লেবুপাতা, বেগুনে পাঙাশ

কোরবানি ঈদে জীবন হয়ে গেছে মাংসময়। ঘরেও মাংস, বাইরেও মাংস; ভাতেও মাংস, পিঠাতেও মাংস। স্বাদ বদল করতে মাছ রান্না করব চিন্তা করলাম। সে জন্য ফোন করলাম ফুড ব্লগার সাকির আহমেদকে। তার জি-রেশিও ইউটিউব চ্যানেলের বেশ কয়েকটি রেসিপি ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। ফোন করে বললাম, ‘তোমার প্রিয় একটি মাছের রেসিপি বলো, আজ রান্না করব।’

লেবুপাতা, বেগুনে পাঙাশের উপকরণসমূহ
ছবি: লেখক

বরিশাল থেকে সাকির ফোনে বলে, ‘ভাই আমার প্রিয় পাঙাশ মাছ।’ কথা শেষ হওয়ার আগেই বললাম, ‘পাঙাশ মাছ কারও প্রিয় হয়? আমার সঙ্গে মজা নেও?’ ও কিন্তু সিরিয়াস, ‘রেসিপিটা আগে শুনেন। আমার বউ প্রিয়াঙ্কা দেব আমাকে প্রথম এই রান্না করে খাইয়েছে। ভাই, প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে কথা বলেন,’ বলেই ফোনটা তার কাছে দিয়ে দিল।

মাছগুলো আগে উঁচু তাপে ভেজে নিতে হবে

প্রিয়াঙ্কা বলল, ‘ভাইয়া, জানি পাঙাশ মাছ শুনেই আপনি বিরক্ত হয়েছেন। তবে আমি যে ফর্মুলায় রান্না করি, একবার ট্রাই করে দেখেন। যারা এই রেসিপি রান্না করেছে, এ পর্যন্ত কেউ খারাপ বলেনি। পাঙাশ মাছ সম্পর্কে আপনার ধারণাই বদলে যাবে।’ প্রিয়াঙ্কার আত্মবিশ্বাস দেখে বললাম, ‘কী কী লাগবে বলো?’ ‘পাঙাশ মাছ, বেগুন, লেবুপাতা...’ ‘লেবুপাতা তো পচা বা নরম হয়ে যাওয়া মাছ রান্না করতে ব্যবহার করা হয়।’ শুনেই প্রিয়াঙ্কা আমাকে আর কথা না বাড়াতে দিয়ে উপকরণগুলো একে একে বলল। আমি টুকে নিলাম।

মাছের তেলে ভেজে নিতে হবে বেগুন

যা যা লাগবে:

একটি মাঝারি আকৃতির পাঙাশ মাছ (৩০০ গ্রাম)। লেবু ও লবণ দিয়ে ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রেখে দিন।

বেগুন ২টি

লেবুপাতা ৪টি

সয়াবিন তেল ১ কাপ

পেঁয়াজ ১টি

কাঁচা মরিচ ৬টি

হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ

মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ

লবণ ১ চা-চামচ

পানি ২ কাপ

দুই দফায় দিতে হবে লেবুপাতা

‘পানি পর্যন্ত মেপে দিতে হবে? এত কম মসলায় রান্না মজা হবে তো?’ আমার আশঙ্কা গায়ে না মেখে প্রিয়াঙ্কা কেবল বলল, ‘এখন আর কিছু বলব না ভাইয়া। আপনি রান্না করে খাওয়ার পর আমাকে নিজেই জানাবেন। এবার শুরু করে দিন। প্রথমে মাছের টুকরাগুলো সামান্য হলুদ ও লবণ দিয়ে উচ্চতাপে তেলে ভেজে নিতে হবে।’

‘উচ্চতাপে কেন?’

‘তাহলে মাছের টুকরাগুলোর ওপরের অংশ ভাজা হয়ে যাবে। ফলে মাছ ভেঙে যাবে না। ভেতরে মাছের স্বাদ অক্ষত থাকবে। খেতে মজা লাগবে।’

‘ব্যাখ্যাটা ভালো।’

‘রান্নার পরে খাবারটাও আপনার ভালো লাগবে ভাই। তারপর ওই তেলেই টুকরা করা বেগুনগুলো অল্প আগুনে হালকা ভাজতে হবে।’

‘বেগুনের সাইজ কেমন হবে? কীভাবে কাটব?’

‘মাছের কাছাকাছি আকারের হলে ভালো। বেগুন ভাজা হলে তুলে পাশে রেখে দিন। একই তেলে পেঁয়াজকুচিগুলো দিয়ে দিন। হালকা বাদামি রং ধারণ করলে হলুদ ও মরিচগুঁড়া দিতে হবে। সামান্য পানি দিয়ে মসলা কষিয়ে নিতে হবে। তেল ভেসে ওপরে উঠলে বুঝবেন মসলা কষা হয়ে গেছে। এবার দুটি লেবুপাতা, মাঝখানে ফালি করে কেটে রাখা কাঁচা মরিচ ও ভেজে রাখা মাছগুলো দিন। মিনিট পাঁচেক কষানোর পর বেগুনগুলো দিয়ে দিন। এবার পানি ও লবণ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। মাঝারি আঁচে ৫ মিনিট রান্না হওয়ার পর বাকি দুটি লেবু পাতা ছড়িয়ে দিয়ে আবার ঢেকে দিতে হবে। ১ মিনিট পর আগুন নিভিয়ে দিতে হবে। লেবুপাতার গন্ধ যেন চলে না যায়, সে জন্য চুলা থেকে নামিয়ে কিছুক্ষণ ঢাকনা দিয়ে ঢেকেই রাখতে হবে। তৈরি হয়ে গেল সুগন্ধি লেবুপাতা দিয়ে বেগুন পাঙাশ মাছের তরকারি। এবার গরম ভাতের সঙ্গে খেয়ে নিন।’

ঢেকে রান্না করতে হবে যাতে লেবুপাতার ঘ্রাণ তরকারির ভেতর ঢুকে পড়ে

পাঙাশ মাছ সম্পর্কে সত্যিই ধারণা বদলে গেল। পাঙাশের আঁশটে গন্ধটা নেই। খেতেও হয়েছে সুস্বাদু। লেবুপাতার সুবাসটি মনমাতানো।

আপনিও ট্রাই করে দেখতে পারেন।

লেবুপাতা, বেগুনে পাঙাশের এই রেসিপিটি আপনিও ট্রাই করে দেখতে পারেন