‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে,
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে
হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।’
হৃদয়ে যে গোপনে থাকে, হঠাৎ যদি তার সঙ্গে হয়ে যায় দেখা! প্রাক্তন যখন সামনে দাঁড়ায় আচমকা, ভেতরে তো তোলপাড় হবেই।
চোখে চোখে দেখাদেখি। ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা, মনের সঙ্গে মনের মিলন। তৃষিত হৃদয় একে অপরের জন্য হয়ে পড়ে ব্যাকুল। তোলপাড় করা ভালোবাসাও সময়ের ব্যবধানে অনেক সময় পূর্ণতা পায় না। নানা কারণে প্রেম মলিন হয়, ভেঙে যায় সম্পর্ক। দুজনের দুটি পথ হয়ে পড়ে আলাদা। জীবনের প্রয়োজনে ভাঙা মন নিয়ে নিজেদের মতো করে পথ চলে উভয়েই। মাঝেমধ্যে চকিত দেখা হতে পারে প্রাক্তনের সঙ্গে, ক্ষণিকের জন্য হলে হয়তো দ্রুত সামলেও নেওয়া যায়। কিন্তু প্রাক্তনের সঙ্গে যদি নিয়মিত দেখা হতে থাকে? কর্মসূত্রে যদি একই অফিসে কাটে সপ্তাহের পাঁচ থেকে ছয় দিন, তাহলে তা দুজনের জন্যই হতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সেই সময়ে দরকার পড়ে নিজেদের সামাল দেওয়ার। পরিণতি না পাওয়া সম্পর্ককে অতীত মনে করে পরিণত আচরণের দরকার হতে পারে এই সময়ে।
প্রেমের গল্প
মুমু আর নীলের (ছদ্মনাম) জীবনেও এমনটাই ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রণয় ছিল দুজনের মধ্যে। কিন্তু বিয়ে পর্যন্ত পৌঁছার আগেই সম্পর্কে ছেদ পড়ে। জীবনের প্রয়োজনে পরবর্তী সময়ে ভিন্ন ভিন্ন সঙ্গীর সঙ্গে সংসার পেতেছেন দুজনই। দুজনের পেশাই শিক্ষকতা। নীলের স্কুলে নতুন যে শিক্ষক বদলি হয়ে এসেছেন, তিনি আর কেউ নন মুমু। কয়েক বছরের ব্যবধানে হঠাৎ এই দেখা হওয়ায় দুজনের ভেতরেই আড়ষ্টতা। স্কুলের প্রথম দিনে পরিচিতি পর্ব ছাড়া বিশেষ কথাও বলেননি তারা। কিন্তু অস্বস্তি বাড়তে থাকে দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। কারণ, ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দেখা হওয়া ও কর্মক্ষেত্রে পুরোটা সময় কাটানোয় নানা কথাই মনে আসে। এ নিয়ে কিছুটা ভয়েও আছেন মুমু। ঠিক কতটা মিশবেন নীলের সঙ্গে? নীলের মনেও প্রশ্ন, কথাবার্তা কতটা বলব? একদম তো এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাহলে!
কী করবেন
কেমন হবে প্রাক্তন প্রেমিক কিন্তু বর্তমান সহকর্মীর সঙ্গে ব্যবহার, কথাবার্তা আর কর্মক্ষেত্রে পথচলা? অতীতের মধুর নয়তো তিক্ত স্মৃতি তো মাথাচাড়া দিতেই পারে। অন্য সহকর্মীরাও জেনে যেতে পারেন তাদের অতীত সম্পর্কের কথা। অশান্তি দেখা দিতে পারে বর্তমান ছন্দোবদ্ধ দাম্পত্য জীবনেও। তাই বুঝেশুনে পথ চলতে হবে এমন পরিস্থিতিতে। কীভাবে সহজ হবে এমন সহকর্মীর সঙ্গে প্রতিদিনের পথচলা, সে বিষয়ে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মো. জোবায়ের মিয়া বলেন, ‘প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে একে অন্যের সঙ্গে সহজ সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত। অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে আপনার যেমন সহজ, স্বাভাবিক, সুন্দর সম্পর্ক, ঠিক তেমন সম্পর্ক রেখে চলাটাই উচিত। একে অন্যকে দেখে মধুময় স্মৃতি স্মরণে এনে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়াই স্বাভাবিক; কিন্তু উভয়েরই উচিত আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা। নিজেদের সংযত রেখে পথচলা। যদি পুরোনো রাগ, বিরক্তি, কষ্ট বা তিক্ততা থেকে থাকে, সেটিও জনসম্মুখে প্রকাশ করা উচিত নয়। এসব মনে রেখে প্রাক্তনের সঙ্গে একেবারেই কথা বন্ধ রাখা যাবে না। অস্বাভাবিক আচরণও করা ঠিক হবে না, তাহলে এ নিয়ে অন্য সহকর্মীদের মধ্যে নানা কথা ও চটুল গল্পের উদ্রেগ হতে পারে; যা কিছুতেই কর্মক্ষেত্রে হওয়া শোভন নয়। এতে দাম্পত্যের পাশাপাশি দুজনের ক্যারিয়ারেও ঝামেলা বাড়তে পারে।’
সহকর্মীদের যেকোনো পরিকল্পনায় সে থাকবে ভেবে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার কোনো মানে হয় না। আড্ডা, দাওয়াত বা বেড়াতে যাওয়াসহ সব ধরনের সামাজিক আচার–অনুষ্ঠানে দুজনই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করা উচিত। তবে নিজ নিজ সংসারকে সামলে ও ভুল–বোঝাবুঝি এড়িয়ে সেসব অনুষ্ঠানে যাওয়া ভালো। নইলে বর্তমান সংসারে অবাঞ্ছিত ভুল–বোঝাবুঝি জীবনকে বিষিয়ে তুলতে পারে। যেকোনো পক্ষের সঙ্গী যদি সন্দেহ করে থাকেন, তাহলে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলুন। সমাধানের পথ খুঁজুন স্বামী বা স্ত্রীকে পাশে নিয়ে। তবুও যদি সন্দেহের জট পাকিয়ে যায়, তবে একেবারেই শেষ পর্যায়ে চাকরি পরিবর্তনের কথা ভাবা যেতে পারে। সুযোগ থাকলে বদলিও নিতে পারেন। তবে তার আগপর্যন্ত সঙ্গী যাতে ভুল না বোঝেন, সেই চেষ্টা করে যেতে হবে।
হঠাৎ দেখা হওয়ার পর প্রাক্তন দুজনের মধ্যে একজন যদি বেশি কাছে আসার চেষ্টা করেন, ইচ্ছা না থাকলে অন্যজনের তাকে সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। অফিসের মধ্যে একান্তে দুজনে কথা না বলে অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে বসে স্বাভাবিক আড্ডা দিন। সহকর্মীদের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে পরামর্শ না চাওয়াই ভালো।