ফ্রিজ ছাড়া এখনকার দিনে আমাদের জীবন প্রায় অচল। তবে সঠিক নিয়মে সংরক্ষণ না করলে ফ্রিজে রাখা খাবারের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি বিষাক্তও হয়ে যেতে পারে খাবার। ফ্রিজে কাঁচা খাবার রাখার পদ্ধতি একরকম। আর রান্না করা খাবার সংরক্ষণের পদ্ধতি অন্য রকম। অনেকেরই জানা নেই যে রান্না করা খাবার কত দিন পর্যন্ত ফ্রিজে রাখা যায়। চলুন, আকিজ কলেজ অব হোম ইকোনমিকসের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাফাত ফারাহ রশীদের কাছ থেকে জেনে নিই, কোন খাবার কত দিন পর্যন্ত ফ্রিজে সংরক্ষণ করে খাওয়া যায়।
আমাদের সবারই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভাত থাকে। অনেকেই বেঁচে যাওয়া ভাত ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখেন। পরে আবার তা বের করে গরম করে খান। ভাতের মধ্যে স্টার্চের ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত থাকে। তাই রান্না করার ১ দিনের মধ্যেই ভাত খেয়ে ফেলা উচিত।
ভাতের মতো রুটিও বেঁচে গেলে অনেকেই ফ্রিজে রাখেন। রুটিও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খেয়ে ফেলতে হবে।
কাঁচা ফল ও সবজি দিয়ে তৈরি সালাদ বেশি হয়ে গেলে অনেকেই ফ্রিজে রেখে দেন। কাঁচা সালাদ ফ্রিজে রাখলে ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। তাই কাটার এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে সালাদ খেয়ে ফেললে ভালো।
পাস্তা যদি চিজ ও সস দিয়ে তৈরি করা হয়, তাহলে কখনো ফ্রিজে রাখবেন না। পাস্তা সেদ্ধ করে আলাদাভাবে ফ্রিজে রাখুন। রান্না করা পাস্তা ফ্রিজে রাখলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বেশ কয়েক দিনের জন্য একবারে ডাল রান্না করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখেন কমবেশি সবাই। সে ক্ষেত্রে বাতাস ঢুকতে পারবে না, এমন বাক্সে ডাল সংরক্ষণ করতে হবে। পরবর্তী সময় বের করলেও ঠিক যতটুকু খাবেন ততটুকুই গরম করতে হবে। বাকিটা আবারও তুলে রাখুন ফ্রিজে। তিন দিন পর্যন্ত ডাল ফ্রিজে রাখা যাবে।
সবজির তরকারি তিন দিনের বেশি ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। চেষ্টা করতে হবে দুই দিনেই যেন শেষ হয়ে যায়।
মাছ-মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই এসব খাবারও রান্না করা অবস্থায় এক থেকে দুই দিনের বেশি ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। তবে অনেকে রান্না করা মাছ-মাংস এক বেলার মতো করে আলাদা আলাদা বাক্সে রাখেন। এভাবে রাখা খাবারও সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মধ্যে খেয়ে ফেলা ভালো।
ডিপ ফ্রিজ বা ফ্রিজে রাখা খাবার
ডিপ ফ্রিজে সাধারণত কাঁচা মাছ বা মাংস রাখা হয়। ফ্রিজের এই অংশের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রির নিচে রাখা হয়। তাই ডিপ ফ্রিজে খাবারের পুষ্টিমান অনেকটাই বজায় থাকে।
মাছ ভালো করে ধুয়ে, টুকরা করে যতটুকু একবারে রান্না করা হবে, ততটুকু বায়ুরোধী প্যাকেটে রেখে দিতে হবে। এতে স্বাদ ও পুষ্টিমান বজায় থাকবে অনেকটাই। এভাবে ফ্রিজে রাখা যাবে এক থেকে দুই মাস।
মুরগি ভালো করে পরিষ্কার করে রাখলে ছয় মাস পর্যন্ত ফ্রিজে রাখা যায়। তবে এক মাসের মধ্যেই খেয়ে ফেলা ভালো।
গরু বা খাসির মাংস না ধুয়ে রক্তটা ভালো করে মুছে নিয়ে ফ্রিজে রাখতে হবে। এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। তবে ছয় মাসের মধ্যে খেয়ে ফেলাই ভালো।
অনেকেই শীতের সবজি সারা বছরের জন্য ফ্রিজে সংরক্ষণ করি। হালকা ভাপিয়ে নিয়ে বায়ুরোধী বক্সে বা প্যাকেটে রাখলে বছরখানেক ভালো থাকলেও পুষ্টিমান এবং স্বাদ কিছুটা নষ্ট হবে।
ফ্রিজে খাবার ভালো রাখার উপায়
রন্ধনবিশেষজ্ঞ সিতারা ফেরদৌস শেখালেন ফ্রিজে খাবার ভালো রাখার কিছু উপায়-
খাবার ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে অবশ্যই বায়ুরোধী পাত্র বা প্যাকেট ব্যবহান করুন।
খাবার ওপরের তাকগুলোয় রাখুন। কারণ, সেখানে খাবার বেশি বাতাস পায় এবং ঠান্ডা থাকে।
প্রথমে যে খাবারগুলো রাখা হয়েছে, সেগুলো আগে খেয়ে নিন।
কাঁচা খাবার এবং রান্না করা খাবার অবশ্যই আলাদা তাকে রাখতে হবে।
ফ্রিজের দরজা খোলার আগে ঘরের ফ্যান বন্ধ করে নিন। ফ্যানের বাতাস ফ্রিজের ভেতরে ঢুকে খাবারে দ্রুত ব্যাকটেরিয়া তৈরি করতে সহায়তা করে।
ফ্রিজের দরজা যদি বারবার খোলা বন্ধ করা হয়, তাহলে খাবার দ্রুত নষ্ট হবে।
রেফ্রিজারেটরের মান বা অবস্থার ওপরও নির্ভর করে রেফ্রিজারেটরে খাবার কত দিন ভালো থাকবে। ফ্রিজের কম্প্রেশর যদি ভালো না থাকে, তাহলে খাবার দ্রুত নষ্ট হবে।
ফ্রিজে খাবার সব সময় ঢেকে রাখবেন।
ফ্রিজে সব সময় এক টুকরা কাটা লেবু রাখলে ও মাঝেমধ্যে বেকিং সোডা মেশানো পানি দিয়ে ফ্রিজ মুছে নিলে এক খাবারের গন্ধ অন্য খাবারে প্রবেশ করবে না। এ কারণে ফ্রিজে দুর্গন্ধ হবে না।