ডায়েট মানতে গিয়ে বারবার ক্ষুধা পায়? জেনে নিন সমাধান

ওজন কমাতে নির্দিষ্ট কোনো ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেন অনেকেই। ক্যালরি গ্রহণ যাতে সীমিত থাকে, সেটাই থাকে মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এই নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে গিয়ে মুশকিলেও পড়তে হতে পারে। হয়তো এক বেলা নির্দিষ্ট তালিকা মেনেই খাবার খেয়েছেন, ক্যালরির হিসাব মেনে আবার আরেক বেলায় কী খাবেন, তালিকায় সেটিও রয়েছে। কিন্তু দুই বেলার মাঝে হুট করে ক্ষুধা পেয়ে গেল। বারবার এমন হলে কি আর ডায়েট মেনে চলা যায়?

খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হলো ইচ্ছাশক্তি। খেয়ালখুশিমতো খাওয়ার ইচ্ছাটাকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি থাকা চাই। তবে ডায়েট করা মানে কিন্তু না খেয়ে থাকা নয়। বরং সময়মতো প্রতি বেলায় খাবার খাওয়াটা খুব জরুরি। দুই বেলার খাবারের মাঝে ক্ষুধা পেলে কী করবেন, সেটিও জানা থাকা চাই। তবেই নিয়ন্ত্রণে থাকবে ওজন। এমনটাই বলছিলেন ঢাকার আজিমপুরে অবস্থিত গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান।

ওজন কমাতে চাইলে খেতে হবে সেভাবেই

সকালে ‘রাজা’র মতো খাওয়া

‘সকালে খেতে ইচ্ছা করে না’ কিংবা ‘ব্যস্ততার জন্য নাশতা করার সময় হয় না’—এসব অজুহাত চলবে না। বরং সকালে খেতে হবে ভারী নাশতা। নাশতা খেতে দেরিও করা যাবে না। খালি পেটে অফিসে গিয়ে বেলা ১১টা নাগাদ শিঙাড়া-পুরি-কেক দিয়ে নাশতা সারার অভ্যাস থাকলে বাদ দিতে হবে। নাশতায় ডিম আর সবজি রাখুন। সবজি মানে কিন্তু আলুভাজি নয়। আলুর তরকারিও নয়। ওজন কমাতে চাইলে আলু কমিয়ে দিন। লাল আটার রুটি খেতে পারেন। আমিষজাতীয় খাবার, শাকসবজি আর লাল আটার রুটি খেলে দীর্ঘ সময় ক্ষুধা লাগে না।

সকালে খেতে হবে ভারী নাশতা

দুই বেলার মাঝে

সকালে ভালোভাবে নাশতা করে বেরোলেও অবশ্য দুপুরের খাবারের আগে কিছুটা ক্ষুধা লাগতে পারে। এই সময় খেতে পারেন ফল কিংবা নানা ধরনের বাদাম। সঙ্গে থাকতে পারে চিনি ছাড়া রং–চা।

বিকেলেও ফল বা বাদাম খাওয়া যেতে পারে। একটা খেজুরও যথেষ্ট। চাইলে চিনি ছাড়া রং–চা-ও খেতে পারেন। চায়ে ভিজিয়ে বিস্কুট খেতে চান? নাহ। সেটি চলবে না। বিস্কুট নয়, অল্প কয়েকটি ক্র্যাকার খেতে পারেন।

বাইরে থেকে ফিরেই ক্ষুধা পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তবে ফেরার পর এমন পানীয় খেতে পারেন, যা খেলে সতেজ লাগে। লেবু বা পুদিনাপাতা দিয়ে তৈরি পানীয় কিংবা তেঁতুল আর জিরা দিয়ে বানানো পানীয় খেতে পারেন। পানীয় বানাতে জিরা টেলে গুঁড়া করে নিন। ফল বা ফলের রসও খাওয়া যায়। তবে যে পানীয়ই খাওয়া হোক, তা যেন হয় চিনি ছাড়া।

দুপুরের আমিষ

ডায়েট করতে গিয়ে বিকেলের দিকে ক্ষুধা লেগে যাচ্ছে প্রায়ই? দুপুরে নাহয় এক টুকরার জায়গায় দুই টুকরা মাছ খেলেন। ডালের পরিমাণও বাড়াতে পারেন। শাকপাতাও খান বেশি করে। অবশ্যই কাঁচা সবজির সালাদ খাবেন। তাহলে সহজে ক্ষুধা লাগবে না। আর খাওয়া সেরে ফেলুন সময়ের মধ্যেই।

খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করে ফেলুন।

রাতের বিধি

রাতে না খেয়ে থাকবেন না। রাতের খাবার খেতেও দেরি করবেন না। খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করে ফেলুন। এরপর অন্য কিছুতে মনোনিবেশ করুন। বই পড়া, ছবি আঁকা, গান শোনা, আপনজনেদের সঙ্গে গল্প করা, ছোটদের পড়া দেখিয়ে দেওয়া—কত কীই তো করার আছে। অলস বসে থেকে মুঠোফোন স্ক্রল করবেন না। রাত জাগবেন না।

খেয়াল রাখুন

আপনি কেন ওজন কমাতে চান, সেই বিষয়ে নিজের কাছে স্বচ্ছ থাকুন। অন্যের কটূক্তির কারণে বাধ্য হয়ে ডায়েট নিয়ন্ত্রণ করলে কিংবা যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে হুজুগে পড়ে ওজন কমাতে গেলে খুব একটা লাভ হয় না। ‘আজকে একটু খেলামই না হয়, দুদিন পর ঠিকঠাক ব্যায়াম করে ওজন কমিয়ে ফেলব’—এ ধরনের ভাবনাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। বরং সুস্থতার জন্য আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠুন।

কাঁচা সবজির সালাদ খাবেন।

বারবার ক্ষুধা লাগার প্রবণতা দেখা দিলে প্রতি বেলাতেই আমিষজাতীয় খাবারের পরিমাণ একটু বাড়িয়ে নিতে পারেন। শর্করাজাতীয় খাবার, যেমন ভাত, রুটি, আলু, মুড়ি বা চিড়ার মতো খাবারের পরিমাণ বাড়ানো যাবে না।

খাবারের সময় হওয়ার আগেই ক্ষুধা পেয়ে গেলে পানসে স্বাদের মৌসুমি ফল খেতে পারেন যেকোনো বেলাতেই।

মন ভালো রাখতে চেষ্টা করুন। মনের সমস্যায়ও খাওয়া বেশি হয়ে যেতে পার