শিশুর বৃদ্ধির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে বংশগতি ধারা বা জিন। তবে এর সঙ্গে ডায়েটেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত ওজন, উচ্চতা, বিএমআইয়ের তারতম্যের জন্য জেনেটিকস বা বংশগতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে প্রাক্-বয়ঃসন্ধিকাল এবং বয়ঃসন্ধিকালে শিশুর উচ্চতার ওপর সুষম খাবারও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের ভেতর এই পরিবর্তন আরও ভালোভাবে বোঝা যায়।
তাই শিশুর বাড়ন্ত বয়সে এমন সব খাবার দিতে হবে, যা তার পুষ্টির চাহিদা মেটায় এবং বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া সহজ করে। চলুন দেখে নেওয়া যাক সে রকম কয়েকটি খাবার—
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
শিশুর শরীরে ক্যালসিয়ামের জোগান নিশ্চিত করতে ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে শিশুদের অনেকেই দুধ খাওয়ান। তবে শিশুর বৃদ্ধিতে শুধু দুধ না, চিজ, পনির, দই, হুইপড ক্রিম, ছানা, মিষ্টির মতো দুগ্ধজাত খাবারেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এসব খাবারে ভিটামিন এ, বি, ডি ও ই রয়েছে। প্রোটিন আর ক্যালসিয়ামও থাকে। ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম শিশুর বৃদ্ধি ও হাড়ের গঠনের জন্য অপরিহার্য। এসবের অভাবে বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
শর্করা ও নানা পদের শস্য
শর্করা ও নানা ধরনের শস্য আমাদের শরীরের শক্তির প্রধান উৎস। এ ছাড়া তারা ভিটামিন বি, ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম এবং সেলেনিয়াম সরবরাহ করে। ভাত, রুটি, নুডলস, পাস্তা, নানান ধরনের ডাল, শর্করা ও শস্যজাতীয় খাবার। এসব খাবার আমাদের ক্যালরি সরবরাহ করে। বাড়ন্ত বয়সে শিশু-কিশোরদের বাড়তি ক্যালরির প্রয়োজন পড়ে। তাই স্বাভাবিকের চেয়ে আপনার সন্তানকে একটু বেশিই শর্করাজাতীয় খাবার দিন।
বাইরের খাবার, ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত কোমল পানীয় খেতে তাদের নিরুৎসাহিত করুন। শিশু যা কিছু খেতে চায়, ঘরেই তৈরি করে খাওয়ান।
প্রতিদিন একটি ডিম
নানান পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি খাবার ডিম। ডিমের সাদা অংশ পুরোটাই প্রোটিন। এ ছাড়া এতে আছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি১২, আয়রন, ক্যারোটিনয়েড, রিবোফ্লাবিন, ফ্যাট এবং নানান খনিজ পদার্থ। এসব পুষ্টিগুণ শিশুর সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। তাই বাড়ন্ত বয়সের শিশু-কিশোরদের ডায়েটে ডিম অবশ্যই রাখুন। ছয় মাসের পর থেকে একটু একটু করে প্রতিদিন ডিম খাওয়ান। ধীরে ধীরে একটি আস্ত ডিম খাওয়ান। সেটা হতে পারে হাফ বয়েলড, ক্রিম বয়েলড, ফুল বয়েলড, পোচ, ভাজি বা অন্য যেকোনো স্বাস্থ্যকর উপায়ে।
নানারূপে সয়াবিন
সয়াবিনে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ক্যালসিয়াম, যা হাড় মজবুত করে ও হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়। এ ছাড়া সয়াবিনে প্রোটিন, ফোলেট, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার এবং ভিটামিন রয়েছে। এগুলো শরীরে লোহিত রক্তকণিকা বাড়ায়, কোষের সঠিক বৃদ্ধি ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। তরকারি হিসেবেও সয়াবিন রান্না করতে পারেন। প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে রয়েছে সয়াবিনের বড়ি, ময়দা, সয়া দুধ ও টফু।
রঙিন শাকসবজি, ফল
নানান ধরনের শাক, সবজি ও ফলে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, আঁশ, ফোলেট, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম। একজন মানুষের শারীরিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য এগুলো অপরিহার্য। তাই শিশুর খাবারের প্লেটে নিশ্চিত করুন নানান রঙিন ফল আর শাকসবজির উপস্থিতি। প্রতিদিন খাওয়ান মৌসুমি ফল।
সামুদ্রিক মাছ, বড় মাছ, ছোট মাছ
শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামুদ্রিক মাছে থাকে ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এ ছাড়া মাছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়াম এবং গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন রয়েছে। এটি শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটায়, হৃৎপিণ্ড সচল রাখে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। ছোটবেলা থেকেই ছোট মাছ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
প্রতিদিন একটি কলা
বিভিন্ন ফলের ভেতর আলাদা করে কলার কথা বলতেই হবে। কলায় রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, আঁশ। পুষ্টিগুণের আধার এই ফল শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধিতে দারুণভাবে সহায়ক। তাই শিশুর সুষম খাবার তালিকায় একটি কলা অবশ্যই রাখুন।
এ ছাড়া চর্বিছাড়া মাংস, নানা ধরনের ফল, বাদাম—এসব খাবার শিশুর সার্বিক বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে।