ওজন কমাতে হাইপ্রোটিন ডায়েট (খাদ্যাভ্যাসে আমিষ বাড়িয়ে দেওয়া) বেশ জনপ্রিয়। তবে বিজ্ঞানসম্মত মতামত হলো, রোজকার খাদ্যতালিকায় শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদানই রাখতে হবে সঠিক পরিমাণে। সুস্থ থাকতে সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা জরুরি। ওজন কমাতে হলে সারা দিনের সর্বমোট ক্যালরির পরিমাণ কমাতে হবে। শর্করা ও স্নেহজাতীয় খাবার থেকে ক্যালরি আসে, এ বিষয়টা অনেকেই জানেন। মনে রাখতে হবে, আমিষজাতীয় খাবার থেকেও কিন্তু ক্যালরি আসে। তাই সব বাদ দিয়ে কেবল আমিষ খেলেই ওজন কমবে, এমন ভাবনা ভুল। তা ছাড়া শর্করা ও স্নেহজাতীয় উপাদানও দেহের প্রয়োজন। এগুলো একেবারে বাদ দিয়ে দেওয়া উচিত নয়।
স্বল্প মেয়াদে হাইপ্রোটিন ডায়েট অনুসরণ করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের তত্ত্বাবধানে। আপনার বয়স ও শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন, আপনার জন্য এই খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা ঠিক হবে কি না। পুষ্টিবিদ আপনাকে ঠিক করে দেবেন, আপনি রোজ সর্বোচ্চ কতটুকু আমিষ গ্রহণ করতে পারবেন। এই পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ওজনের ভিত্তিতে। তাই এই খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করার সময় কিছুদিন পরপর পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করাটা ঝুঁকিপূর্ণ। হাইপ্রোটিন ডায়েট সম্পর্কে এমন নানা তথ্য জানালেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।
কী থাকে হাইপ্রোটিন ডায়েটে?
হাইপ্রোটিন ডায়েট মানে যে অনেক বেশি পরিমাণে আমিষ খাওয়া, তা কিন্তু নয়। এ ক্ষেত্রে সাধারণ হিসাবের চেয়ে কিছুটা বাড়তি আমিষ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। সেটিও কিন্তু কেবল মাংস কিংবা মাছ নয়। বাদাম ও অন্যান্য বীজজাতীয় খাবারেও আমিষ থাকে। আর দুধ, ডিম তো থাকেই নির্দিষ্ট পরিমাণে। মাংস বা মাছের পরিমাণও নির্দিষ্ট, তবে তা অবশ্যই চর্বি বাদ দিয়ে। ইলিশ মাছ বাদে অন্যান্য মাছের তেল খেলে ক্ষতি নেই। সঙ্গে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ খাবারও রাখতে হয়। শাকসবজি, পানসে ফল বা টক ফল আর পর্যাপ্ত পানি অবশ্যই খেতে হয় রোজ।
হাইপ্রোটিন ডায়েটের কোনো সুবিধা আছে কি?
হাইপ্রোটিন ডায়েট যদি আপনার শরীরের জন্য উপযুক্ত কোনো খাদ্যাভ্যাস হয়, তাহলে তা অনুসরণ করতে পারেন। তবে সেটিও সর্বোচ্চ মাস তিনেক। স্বল্প মেয়াদে ওজন কমানোর জন্য এটি অবশ্যই একটি ভালো উপায়। তবে ওজন কমানোর সীমাটাও হতে হবে বিজ্ঞানসম্মত। অর্থাৎ, প্রতি সপ্তাহে আধা কেজি থেকে এক কেজির বেশি ওজন কমানো যাবে না।
হাইপ্রোটিন ডায়েট অনুসরণ করলে অল্প পরিমাণ খাবার খেয়েই বেশ লম্বা একটা সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। যেহেতু আমিষ পরিপাক হতে একটু বেশি সময় লাগে, তাই সহজে ক্ষুধা লাগে না। তাই না খেয়ে থাকাটা কষ্টকর মনে হয় না।
ওজন কমাতে গিয়ে কারও কারও চর্বি কমার পাশাপাশি পেশিক্ষয় হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। হাইপ্রোটিন ডায়েট অনুসরণ করলে ওজন কমানোর সময় পেশিক্ষয়ের ঝুঁকি কমে।
অতিরিক্ত আমিষ কেন সবার জন্য নিরাপদ নয়?
অতিরিক্ত আমিষ খেলে যে কারও কিডনির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। দীর্ঘদিন ধরে এই খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখলে সেই ঝুঁকি আরও বাড়ে। তা ছাড়া আমিষের পরিমাণ বাড়াতে গিয়ে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান একেবারে বাদ দিয়ে দিলে আপনি অপুষ্টিতে ভুগবেন। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া হাইপ্রোটিন ডায়েট অনুসরণ করা যাবে না।