বৈশাখ শুধু তাপপ্রবাহ, রোদের হলকা, ঘাম আর ত্রাহি ত্রাহি রবের মাসই নয়, বৈশাখ রবীন্দ্র মাসও বটে। কবির জন্মদিন। কেমন ছিল এই গরমে তাঁদের বাড়ির খাওয়াদাওয়া? ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলে উঁকি দিলেই বোঝা যায়, রান্না–খাওয়া নিয়ে হেঁশেলে চলত নিত্যনতুন পরীক্ষা–নিরীক্ষা। কবি স্বয়ং ছিলেন এ ব্যাপারে দারুণ উৎসাহী। ঠাকুরবাড়ির পরিবেশেই ছিল নতুনকে আবাহনের নানা আয়োজন। দেশ–বিদেশ ঘুরে এবং দেশ–বিদেশের অতিথি আপ্যায়ন করে সে বাড়ির খাওয়াদাওয়ায় বাঙালি খাবারের পাশাপাশি ছিল আন্তর্জাতিক বাতাবরণ। তাই শুক্তানি, শাকভাজা যেমন রোজকার মেনুতে স্থান পেত, তেমনই সালাদ, স্টু, বেক, রোস্টেরও সমাদর ছিল ষোলো আনা।
খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে আবহাওয়ার একটা জোরদার সম্পর্ক আছে বৈকি। বৃষ্টি হলেই খিচুড়ির জন্য মন কাঁদে। আবার কনকনে ঠান্ডায় গরম স্যুপের আদর কার না ভালো লাগে! প্রচণ্ড গরমে একটু কাসুন্দি দিয়ে শাকভাজা, দইয়ের টক–মিষ্টি স্বাদে নিরীহ আলুর মাখো মাখো ভাব, নিরামিষ তরকারি, টক হলেই তো আরাম। আর কী চাই? গরমের খাওয়াদাওয়া মানেই কম মসলা, নিরামিষ ঘেঁষা মেনু। কিন্তু যাঁরা ঘোর আমিষভক্ত? বাইরে বয়ে যাওয়া লুয়ের হলকাও যাঁদের বাগে আনতে পারে না? তাঁদের জন্যই তো মাংসের স্টু। ঠান্ডা ঠান্ডা চিংড়ি রায়তাও তৈরি। গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী ছিলেন বেনারসের মেয়ে। তাঁর উৎসাহেই ঠাকুরবাড়িতে চিংড়ির রায়তার আন্তরিক আপ্যায়ন। ঠাকুরবাড়ির সে রকম কিছু রেসিপি দিয়েই সাজানো হয়েছে আজকের এই আয়োজন, যা খেয়ে এই গরমে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন।
লেখক: রন্ধনগবেষক ও শিল্পী