ভালোবাসার প্যারাসিটামল

পাঠকের সুখ–দুঃখ, হাসি–আনন্দ, পছন্দ, ভালোলাগা, ভালোবাসাসহ যে কোনো না বলা কথা শুনতে চায় মনের বাক্স। প্রতি সপ্তাহে পাঠকের পাঠানো সেসব লেখা থেকে নির্বাচিত কিছু লেখা আজ প্রকাশিত হলো এখানে

ভালোবাসার প্যারাসিটামল

একাকিত্বের চরম পর্যায়ে গেলে মানুষ তার বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়ে। অন্তত আমার বেলায় তেমনটাই ঘটেছে। যে জানে, তাকে নতুন করে জানানোর কিছু নেই। ভালোবাসা মানে অজানাকে নয়, প্রতিনিয়ত সঙ্গীকে নতুন করে আবিষ্কার করা। এ জন্যই হয়তো সে বন্ধুকে প্রেমিক হিসেবে মানতে পারছে না। তাকে কতটা ভালোবাসি, সেটা নতুন করে জানানোর কিছু নেই।

আমি ভালোবাসি বলতে না পারার জ্বরে ভুগছি। তুমি আমার প্যারাসিটামল। ভাবছি, পাশে থেকেও সেটা বুঝতে এত দিন লেগে গেল! তাই তোমাকে বলতে চাই, তুমি কি আমার ভালোবাসার জ্বরের প্যারাসিটামল হবে?

জোবায়েদ ইসলাম, জামালপুর

এই দুঃখ কোথায় রাখি

আমি তখন দশম শ্রেণিতে পড়ি। এই সময়েই মাকে সাহায্য করার নামে পুরো পরিবারের কাজের ভার আমার কাঁধে এসে পড়ে। কোনোরকমে এসএসসিটা পাস করি। তারপর প্রায় ১০ বছর আমার হাতে সংসার চলেছে। এরপর বিয়ে হলো। মা চাইত বিয়ের পরও বেড়ানোর নামে এসে যেন কাজ করে দিই। কারণ, আমি সব কাজই গুছিয়ে দ্রুত করতাম। তারপরও মায়ের সঙ্গে মনোমালিন্য হতো। শুনতে হতো, ‘এটা তো আর আমার সংসার না। এখন সন্তানেরাও চায় ওদের সংসারে কাজ করি। একজন বলে ঢাকায় চলো, আরেকজন বলে আমেরিকায় চলো।’ আমি থাকি চট্টগ্রামে। একা একা বসে ভাবি, কত কষ্ট করে সন্তানদের মানুষ করলাম, তারাও আমার দুঃখ বুঝল না। এই দুঃখ কোথায় রাখি?

রুবি, চট্টগ্রাম

যা ঘটার কথা ছিল না

একই ছাদের নিচে একসঙ্গে থাকবার কথা ছিল না আমাদের, কোনো দিনই। তোমার-আমার লাল-নীল রঙের সংসারেরও কোনো কথা ছিল না। তোমার কফি তো আমার চা। তোমার রিকশা তো আমার পায়ে হাঁটা। তোমার উপন্যাস তো আমার কবিতা। তোমার সমুদ্র তো আমার অরণ্য। একসঙ্গে থাকতে চাইলে একটা মিল তো থাকা চাই। একই ছাদের নিচে থাকবার কথা ছিল না বলেই তুমি স্যুটকেস গোছালে প্রকাশ্যে আমার কোনো আপত্তি ছিল না। আমি নীরবে চলে গেলাম বারান্দায়। যখনই তুমি নামতে গেলে সিঁড়ি ভেঙে, তখনই আকাশ ভেঙে নামল লক্ষ্মীমন্ত অকালবৃষ্টি। ডিসেম্বরের শীতে এই বৃষ্টি ঝরার কোনো কথা ছিল না। যেমন কথা ছিল না আমাদের পুনরায় একসঙ্গে থেকে যাওয়ার। কিন্তু তুমি থেকে গেলে। তুমি কিচেনে গিয়ে চা বসালে। আজ কফি খেলে না। বারান্দায় এসে আমার পাশের চেয়ারটায় বসলে। আমি ফেলে দিলাম সিগারেট। একই ব্যালকনিতে আবার একসঙ্গে বসবার কথা ছিল না আমাদের। কিন্তু আমরা বসে রইলাম। কেউ কোনো কথা বললাম না অনেকক্ষণ। একই ছাদের নিচে, একই সংসারে থেকে গেলাম দুজনে।

ঋয়াণ, কেন্দুয়া, নেত্রকোনা

তোমার ফেরার অপেক্ষায় আছি

প্রিয় শিমু, কথা দিয়েছিলে জীবনভর আমার রবে। ইশ্! এক লহমায় যদি ফিরিয়ে আনতে পারতাম সেই কথাগুলো, অনুভূতিগুলো। বিশ্বাস করো, তোমার প্রথমবারের সেই আকুতি অনবরত কানে বাজত। সেদিন তুমি অনেক কান্নাকাটি করেছিলে। বুঝেছিলাম আমার সঙ্গে এভাবে নিয়মিত কথা বলতে থাকলে তোমার স্বপ্ন পূরণ হবে না। আমি কখনো চাইনি তোমার স্বপ্নগুলো দুমড়েমুচড়ে যাক। সব সময়ই একটা ফুরসত খুঁজেছি, কখন তোমাকে আমার থেকে ছুটি দিতে পারব। অনেকবার কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। কিছুদিন পর আবার আগের জায়গায় ফিরেছি। যাক, শেষমেশ সফলতা এল।

তোমার ফেরার অপেক্ষায় আছি

মনে মনে ভেবেছিলাম, তোমার এইচএসসি আর ভর্তি পরীক্ষার পর বিষয়টা তোমার কাছে খোলাসা করব। দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, তুমিও ফিরবে। সব তো তোমার জন্যই ছিল। জাহাঙ্গীরনগরের পরীক্ষার আগের দিন তোমার সঙ্গে কথা বলে সব উল্টো লাগল। কখনোই ভাবিনি এমন কিছু হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকেছ শুনে আবার আশায় বুক বাঁধলাম। লাইব্রেরি থেকে ফেরার পথে সেদিনকার সেই হুট করে দেখা হওয়াটা আমার কাছে ঠিক রূপকথার মতোই। কয়েকটা দিন যেন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। ঘোর কাটতে না কাটতেই তুমি উধাও! তোমার কাছ থেকে যতগুলো দিন পেয়েছিলাম, তা-ই আমার জন্য যথেষ্ট! এই সুখানুভূতিই তোমার স্মৃতিকে ফিকে হতে দেবে না।

তোমার অপেক্ষায় আছি।

আনিস