দেশে বাড়ছে ‘রেডি টু কুক’ খাবারের ব্যবসা

বাড়িতে হঠাৎ অতিথি এলে ঝটপট আপ্যায়নের উপায় যেন হিমায়িত বা ফ্রোজেন খাবার।
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ব্যস্ত জীবন। নগরে সবাই ছুটছে যেন। রোজ রোজ পছন্দের খাবার বাসায় তৈরি করা এখন বেশ ঝক্কিরই কাজ। বাড়িতে হঠাৎ অতিথি এলে ঝটপট আপ্যায়নের উপায় যেন হিমায়িত বা ফ্রোজেন খাবার। তাই জনপ্রিয় হচ্ছে হিমায়িত ‘রেডি টু কুক’ খাবার। আর সেগুলো দেশেই তৈরি। 

দেশি ব্র্যান্ডের তৈরি মুখরোচক প্রায় সব খাবার এখন বাজারে পাওয়া যায়। মূলত চটজলদি জলখাবার হিসেবে চিকেন উইংস, কাবাব, সসেজ, মিটবল, চিকেন ফিঙ্গার, চিকেন ললিপপ, নাগেটস থেকে শুরু করে নানা রকম মাংস, মাছ ও সবজির তৈরি রোল, শিঙাড়া, সমুচা, সেই সঙ্গে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস, পরোটা, রুটি, পিৎজা, মাছের কাটলেট, টেম্পুরাসহ মুখরোচক নানা খাদ্যপণ্য পাওয়া যায়। ডিপ ফ্রিজ থেকে বের করে হালকা ভেজে  নিলেই অথবা এয়ার ফ্রায়ারে দিলেই দ্রুত খাওয়ার উপযোগী হয় হিমায়িত খাবার।

বাজার ঘুরে দেখা গেল, দেশি হিমায়িত প্যাকেটজাত খাবারের ব্যবসাকে বেশ পোক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছে  দেশি ব্র্যান্ড ও উদ্যোক্তারা। দেশের ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে কাজী ফার্মস, গোল্ডেন হার্ভেস্ট, এজি ফুড, ঝটপট, প্যারাগন, কান্ট্রি ন্যাচারাল, মাছ সমাচার, বেঙ্গল মিট ইত্যাদি। পাশাপাশি অনলাইনে আছে অসংখ্য উদ্যোগ। ব্র্যান্ডগুলো ফ্রোজেন খাবার বেশ নিখুঁতভাবেই মোড়কজাত করে থাকে, যাতে কোনোভাবেই বাতাস চলাচলের সুযোগ না থাকে।

জনপ্রিয় হচ্ছে হিমায়িত ‘রেডি টু কুক’ খাবার

ব্র্যান্ডভেদে ফ্রোজেন খাবারের দাম পরিমাণ (পিস) বা ওজনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়ে থাকে। এই সময়ে চিকেন সসেজের চাহিদা বেশ। ২৭০ থেকে ৩৫০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটর দাম ১৩৭ থেকে ৩১০ টাকা। প্লেইন ও স্মোকি—দুই ধরনের সসেজ পাওয়া যায়। বিফ সসেজের দাম ৪০০ টাকার মধ্যে। ২৫০ থেকে ৫০০ গ্রামের প্যাকেটে ১২ থেকে ১৫টি চিকেন সমুচার দাম ২০৬ থেকে ৪৫০ টাকা। চিকেন ছোট শিঙাড়া ১২০ থেকে ২০০ টাকা আর সবজি শিঙাড়ার দাম ১২৫ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে।

২৫০ গ্রাম শামি কাবাবের দাম ২৩০ থেকে ২৭০ টাকা। শিশুদের মুখরোচক খাবারের মধ্যে নাগেটস অন্যতম। ব্র্যান্ডভেদে ২৫০ থেকে ৯৫০ গ্রাম ‘রেডি টু কুক’ চিকেন নাগেটসের দাম ১৮৫ থেকে ৬৫০ টাকা, প্যাকেটে ১২ থেকে ২০টি পর্যন্ত নাগেটস থাকে। মিটবলের দাম ওজন ও মানের ভিত্তিতে ১৬৭ থেকে ৩০০ টাকা। চিকেন পপকর্নের দাম ২৬০ থেকে ৩১০ টাকা।

সব বয়সী মানুষের অন্যতম পছন্দের খাবার ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস ২৫০ গ্রাম থেকে ১ কেজির প্যাকেট মিলছে ৮৫ থেকে ৩০০ টাকায়। অনেকেরই প্রিয় জলখাবার হলো স্প্রিং রোল। সবজি ও চিকেন রোল বেশ সহজলভ্য। হিমায়িত মাংসের রোলের দাম ১৯০ থেকে ২৩৫ টাকা (১৫ থেকে ২৫টি)। ৪০০ গ্রাম সবজির রোলের প্যাকেটের দাম ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। এ ছাড়া প্রায় সব দেশি প্রতিষ্ঠানেরই রয়েছে হিমায়িত চিকেন স্ট্রিপস, উইংস, চপ মোমো, ললিপপ, কোপ্তা, বার্গারের প্যাটি ইত্যাদি।

হিমায়িত প্যাকেটজাত খাবারের ব্যবসাকে বেশ পোক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছে দেশি ব্র্যান্ড ও উদ্যোক্তারা।

হিমায়িত রুটি, পুরি আর পরোটারও বাহার রয়েছে হিমায়িত খাবারে। ৪০০ থেকে ১২০০ গ্রাম হিমায়িত রুটির প্যাকেটের দাম ১২০ থেকে ২৩৫ টাকা। ১০ থেকে ২০টি রুটি থাকে। রুটির মধ্যে গমের, চালের আটার, লাল আটার ও মিশ্র শস্যের রুটি রয়েছে। আরও পরোটা। সাধারণ পরোটা, কালিজিরার পরোটা, কম চর্বির পরোটা, কিমা পরোটা ইত্যাদি পাওয়া যায়। ১০ থেকে ২০টি পরোটার প্যাকেটের মূল্য ১১০ থেকে ৪০০ টাকা। ৪৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম হিমায়িত ডালপুরির দাম ১২৫ থেকে ১৫০ টাকা। একই পরিমাণের আলুপুরি পাওয়া যাচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে।

মাছের হিমায়িত খাবারও আছে অনেক ধরনের। চিংড়ির রোল, সমুচা, চিংড়ি পাকোড়া, কেক ইত্যাদির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ১৮০ টাকা থেকে শুরু করে চিংড়ি মাছের আকার আর পরিমাণ অনুযায়ী ৪০০ টাকা অবধি দাম হয় এসবের। সিফুড মিক্স ফিশবল, চিজ ফিশবল, কাটলেট, ফিশ কেক, টুনা কাবাব, ফিশ ফিঙ্গার, লইট্টা, চিংড়ি, কোরালসহ বিভিন্ন মাছ দিয়ে তৈরি টেম্পুরা, মাছের তৈরি কোপ্তা—সবই পাওয়া যাচ্ছে দেশি ব্র্যান্ডে। দাম শুরু হয় ৩০০ টাকা থেকে। সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা পর্যন্ত প্যাকেটের দাম হয়ে থাকে। 

বেশির ভাগ দেশি ব্র্যান্ডের হিমায়িত খাবার পাওয়া যায় তাদের বিভিন্ন শাখায়। খুচরা দোকান ও সুপারশপ ছাড়াও অনলাইনে নিজস্ব ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটে বিক্রি হয় এগুলো। 

কেনার আগে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ঠিকভাবে দেখে কিনুন।

এজি অ্যাগ্রো ফুডের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খাদ্যদ্রব্য তৈরি থেকে শুরু করে এর পুষ্টিমান বজায় রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় তারা। সুপারশপ ও খুচরা দোকানে তারা পণ্য বিক্রি করে। স্থানীয় বাজার ছাড়াও এজি অ্যাগ্রো কানাডা, কোরিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ ১১টি দেশে হিমায়িত খাবার রপ্তানি করছে।

হিমায়িত খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা গেলে বহুদিন ভালো থাকে। দেশি ব্র্যান্ড মাছ সমাচারের অন্যতম স্বত্বাধিকারী তানিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কখনো খাবারের মানের সঙ্গে আপস করি না। টাটকা সামুদ্রিক মাছ দিয়ে তৈরি হয় খাবার। কোনো রকম কৃত্রিম প্রিভারভেটিভস বা ফ্লেবার ব্যবহৃত হয় না। সংরক্ষণের জন্য লেবুর রস ব্যবহার করা হয়।’

কেনার আগে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ঠিকভাবে দেখে কিনুন। চাহিদা যেমন বাড়ছে, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হিমায়িত খাদ্য তৈরির দেশি ব্র্যান্ড ও উদ্যোক্তার সংখ্যা।