পাঠকের প্রশ্ন: মন

ছেলেটি জানায়, সে শারীরিকভাবে অক্ষম

পাঠকের কাছ থেকে মনোজগৎ, ব্যক্তিজীবন ও সন্তান পালনের মতো সমস্যা নিয়ে ‘পাঠকের প্রশ্ন’ বিভাগে নানা রকমের প্রশ্ন এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম নির্বাচিত একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার

মেহতাব খানম
মেহতাব খানম

প্রশ্ন: আমার বয়স ২৭ বছর। চার বছর ধরে একটি ছেলের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক। তাঁর বয়স ৩০ বছর। সে শারীরিকভাবে অক্ষম, তাই আমাকে বিয়ে করতে অনিচ্ছুক। আমি অনেকবার বলেছি, আমি এই সমস্যা মানতে রাজি আছি। কিন্তু সে বলে এটা আমার আবেগ। তাঁর প্রতি আমার ভীষণ মায়া জন্মে গেছে। ইদানীং সে আর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতেও চায় না। আমার কী করা উচিত?

আমি তাঁকে ভুলতেও পারছি না। আমি খুব মানসিক কষ্টে ভুগছি। যদি তাঁকে বিয়ে না করি, তাহলে আমার কী করা উচিত?

নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক।

উত্তর: ছেলেটির সঙ্গে দীর্ঘ চার বছর ধরে তোমার সম্পর্ক চলছে এবং এ ধরনের ভালোবাসার সম্পর্কের পরিণতি হিসেবে বিয়েটা যে ঘটবে, সেটা ধরে নেওয়া খুব স্বাভাবিক। তবে আমার মনে যে প্রশ্ন কাজ করছে তা হলো, তুমি কি প্রথম থেকেই পরিষ্কারভাবে জানার সুযোগ পেয়েছিলে যে ছেলেটির শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অক্ষমতা রয়েছে? নাকি বিয়ের প্রসঙ্গটি সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে বলে সে তার অক্ষমতার বিষয়টি তুলে ধরেছে?

দীর্ঘদিন একটি সম্পর্কে থাকলে আমাদের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা অনেক বেড়ে যায়। সে কারণেই তুমি বিবাহিত অবস্থায় শরীরের সম্পর্কটি বাদ দিয়েও সুখী থাকতে পারবে বলে মনে করছ। ছেলেটি মনে হয় ভাবছে যে বিয়ের পর তোমার ‘মা’ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক এবং সেই সঙ্গে শারীরিক চাহিদা মেটানোর ইচ্ছেও হতে পারে। এই মুহূর্তে তোমার মনে হচ্ছে, ব্যাপারটি না ঘটলেও তুমি তেমন কষ্ট পাবে না, কারণ ওকে শুধু মানসিকভাবে কাছে পেলেই সন্তুষ্ট থাকতে পারবে। যেহেতু এখনো তুমি বাস্তবের মুখোমুখি হওনি, তাই ভাবতে পারছ যে শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াও বিবাহিত জীবন চালিয়ে নেওয়া সম্ভব।

বিয়ের পর দৈনন্দিন জীবনের চাওয়া-পাওয়াগুলো গুরুত্ব পেতে শুরু করে বলে সম্পর্কের ধরনও বদলাতে থাকে। দুজনের পরিবারের সদস্যরাও অনেক সময় নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে থাকেন বলে কিছু মান–অভিমান ও ভুল–বোঝাবুঝির সূত্রপাত ঘটে। এর ফলে অনেক সময় সম্পর্কের মধ্যে নিজেদের অজান্তেই কিছু দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

প্রেমের সম্পর্ক চলাকালে আমরা যত আন্তরিকভাবে সেটিকে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করি, পরবর্তী সময়ে সেটা আর খেয়াল করা হয় না। দেখা যায় যে দ্বন্দ্ব নিরসনের ক্ষেত্রে পারস্পরিক শারীরিক ও মানসিক নির্ভরশীলতা একটি অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে থাকে।

ছেলেটির প্রতি তোমার যেহেতু অনেক মায়া ও ভালোবাসা রয়েছে, তুমি তো ওর একজন অত্যন্ত ভালো বন্ধু হিসেবেও ওকে এ ব্যাপারে সহায়তা করতে পারো। একজন শুভানুধ্যায়ীর ভূমিকা থেকে তুমি ওকে প্রশ্ন করে জেনে নিতে পারো, সে কখনো এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য শারীরিক বা মানসিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা সাইকোথেরাপিস্টের কাছে সহায়তা গ্রহণ করেছে কি না। এই অসুবিধা সাধারণত যেসব শারীরিক কারণে হতে পারে তা হলো—উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা, ডায়াবেটিস, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, অতিরিক্ত ওজন, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, মদ্যপান, ধূমপান, মাদকাসক্তি ইত্যাদি। মানসিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, নিজের ওপর আস্থাহীনতা, মানসিক রোগের কারণে ওষুধ সেবন, শৈশবে যৌন হয়রানির শিকার হওয়া ইত্যাদি। এই অক্ষমতার জন্য ওর মনেও নিশ্চয়ই হতাশা তৈরি হয়েছে।

তুমি ছেলেটির প্রতি এবং ওর মতামতকে আন্তরিক শ্রদ্ধা দেখিয়ে ওকে অনুরোধ জানাতে পারো সে যেন কিছু শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে নেয়। এ ছাড়া মানসিকভাবে ভালো থাকার জন্য ও যদি কোনো মানসম্মত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাইকোথেরাপিস্টের কাছে বেশ কিছু সেশন নেয় তাহলে ভালো হয়। তোমাদের বিয়ে হওয়ার সঙ্গে ওর চিকিৎসা গ্রহণের বিষয়টিকে যুক্ত না করেও সে কিন্তু নিজে ভালো থাকার জন্য এসব সহায়তার দ্বারস্থ হতে পারে।