অনেক ধরনের রান্না পারলেও দেশি খাবারের নানা পদ রাঁধেন হাতে সময় মিললেই। ‘নকশা’র জন্য যে খাবারের রেসিপি দিলেন, সেখানেও মিশে থাকল দেশি আবহ। মোট তিনটি পদ রাঁধলেন তিশা।
বড় পর্দা, ছোট পর্দা—দুই মাধ্যমেই সমান জনপ্রিয়তা ধরে রেখে কাজ করে চলেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। অভিনয়ের বাইরে ঘরে এই মানুষটাই কিন্তু আবার পুরোপুরি সংসারী। বাসার বাজার খরচ থেকে শুরু করে কোন বেলা কী রান্না হবে, সবই ঠিক করে দেন তিনি। প্রতিদিন প্রতি বেলার খাবারের মেনু ঠিক করা অনেকের কাছেই কঠিন কাজ। তিশাকে তাই জিজ্ঞাসা করলাম, কঠিন কাজটা আপনি সামলান কী করে? আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে উত্তর এল, ‘কঠিন! এটা তো আমি খুবই ভালোবেসে করি। কাজটি করতে আমার ভালো লাগে। তবে একটা দুশ্চিন্তা থাকে, সেটা সরয়ারের রাতের খাবার নিয়ে। ওর রাতের খাবার নিয়ে যতটা চিন্তা করতে হয়, ইলহামের (মেয়ে) খাবার নিয়েও এত ভাবতে হয় না।’
জানা গেল, তিশার স্বামী পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী রাতের খাবার নিয়ে খুবই খুঁতখুঁতে। তাই ফারুকীর খাবারের মেনু ঠিক করতে আগের কয়েক দিন কী কী রান্না হয়েছে, সেটা ভাবতে হয় তিশাকে। তবে নিজের জন্য খুব একটা ভাবতে হয় না। জানালেন নিজে খুব একটা ভোজনরসিক না, ‘যখন যেটা রান্না হয়, সেটাই খেয়ে নিই। তবে প্রতিদিন প্রচুর চা খাই। অবশ্যই সেটা চিনি ছাড়া দুধ চা।’
তিশার হাতে ফিউশন রান্না ছাড়াও গরুর মাংস ও মাছের একধরনের পাতুরির সুখ্যাতি আছে পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে। তিশা কিন্তু রান্না শিখেছেন অনেকটা বিপদে পড়ে। অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন। তাই মায়ের জন্য বিভিন্ন সময় রান্না করতে হতো। সেসব করতে গিয়েই একটু একটু করে রান্না শেখা। তবে ‘পাকা রাঁধুনি’ হয়েছেন বিয়ের পর। তিশা বলেন, ‘আমাদের বিয়ের পরই বনানীর এই বাসায় উঠি। তখন আমার কোনো কাজের সাহায্যকারীও ছিল না। মায়ের বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি—দুই বাড়ি থেকেই নিয়মিত খাবার আসত। আর সেসব খাবার কখনো কখনো ঠিকঠাক করতে হতো।’ এই ঠিকঠাকের মানে হলো, হয়তো কোনো বাড়ি থেকে দুপুরে ডাল পাঠিয়েছিল, সেটা রাতে খাওয়ার আগে দেখা গেল টক। দ্রুত সেই ডালের মধ্যে দুটো জলপাই চটকে গরম করে দিলেন তিশা। খেতে বসে ফারুকী বলতেন, ‘ডালটা তো চমৎকার হয়েছে।’ তিশার পাকা রাঁধুনি হওয়ার পেছনে এমন অনেক মজার গল্প আছে।
কোন ধরনের রান্না করতে ভালোবাসেন, এই প্রশ্নের উত্তরে তিশা জানালেন, ফিউশন। একটা খাবারের সঙ্গে আরেকটা যোগ করে নতুন কিছু তৈরি করতে ভালোবাসেন। সেটা হয়েছে ওই খাবার ‘ঠিকঠাক’ করতে গিয়েই। অনেক ধরনের রান্না পারলেও দেশি খাবারের নানা পদ রাঁধেন হাতে সময় মিললেই। ‘নকশা’র জন্য যে খাবারের রেসিপি দিলেন, সেখানেও মিশে থাকল দেশি আবহ। মোট তিনটি পদ রাঁধলেন তিশা। তার মধ্যে একটা নারকেল দিয়ে মুরগি। তিশার দাদাবাড়ি যশোরে। তাঁর চাচিরা এটা খুব ভালো রান্না করেন বলে জানালেন। আর রাঁধলেন পুঁই-ডাল। মসুরের ডালের সঙ্গে পুঁইপাতার এই রান্নাও তাঁর ঘরোয়া একটি পদ। তৃতীয় পদটি ছিল শিং মাছে ফুলকপির ঝোল। এটা তিশা-ফারুকীর বাড়িতে খুবই জনপ্রিয়। তিশা বলেন, ‘শীতের এই মৌসুমে ফুলকপি, টমেটো, ধনেপাতার রান্না ছাড়া জমে না। এটি হয়তো কমবেশি সব বাসায়ই রান্না হয়। তবে শীতের সবজিতে দেশি রান্নায় পদটি না থাকলে ঠিক জমে না।’
উপকরণ: মুরগি দেড় কেজি, নারকেল অর্ধেকটা, জিরাবাটা ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ৮টি, হলুদ আধা টেবিল চামচ, পেঁয়াজবাটা আধা কাপ, আদাবাটা ২ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, এলাচি ৩টি, দারুচিনি ৩ থেকে ৪ টুকরা, তেজপাতা ৪টি, লং ৫-৬টি, গোলমরিচ ৫টি, তেল ৩ টেবিল চামচ, টক দই ১ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো ও ধনেপাতা কয়েকটি গাছ।
প্রণালি: মুরগি ইচ্ছেমতো টুকরা করে নিন। নারকেল লম্বা ফালি করে নিন। হাঁড়িতে তেল দিয়ে ধনেপাতা আর মুরগি ছাড়া সব উপকরণ দিয়ে নারকেল ভালোভাবে কষাতে হবে। মাংস ঢেলে আবার কষান। মাংস কষানো হলে পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। সেদ্ধ হয়ে এলে পছন্দমতো ঝোল রেখে ওপরে ধনেপাতা ছড়িয়ে নামিয়ে নিন। মাংসের গা মাখা মাখা রেখে নামিয়ে নিন মুরগি।
উপকরণ: শিং মাছ ৪-৫টি, ফুলকপি মাঝারি ১টি, কাঁচা মরিচ ৬টি, ধনেপাতা অল্প, পাকা টমেটো ১টি, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচগুঁড়া দেড় চা-চামচ, জিরাগুঁড়া ১ চা-চামচ, পেঁয়াজবাটা ২ টেবিল চামচ, রসুনবাটা দেড় চা-চামচ, তেল ও লবণ প্রয়োজনমতো।
প্রণালি: মাছ কেটে ভালোভাবে ধুয়ে টুকরা করে নিন। টমেটো ও ফুলকপি টুকরা করে নিন। ফুলকপি লবণ-হলুদ মেখে হালকা ভেজে তুলে রাখুন। পাত্রে তেল দিয়ে বাটা মসলা, গুঁড়ামসলা, ১ কাপ পানি ও টমেটোকুচি দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিন। টমেটো গলে গেলে মাছ দিয়ে কষান। মাছ কষানো হলে ফুলকপি ও কাঁচা মরিচ দিতে হবে। সেদ্ধ হলে ধনেপাতা দিন। একটু পর ঝোল ঝোল অবস্থায় নামিয়ে পরিবেশন করুন।
উপকরণ: পুঁইশাক ১ মুঠো, মসুর ডাল আধা কাপ, কাঁচা মরিচ ৫টি, পেঁয়াজ আধা কাপ, তেল ১ টেবিল চামচ, আদা-রসুনবাটা ২ চা-চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: কড়াইয়ে তেল গরম করে ফাটিয়ে নেওয়া গোটা মরিচ ও পেঁয়াজকুচি দিয়ে নাড়ুন। এবার হলুদ, আদা-রসুনবাটা দিয়ে কষিয়ে নিন। ডাল ও শাক দিয়ে আবার কষাতে হবে। এবার লবণ দিয়ে দিন। পানি ছেড়ে সেদ্ধ হয়ে মাখা মাখা হলে নামিয়ে নিন।