দেশভাগের আগে, কলকাতা থেকে ঢাকা যেতে হলে প্রথমে রেলপথে শিয়ালদহ থেকে গোয়ালন্দ পৌঁছাতে হতো, রেলপথের এখানেই শেষ। গোয়ালন্দ তখন পদ্মা ও যমুনার সংযোগস্থল। সেখান থেকে জলপথে স্টিমারে করে সারা রাত ধরে যাত্রা করে যেতে হতো ঢাকার সন্নিকটে নারায়ণগঞ্জ। বাদবাকি পথটুকু স্থলপথে। এই রাতভর যাত্রায় মাল্লারা স্টিমারেই যাত্রীদের জন্য রান্না করতেন অনবদ্য এক মুরগির ঝোল। ধোঁয়া ওঠা ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করা হতো অতি কম উপকরণে রান্না করা অনবদ্য সুস্বাদু সে পদ। হারিয়ে যেতে বসা রান্নার সেই পদই গোয়ালন্দ স্টিমার চিকেন কারি। সুস্বাদু সেই খাবারের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন যাত্রীরা। এই রান্নার গোপন উপকরণ ছিল চিংড়ির শুঁটকিবাটা, নিমেষে যা সে ঝোলকে নিয়ে যেত এক অন্য পর্যায়ে। এটি ছিল বার্মা-চট্টগ্রাম সীমান্ত এলাকার মগদের প্রভাব। চিংড়ির শুঁটকির অভাব হলে তাজা চিংড়িবাটাও ব্যবহৃত হতো। এ রান্না করে দেখুন একবার বাড়িতে। ফিরে যান ইতিহাসে।
উপকরণ: মুরগির লেগ পিস ৫০০ গ্রাম, আলু ২টি, পেঁয়াজকুচি ২টি, কাঁচা মরিচ ৪টি, শুকনা মরিচ ৩টি, চিনি ১ চা–চামচ, চিংড়ি ৩–৪টি, আদা-রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ, এলাচি, লবঙ্গ, দারুচিনি ৩টি করে, হলুদগুঁড়া ১ চা–চামচ, লাল মরিচগুঁড়া ১ চা–চামচ, কাশ্মীরি মরিচগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, শর্ষের তেল ১ কাপ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: একটু পানি দিয়ে চিংড়িগুলো প্রথমে মিহি করে বেটে রাখতে হবে। এখন মুরগিতে পেঁয়াজকুচি, আদা–রসুনবাটা, শুকনা মরিচ, হলুদ-মরিচগুঁড়া, কাশ্মীরি মরিচগুঁড়া, লবণ, কাটা আলু, কাঁচা মরিচ, চিংড়িবাটা আর শর্ষের তেল দিয়ে ভালোমতো মাখিয়ে এক ঘণ্টা ঢেকে রেখে দিন। কড়াইয়ে একটু শর্ষের তেল গরম করে গরমমসলাটুকু দিয়ে নাড়তে হবে। তারপর মাখিয়ে রাখা মুরগিগুলো দিয়ে ভালোমতো মিশিয়ে নিতে হবে। এই রান্না কম আঁচে হবে। মাঝেমধ্যে ঢাকনা খুলে নাড়তে হবে। কিছুক্ষণ পর অল্প পানি যোগ করে নাড়ুন। রান্না করতে করতে তেল ওপরে চলে এলে ১ চামচ চিনি দিয়ে চুলা থেকে নামিয়ে নিন।