কুয়াশামাখা শীতসকালে মাটির চুলায় মা-দাদি-চাচিরা মিলে তৈরি করছেন ভাপা, চিতইসহ কত রকমের পিঠা। ঘ্রাণে ম–ম করছে চারদিক। চুলার গরম আঁচ আর পিঠার লোভে চুলার পাশে বসতেই বাটিতে তুলে দেওয়া হলো খেজুরের গুড় আর নারকেলে ভরপুর ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা। ছেলেবেলায় শীত উপভোগের এমন দৃশ্য হয়তো অনেকের স্মৃতির ক্যামেরায় তোলা আছে। এখন এই ব্যস্ত শহুরে জীবনে শীত আর তেমন আনন্দ বয়ে আনতে পারে না। তবে পিঠাপুলি খেতে মন তো চায়ই। বাড়িতে পিঠার জন্য চাল গুঁড়া করা, গুড়ের রস তৈরি, নারকেল কোরানো—আয়োজনের কত ঝামেলা। এসব পিঠাপ্রেমীর কথা মাথায় রেখেই ঢাকা শহরে গড়ে উঠছে পিঠার কিছু দোকান। যেখানে মিলবে চেনা–পরিচিতসহ ভিন্ন স্বাদের নানান পিঠা। জেনে নিন রাজধানীর এমন পিঠার তিনটি দোকানের কথা। যেখানে পাটিসাপটা, মুগপুলি, মালপোয়া, খেজুর পিঠা, বিবিখানাসহ প্রায় সব স্বাদের পিঠাই মিলবে।
খোলা রান্নাঘরের এক পাশে সারি সারি কড়াইয়ে তৈরি হচ্ছে দুই-তিন রকমের চিতই। অন্যপাশে তৈরি হচ্ছে ভাপা। পিঠাপ্রেমীদের চোখের সামনেই তাঁদের চাহিদামতো একের পর এক পিঠা তৈরি করে দিচ্ছিলেন ‘আড্ডা প্রবর্তনা’র কর্মী নাইম, পলিসহ বেশ কয়েকজন কর্মী। জায়গাটি মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডে। পয়লা অগ্রহায়ণ থেকে সেখানে চলছে ‘পিঠা উৎসব ১৪৩০’। শীতজুড়েই চলবে এই আয়োজন—জানান আড্ডা প্রবর্তনার অপারেশন ম্যানেজার শাহানাজ পারভিন। তিনি বলেন, ‘খুব বড় কিছু না হলেও উৎসব উৎসব ভাবটা আমরা আনতে পেরেছি। পিঠাপ্রেমীরা প্রায় প্রতিদিনই আসছেন, উপভোগ করছেন।’ মেনুতে রয়েছে প্রায় ১৪ রকমের পিঠা। কার্তিকশাইল ও কটক চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি দুই রকমের ভাপা, চিতই, পাটিসাপটা, পুলি ছাড়াও এখানে পাবেন তিন রকমের তেলের পিঠা। এখানে বিশেষ আয়োজনে আরও থাকছে তিলের পিঠা। অতিথিদের বসার জন্য প্রবর্তনার নিচতলায় টেবিল–চেয়ারের ব্যবস্থা থাকলেও দোতলার ঘরজুড়ে পাতা রয়েছে পাটি। সেখানে বসে পিঠা খেতে খেতে আড্ডাটা বেশ ভালোই জমাতে পারবেন। শীতজুড়েই এই পিঠা উৎসব চলবে।
বিন্নি চালের পাটিসাপটা পিঠাকে চাকমারা বলেন চেচমা পিঠা। এমন ভিন্ন রকম ও স্বাদের আরও চার-পাঁচ রকমের পিঠার স্বাদ উপভোগ করতে চাইলে চলে যেতে পারেন রাজধানীর পূর্ব কাজীপাড়ার চার বোনের রেস্তোরাঁ ‘হেবাং’–এ। চাকমা ভাষায়—বড়া পিঠা, কলা পিঠা ও হোগা পিঠাসহ এখানে পাবেন বিভিন্ন মজাদার পিঠা। এখানকার পিঠা বানাতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিন্নি চাল আর তৈরি হচ্ছে আদিবাসীদের নিজস্ব পদ্ধতিতে—জানালেন হেবাং-এর কর্মচারী শতাব্দী চাকমা। বাঙালিয়ানা পিঠার বাইরে যাঁরা একটু অন্যরকম স্বাদের পিঠা খেতে চান, তাঁদের সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়ে শতাব্দী চাকমা বলেন, যাঁরা হালকা মিষ্টি পছন্দ করেন, তাঁদের এই পিঠাগুলো খুব ভালো লাগবে।
ঢাকার নানান জায়গায় রয়েছে পিঠার দোকান। তবে অনেক ধরনের পিঠা এক ছাদের নিচে পেতে চাইলে চলে যেতে পারেন বেইলি রোডের ‘পিঠাঘর’–এ। মিষ্টি, ঝাল, টক বা নোনতা—কোন স্বাদের পিঠা চাই? সবই মিলবে সেখানে। বাহারি কাঁটা পিঠা থেকে শুরু করে গোলাপ পিঠা, পান পিঠা, পনির পিঠা, তিল ও তেলের পিঠা, দুধে ডোবানো চিতই কিংবা কলা পিঠা, রসকদম বা রস ফুল পিঠা—সবই পেয়ে যাবেন সেখানে।