শীতের বিকেল। ঘড়িতে বাজে সাড়ে চারটার মতো। মিরপুর ১১ নম্বরের নান্নু মার্কেটের এক কোণে ছোট্ট একটি দোকানে সীমিত আলোয় রুটির খামির বেলছেন দুজন লোক। ভুল জায়গায় এসে পড়লাম না তো!
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে রীতিমতো ভাইরাল এ দোকান; নাম ‘মিনু ডিমচাপ’; কিন্তু কই কোনো ভিড়ভাট্টা তো দেখছি না। দোকানের কর্মীরাই বললেন, মাগরিবের পর আসুন।
কিছুক্ষণ মিরপুরের আশপাশে চক্কর কেটে আজানের বেশ কিছুক্ষণ পর ফের গেলাম। গিয়েই চোখ ছানাবড়া! আলোয় ঝলমল আর ক্রেতায় গমগম করছে মিনু ডিমচাপের চারদিক।
বিকেল চারটা থেকে শুরু হয় খাবার বানানোর কাজ। আর রাত সাড়ে ১০টা অবধি ক্রেতার আনাগোনা থাকে। এই দোকানের মূল আকর্ষণ কোয়েল পাখির ডিমের চাপ।
যার ভেতর থাকে তাদের নিজস্ব রেসিপিতে তৈরি মসলা দিয়ে মাখানো ম্যাশড আলু। কোয়েলের ১০টি ডিম, সেদ্ধ আলু আর মসলার সংমিশ্রণে তৈরি হয় এই ডিমচাপ।
ইদানীং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ প্রসিদ্ধ এই কোয়েলের ডিমচাপ। এই ডিমচাপের স্বাদ নিতে দূরদূরান্ত থেকে ভিড় জমায় ভোজনরসিক মানুষেরা। ৮০ টাকা দামের জিভে জল আনা খাবারটি যেমন সুস্বাদু, তেমনি তার চাহিদাও ব্যাপক।
দোকানের স্বত্বাধিকারী মিন্টু মাতবর জানান, ১৯৭৩ সালে ছোট্ট একটি জায়গায় দোকানটি শুরু করেন তাঁর বাবা। ১৯৮৮ সালের দিকে তিনি দায়িত্ব নেন।
শুরুতে মুরগির ডিমের চাপ তৈরির মাধ্যমে দোকানটি যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে গরুর চাপ, কোয়েলের ডিমচাপ, আস্ত কোয়েল পাখি ভাজা, মুরগির শিককাবাব, মগজ ভুনা, টিকা কাবাব, তিল্লি কাবাব, আলুপরোটা, ক্রিম ডিমচপসহ তেলে ভাজা বাহারি পদের খাদ্য মিলছে।
দোকানের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রতিদিন ক্রেতাদের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে কোয়েলের ডিমচাপ তৈরিতে ১০০০ থেকে ১ হাজার ৫০০টি পর্যন্ত ডিম লাগে। সাধারণত ১০টি ডিম ভেঙে পোচের মতো তাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকে দুই টুকরা সেদ্ধ আলু।
কারিগরেরা বেশ সুকৌশলে ডিমগুলো দুই পাশে উল্টে নিয়ে সঙ্গে আলু ভালোভাবে মিশিয়ে তৈরি করেন চাপ। ওপরে ছড়িয়ে দেন বিশেষ এক মসলা। এরপর খাবারটি প্লেটে তুলে ক্রেতাকে পরিবেশন করা হয়।
সবসময় ক্রেতার ভিড় থাকলেও শীতকালে গরম-গরম কোয়েলের ডিমের চাপ খেতে মানুষ এখানে একটু বেশিই ভিড় করে।
খাবারের দাম হাতের নাগালের মধ্যে হওয়ায় মিনু ডিমচাপের দোকানে খেতে আসেন সব শ্রেণির মানুষ।
কোয়েলের ডিম–আলুর চাপ ছাড়াও অন্যান্য খাবার ফুল ও হাফ প্লেট পাওয়া যাবে। আস্ত কোয়েল পাখি ভাজা ফুল ও হাফ দুই–ই মিলবে, দাম যথাক্রমে ১২০ ও ২৪০ টাকা।
এ ছাড়া একই দামে মগজ ভুনা, খিরি কাবাব, তিল্লি কাবাব, পুরো এবং অর্ধেক থালায় বিক্রি হয়। গরুর মাংসের চাপ, মুরগির শিককাবাব, গরুর বটিকাবাব, টিকা কাবাব হাফ প্লেটের দাম ১৪০ টাকা আর ফুল প্লেট ২৮০ টাকা।
মুরগির চাপের সঙ্গে কোরিয়ান ডিমচাপ, ক্রিম ডিমচাপেরও বেশ চাহিদা।
এই খাবারগুলোর হাফ প্লেটের দাম ১৪০ টাকা। রেগুলার ডিম চাপের দাম ৪০ টাকা। আরও পাওয়া যায় সুস্বাদু স্পেশাল আলুপরোটা যার ভেতরে বেশ পুরু করে ডিম-আলুর স্তর দেওয়া থাকে। দাম ৬০ টাকা।
কয়েকটি খাবারের আইটেম চেখে দেখার পর বুঝলাম, প্রায় প্রতিটি ডিমচাপের সঙ্গে তারা সেদ্ধ আলু বা আলুর চপ ব্যবহার করেন।
সঙ্গে আছে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিনু ডিমচাপের তৈরি বিশেষ একটি মসলা, যার জন্য খাবারগুলোর স্বাদ আরও বেড়ে যায়।
কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কোয়েলের ডিমের এই চাপ রীতিমতো ভাইরাল। তাই দেখে শীতের এই সন্ধ্যায় বহু লোক গরম-গরম কোয়েলের ডিমচাপ খেতে লাইন ধরে দাঁড়াচ্ছেন।
উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টর থেকে কোয়েলের চাপ খেতে এসেছেন ইসমাম মাহমুদ। তিনি জানান, এমন ভিন্ন রকমের খাবার প্রথমবার খেয়ে বেশ ভালোই লেগেছে।
রাত যত গভীর হতে থাকে, তত বাড়তে থাকে ক্রেতার ভিড়!