ভালোবেসে যখন রান্নাগুলো করবেন, আপনাকেও মনে করাবে প্রিয়জনের কথা : শুভজিৎ ভট্টাচার্য্য

শুভজিৎ ভট্টাচার্য্য
ছবি : লস্ট অ্যান্ড রেয়ার রেসিপিজ–এর সৌজন্যে

হারায় তো কত কিছুই। বর্ষার দিনে ছাতা হারায়, কলম হারায় কলেজে আর অফিসে, রুমাল হারায় যখন–তখন। মন্দির–মসজিদের বাইরে হারায় চটি জুতা। কিন্তু সেসব হারানো কি সত্যিই হারানো?

রোজ যা তিলে তিলে হারায়, এসব হারানোর ভিড়ে তাকে যে আমরা ভুলে যাই। হারায় কত মানুষের স্মৃতি, হারায় কত ফেলে আসা দিন, হারায় ভালোবাসা।

কিন্তু সত্যিই কি তা হারায়? মনের গভীরে তারা বেঁচে থাকে। যদি গভীরে ডুব দেন, যদি সে আঁধারে আলো ফেলেন, যদি খুঁজে দেখেন, পাবেন তার হদিস। দেখবেন, সেখানে তারা নিশ্বাস নেয়, অপেক্ষা করে আপনার জন্য—একাকী।

স্মৃতির সরণি বেয়ে আজ তবে সে পথেই একবার ঘুরে আসি চলুন। সে পথের কোথাও আছে ইতিহাস, কোথাও মানুষের কথা, কোথাও জীবনের গল্প। আর আছে কিছু রান্না। ভালোবেসে পরে যখন রান্নাগুলো করবেন, দেখবেন, আমার মনের গভীরে এগুলো যেভাবে আলো ফেলে, আপনাকেও তেমনি মনে করাবে প্রিয়জনের কথা। তাঁদের মুখে শোনা গল্প, তাঁদের বেড়ে দেওয়া ভাত, তাঁদের চোখে দেখা ইতিহাস।

হারিয়ে যেতে বসা দেশ–বিদেশের এই খাবারগুলো বাঙালির হেঁশেলে নতুনভাবে প্রাণ ফিরে পাক, তাতেই আমার সার্থকতা।

লেখক: পশ্চিমবঙ্গের রান্নাবিষয়ক লেখক ও গবেষক। ইউটিউবে ‘লস্ট অ্যান্ড রেয়ার রেসিপিজ’ চ্যানেলের অন্যতম উদ্যোক্তা

চন্দন কাঠ পিঠা

ময়মনসিংহের চন্দন কাঠ পিঠা

বাঙালির শেষ পাতে মিষ্টিমুখ না হলে কি চলে? মিষ্টির জন্য যে বাঙালির বিশ্বজোড়া খ্যাতি, তার অভিজ্ঞতার ভান্ডারে যে অমূল্য রত্নরাজি থাকবে, সে আর আশ্চর্যের কী? সেই অমূল্য ভান্ডার খুঁজে আজ আনলাম ময়মনসিংহের চন্দন কাঠ পিঠা। এর আরেক নাম চন্দ্রকাঠ পিঠা। একবার তৈরি করে দেখলে ভোলা যায় না।

 উপকরণ: দুধ ১ লিটার, পাটালি গুড় ৬–৭ টেবিল চামচ, ঘি ৪ টেবিল চামচ, সুগন্ধি চিনিগুঁড়া বা গোবিন্দভোগ চালের গুঁড়া ৬ টেবিল চামচ, নারকেলগুঁড়া আধা কাপের একটু বেশি, খোয়া ক্ষীর ৩০০ গ্রাম, চিনি পৌনে ১ কাপ, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ও কিশমিশ মিলিয়ে ১ মুঠো পরিমাণ।

 প্রণালি: প্রথমে ২০০ মিলিলিটার দুধ আলাদা করে একটি বাটিতে নিন। তাতে পাটালি গুড় ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার কড়াই চুলায় বসিয়ে তাতে ২ চামচ ঘি দিতে হবে। ঘি গলে গেলে বাকি দুধ ঢেলে ভালো করে নেড়ে ফুটিয়ে নিন। দুধ ফুটে উঠলে চালের গুঁড়া দিন। মিশ্রণটি এরপর ৪–৫ মিনিট ক্রমাগত নাড়তে থাকুন, যেন চালের গুঁড়ায় দলা পেকে না যায়। মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে এতে নারকেলগুঁড়া, খোয়া ক্ষীর, চিনি, কাজুবাদামগুঁড়া দিয়ে ভালোমতো মেশান। এখন আগে তৈরি করে রাখা গুড়ের মিশ্রণটি ঢেলে দিতে হবে। আরও ২ চামচ পাটালি গুড় দিন। মাঝারি আঁচে ঘন না হওয়া পর্যন্ত ক্রমাগত নেড়ে যেতে হবে। কড়াই থেকে মিশ্রণটি প্রায় আলগা হয়ে গেলে একটি ঘি মাখানো কাচের পাত্রে নামিয়ে নিতে হবে। এরপর ইচ্ছা অনুযায়ী কাঠবাদাম, পেস্তাবাদামকুচি ও কিশমিশ দিয়ে মিশ্রণটি রুমের তাপমাত্রায় নেমে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে তারপর পরিবেশন করুন চন্দন কাঠের পিঠা।