অধিকাংশ বাড়িতে দুপুরের খাবার হিসেবে ভাত খাওয়া হয়। অনেক অফিসেও ভাত খাওয়ার সুবন্দোবস্ত থাকে। কেউ কেউ বাড়ি থেকেও দুপুরের খাবার হিসেবে ভাত নিয়ে যান। আবার কেউ কেউ ভাতের বদলে ‘টুকিটাকি’ কিছু খেয়ে কাটিয়ে দেন গোটা দুপুর। মধ্যাহ্নভোজে কোন ধরনের খাবার বেছে নেওয়া স্বাস্থ্যকর, যাতে ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে? কোন ধরনের খাবার থেকেই-বা মিলবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান?
সুস্থ থাকতে দুপুরের খাবারটা হতে হবে ঠিকঠাক। শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় উপাদান থাকতে হবে এই বেলার খাবারে। আর দিনরাত মিলিয়ে যে খাবার খাওয়া হবে, তা থেকে যাতে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও খনিজ উপাদান পাওয়া যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে দেহে কোনো পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হতে দেওয়া যাবে না। দীর্ঘদিন ধরে দুপুরে কেবল হালকা স্ন্যাকস খাওয়া হলে দীর্ঘ মেয়াদে শরীরে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। স্বাস্থ্যকর দুপুরের খাবার প্রসঙ্গে এমন নানান তথ্য জানালেন ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী।
দুপুরে মাঝারি ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন। তাই দুপুরে ভাত খাওয়ার ধারা কিন্তু মোটেও খারাপ নয়; বরং তা আপনার জন্য ভালো। দুপুরটা হয়তো আপনি ভাত না খেয়ে কাটিয়ে দিতেই পারেন। কিন্তু কাজের ফাঁকে কিংবা অফিস থেকে ফেরার পথে হয়তো খেয়ে নেন ‘টুকিটাকি’ নাশতা, যাতে ক্যালরির মাত্রা অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে এই ভাত না খাওয়াটা কিন্তু আপনার কোনো কাজেই আসে না; বরং উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন অন্যান্য খাবার গ্রহণের প্রবণতা বাড়ে। আবার এদিকে কিন্তু আপনি পর্যাপ্ত পুষ্টি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। মানে এতে লাভের চেয়ে ক্ষতির ঝুঁকিই বেশি। তাই দুপুরে ভাত খাওয়াই শ্রেয়। ভাতের সঙ্গে প্রচুর শাকসবজি খাবেন। আমিষের উৎস হিসেবে ভাতের সঙ্গে রাখতে পারেন মাছ, মাংস কিংবা ডিম। বিকল্প হিসেবে ডিম আর সবজি দিয়ে রান্না করা নুডলস বা পাস্তাও খেতে পারেন। তবে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ হিসেবে অতিরিক্ত ভাত, নুডলস বা পাস্তা খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
যদি ভাত খাওয়া বা নিয়ে আসার সুযোগ না থাকে
অফিসে ভাতের ব্যবস্থা না থাকলে বাড়ি থেকেই ভাত নিয়ে যাওয়া ভালো। আর সেই ব্যবস্থাও যদি করা না যায়, তাহলে অবশ্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সকালে বেরোনোর আগেই ভাত খেয়ে নিতে পারেন। সকাল আর দুপুর দুই বেলাই ভাত বাদ দিয়ে রাতের ভাতে তৃপ্তি মেটাবেন, এমন ভাবনা ভুল। তাতে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল হয়ে ওঠে। বরং সকালেই খেয়ে নিন ‘দুপুরের খাবার’। সে ক্ষেত্রে আপনি অফিসে নিয়ে আসতে পারেন রুটি, ডিম, সবজি আর শসা।
যদি দুপুরের জন্য কিছুই নিয়ে বেরোনো না যায়
ধরা যাক, ব্যস্ততার জন্য অফিসে রুটিও নিয়ে আসতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে অফিসেই এমন কিছু খাবার রাখতে পারেন, যাতে পেটও ভরবে, পুষ্টিও মিলবে। এই যেমন ‘লো ফ্যাট মিল্ক পাউডার’ আর কর্নফ্লেকস বা ওটস। খাওয়ার জন্য একটা বাটি আর চামচও রেখে দিন অফিসে। চাইলে চিড়া বা মুড়িও রাখতে পারেন দুধ দিয়ে খাওয়ার জন্য। আর আশপাশ থেকে কোনো ফলও কিনে আনতে পারেন এক ফাঁকে খেয়ে নেওয়ার জন্য। এ ছাড়া অফিসে রেখে দিতে পারেন ‘ড্রাই ফ্রুটস’, অর্থাৎ খেজুর, খোরমা, কিশমিশ, আখরোট, যেকোনো ধরনের বাদাম, প্রুনস বা কিশমিশ। সম্ভব হলে বাড়ি থেকে অন্তত একটা ডিম সেদ্ধ করে নিয়ে আসা ভালো। কালেভদ্রে পাউরুটি আর কলা কিংবা উচ্চ মাত্রার আঁশসমৃদ্ধ ক্র্যাকারসও খেতে পারেন দুপুরে।