সন্তান পালন

দুজনে মিলে সন্তানের দেখভাল

সংসারের সব কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করার মনোভাব থাকা উচিত। ছবি: অধুনা
সংসারের সব কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করার মনোভাব থাকা উচিত। ছবি: অধুনা

একজন শিশু যখন পরিবারে আসে, তখন সবার নজর ও ব্যস্ততা থাকে ছোট্ট ওই মানুষটিকে ঘিরেই। পরিবারের সবাই দেখভালের দায়িত্বটি নিলেও, শিশুর কিন্তু সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার মা-বাবাকে। কিন্তু আমাদের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, শিশুর দেখভালের দায়িত্ব পড়ে মায়ের ওপর। শিশুর মা-বাবা দুজনেই যদি কর্মজীবী হন, তবু শিশুকে বড় করার দায়িত্ব মাকে একাই নিতে হয়!
কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন, মায়ের পাশাপাশি বাবারও দায়িত্ব রয়েছে তাঁর সন্তান ও পরিবারের প্রতি। দিনশেষে দুজনেই তো কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরছেন, তারপরও কেন শুধু একজনের ওপর শিশুর দায়ভার বর্তাবে? দুজনেই না-হয় একে-অপরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন!

দায়িত্ব কি শুধু মায়ের একার?
যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে, যথেষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ৪৩ শতাংশ নারী মা হওয়ার পর তাঁদের পেশাজীবন ছেড়ে দেন, শুধু শিশুর দেখভাল করার জন্য। এই পরিস্থিতি আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও একই রকম। এমনকি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটি তিন থেকে চার মাস হওয়ায় একজন নারীকে এ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
শুধু শিক্ষিত নারীর ক্ষেত্রেই নয়, স্বল্প শিক্ষিত কিংবা শ্রমজীবী নারীর ক্ষেত্রেও এমনটি দেখা যায়। নুসরাত জাহান বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, শিশুর প্রয়োজন মা-বাবা দুজনকেই। একটি চারাগাছের বেড়ে ওঠার জন্য যেমন আলো-পানি উভয়েরই দরকার, তেমনি একটি মানবশিশুর ক্ষেত্রেও মা-বাবা দুজনকেই তার প্রয়োজন। শিশুর কিছু চাহিদা থাকে যা মা পূরণ করতে পারে, আবার এমন কিছু চাহিদা থাকে, যা একান্তই বাবাই পারে।

নিজ পরিবারের প্রতি সহযোগিতা
মাতৃত্বের সময়টুকুর পর হরমোনজনিত কারণে এমনিতেই একজন নারীর মানসিক বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা যায়। তার থেকেও বড় বিষয়, তাঁর দায়িত্ব এসে পড়ে সন্তানের প্রতি। শিশু বড় হলেও তার স্কুল, লেখাপড়ার বিভিন্ন দায়িত্ব। কৈশোর পর্যন্ত তার সঠিক পরিচর্যা দরকার। আর এটি একজন কর্মজীবী নারীর একার পক্ষে বেশ গুরুদায়িত্ব হয়ে পড়ে।
তাই নিজ পরিবারের প্রতি আপনার সহযোগিতাই সবচেয়ে বেশি দরকার।
নতুন মায়েদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানসিকভাবে সহযোগিতা করা। আর এ কাজটি একজন স্বামী কিংবা বাবা হিসেবে আপনি সহজেই করতে পারেন। স্ত্রীর সুবিধা-অসুবিধাগুলো মাথায় রেখে তাঁকে সহযোগিতা করুন।
সুইডেনসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে কিন্তু মাতৃত্বকালীন ছুটির পাশাপাশি পিতৃত্বকালীন ছুটিও দেওয়া হয়। আমাদের দেশের কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানেও পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হয়। সেই সময়টুকু স্ত্রী ও সন্তানের জন্যই বরাদ্দ রাখুন। এ ছাড়া প্রয়োজনে কর্মস্থলের সঙ্গে কথা বলে কিছু সময় ছুটি নিজেও নিতে পারেন।
সন্তান বড় হয়ে গেলেও বাবার দায়িত্ব থাকে। ঘরের কাজগুলো স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ভাগ করে নিন। বাচ্চাকে স্কুল, কোচিং কিংবা কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কাজও ভাগ করে নিতে পারেন। শুধু নারীর পরিবার নয়, একজন পুরুষের পরিবারেরও দায়িত্ব থাকে শিশুর প্রতি। আর এই দায়িত্বটি মনে করিয়ে দেওয়ার কাজ কিন্তু আপনারই।
স্ত্রী ও সন্তানকে আলাদা সময় দিন। কাজের চাপে ব্যস্ত এই নগরীতে একান্তেই কিছু সময় প্রয়োজন। তাই কিছুটা সময় বরাদ্দ রাখুন আপনার এই পরিবারের জন্য।
শুধু বিশেষ কোনো দিবস নয়, সপ্তাহের প্রতিটি দিনই ঘর ও সন্তানের দায়দায়িত্ব পালন করুন। কেননা কাজের ক্ষেত্রে কোনো লিঙ্গবৈষম্য নেই।
খুব বেশি কিছু নয় কিন্তু, আপনার প্রতিদিনের এই সহযোগিতাগুলোই কিন্তু দিনশেষে পরিবারের কাছে অনেক বড়।