ষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখাটা ভীষণ জরুরি। হাস্যরস, আনন্দ ভাগাভাগি ও সাংসারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা স্বামী–স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ককে আরও দৃঢ় ও মজবুত করে।’

আসুন জেনে নিই, দাম্পত্য জীবন সুখী করার রেসিপি—

১. যেকোনো সম্পর্কেই পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ ভীষণ জরুরি। হোক সেটা বন্ধুত্ব, প্রেম কিংবা বিবাহিত জীবন। যেকোনো কথা, আচার কিংবা ব্যবহারের মধ্যে সেই সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ যেন প্রতীয়মান থাকে। না হলে সেখানে একটা অদৃশ্য দূরত্ব সৃষ্টি হবে, যা পরস্পরের অজান্তে সম্পর্ককে বিষাক্ত করে তুলবে।

২. স্বামী–স্ত্রী দুজনকেই একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। দুজনের কাছেই দুজনের আস্থাভাজন হওয়া জরুরি। আর দুজনের মধ্যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি যদি হয়ও তাহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে সেটার সমাধান করুন। কারও কোনো ভুলত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন। সঙ্গীর ভুল হলে সংশোধনের সুযোগ দিন।

৩. যেহেতু একজীবন একসঙ্গে অতিক্রম করার লক্ষ্যে ‘বিয়ে’ নামক এই বন্ধন, তাই এখানে ভালোবাসার রকমফের হবে নিঃস্বার্থ। কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা অনেক সময় শূন্যতা সৃষ্টি করে। তাই প্রতিদানহীন ভালোবাসা সঙ্গীর মধ্যে সঞ্চার করতে পারে অনন্য এক অনুভব। অসুস্থ হলে শুশ্রূষা করা, কাজের ফাঁকে খোঁজ নেওয়া, সঙ্গীর পছন্দের কাজে আগ্রহ দেখানো দাম্পত্য জীবনকে অনেক মজবুত ও সাবলীল করে।

দাম্পত্যে সুখী হতে ভালো শ্রোতা হওয়া খুব জরুরি। মডেল: জুলফিকার ও আইরিন

৪. সংসারজীবনে ছোট–বড় অনেক ঘটনাই ঘটতে পারে। হতে পারে মতানৈক্য। তাই বলে সেসব বিষয়কে ইস্যু করে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করা নিছক নির্বুদ্ধিতা। রাগ না দেখিয়ে বরং নমনীয়ভাবে আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করুন। পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল থেকে আলোচনা করলে সম্পর্ক সুখের হবে।

৫. দাম্পত্য নারী–পুরুষের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিশেষ প্রয়োজন। এতে একজনের কাছে অন্যজন বিভিন্ন জটিলতা ও অসুবিধা সহজে শেয়ার করতে পারে। আর সেখান থেকে একটা সমাধান বের হয়ে আসে। তবে দাম্পত্যে যদি বন্ধুভাবাপন্ন সম্পর্ক না থাকে, তাহলে অনেক বিষয় অমীমাংসিত থেকে যায়, যা থেকে দূরত্বের সৃষ্টি হয়।

৬. দাম্পত্যে সুখী হতে ভালো শ্রোতা হওয়া খুব জরুরি। অনেক সময় দেখা যায়, স্ত্রী কিছু একটা বলছে আর স্বামী ফোন স্ক্রল করছে অথবা টিভিতে মনোযোগ দিয়ে আছে। হয়তো কিছুটা শুনছে আর অন্যদিকে চেয়ে হুঁ–হা করছে। এতে পরোক্ষভাবে অপর পক্ষকে অসম্মান করা হয়। তাই স্বামী কিংবা স্ত্রী যখন একে অপরকে কিছু বলবেন, অন্যজনের মনোযোগের সঙ্গে সেটা শোনা উচিত। এতে দুজনের মধ্যকার পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়।

৭. যেকোনো সাফল্য বা অর্জনে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে অভিবাদন জানাবে ও উৎসাহ দেবে। এতে দুজনের মধ্যে নির্ভরতা ও ঘনিষ্ঠতা বাড়বে। প্রশংসা পেলে আরও ভালো কিছু করার প্রেরণা জন্মে।

অভিযোগ না করে সমাধানের পথ খুঁজুন দুজনে মিলে

৮. দাম্পত্যে নিজের পরিসর বলেও একটা বিষয় থাকা দরকার। অনেক স্বামী–স্ত্রী আছেন, যাঁরা একজন আরেকজনের সঙ্গে গায়ে গায়ে লেগে থাকেন, সঙ্গীর সবকিছুতে নজরদারি করেন। এটা একেবারেই ঠিক না। প্রত্যেক মানুষেরই চিন্তাভাবনার একটা নিজস্ব জগৎ থাকে। তাই একসঙ্গে সময় কাটানোর ফাঁকে ফাঁকে সঙ্গীকে মাঝে মাঝে ‘স্পেস’ দেওয়া দরকার। এতে সম্পর্কে বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য আসে।

৯. উপলক্ষ থাকুক বা না থাকুক দুজন মিলে মাঝে মাঝে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া জরুরি। বেড়ানো কিংবা একসঙ্গে বাইরে খাওয়া একঘেয়ে জীবনে ভিন্নমাত্রা যোগ করতে সাহায্য করে। তাই ব্যস্ততার ভেতরেও সময় বের করে মাঝে মাঝে ডেটিং করা দাম্পত্য জীবনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

১০. সঙ্গীর সঙ্গে নিয়মিত ঘনিষ্ঠ হতে হবে। কথায় আছে ব্যবসা–বাণিজ্যের বড় বড় চুক্তি যেমন রেস্তোরাঁ কিংবা হোটেলে হয়, ঠিক তেমনি স্বামী–স্ত্রীর যত মান–অভিমান কিংবা মনোমালিন্য সব ঠিক করে দিতে পারে শোবার ঘর। উৎকৃষ্ট অন্তরঙ্গতা ও স্পর্শ দাম্পত্যকে করে আরও সতেজ। একটা উপভোগ্য ও সুন্দর সময় কাটানোর পর দুজনের মধ্যকার অনেক বিষয়ই নিমেষে গৌণ হয়ে যায়। মুহূর্তে দূর হয়ে যায় অনেক জটিলতা। তাই দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর রাখতে স্পর্শ ও নিয়মিত শারীরিক সংসর্গের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

সূত্র: টাইম, হাফিংটন পোস্ট ও ম্যারেজ ডটকম