মাটির চুলায় রান্না শিখেছেন সুনেরাহ

সুনেরাহ বিনতে কামাল
ছবি: কবির হোসেন

অনেক ছোট বয়স থেকেই রাঁধতে পারেন সুনেরাহ বিনতে কামাল। অন্যদের চেয়ে একটু ভিন্নভাবে তাঁর রান্নায় হাতেখড়ি। ছোটবেলায় রংপুরে নানাবাড়ি যখন বেড়াতে যেতেন, গ্রামের বাড়িতে দেখতেন মাটির চুলায় রান্না করছেন নানু। তাঁর বয়স তখন চার কি সাড়ে চার। নানুকে রাঁধতে দেখে ছোট্ট মেয়েটির ভেতরও রান্নার আগ্রহ জন্মাল। ছবি তোলার ফাঁকে ফাঁকেই সুনেরাহ বলছিলেন তাঁর রান্না শেখার গল্প। ‘তখন আমাকেও একটা ছোট মাটির চুলা বানিয়ে দেওয়া হলো। সেই চুলাতেই ছোট ছোট হাঁড়ি–পাতিলে মা দিয়ে দিতেন চাল, ডাল, তরিতরকারি। ছোট ছোট সেই হাঁড়ি–পাতিলে হাত দিয়েই রাঁধতাম। পাশে অবশ্য মা বসে থাকতেন। রান্না যেমনই হোক, এক চামচ করে করে সবার মুখে পুরে দিতাম। খুব সুস্বাদু না হলেও কেউ কখনো খারাপ বলতেন না।’

ফটোশুটের আগের দিন বর্ণিল খাবারদাবার–এর জন্য রাত জেগে রান্না করেছেন সুনেরাহ। রান্নায় তাঁর হাত যে বেশ পোক্ত, সেটা তার রাঁধা মটর পোলাও, ঝুরা গরুর মাংস, গার্লিক বিফ সালাদ, আচারি চিকেন ও শামি কাবাব দেখেই বোঝা গেল। 

সুনেরাহ বিনতে কামাল

তবে রাঁধতে ভালোবাসলেও কাটাকুটিতে তাঁর ভীষণ অনীহা। সুনেরাহ বলেন, ‘আসলে রান্নার আগের কাটাকুটির কাজটা অন্য কেউ করে দিলে রান্না করা সহজ হয়ে যায়। তবে বাজারটা আমি খুব ভালো করতে পারি। এ ব্যাপারে আমাকে পটুই বলতে পারেন।’ বর্ণিল খাবারদাবার–এর খাবারগুলো রান্না করতেও যা যা দরকার হয়েছিল, সব বাজার তিনি নিজ হাতে করেছেন। 

রান্নার কিছু নিজস্ব কৌশলও সুনেরাহর জানা আছে। এই যেমন রান্নায় প্রচুর রসুন ব্যবহার করেন। এ ছাড়া লাল মরিচ ও লেবুর প্রাধান্য থাকে। জানালেন, মটর দিয়ে বিশেষ কৌশলে ভাত রান্না করেন। যে ভাত মাংস দিয়ে খেতে খুব ভালো লাগে। তাঁর হাতে তৈরি বিফ স্টেকও নাকি সবাই বিশেষভাবে পছন্দ করে।

শুধু রান্না করতেই নয়, খেতেও ভীষণ ভালোবাসেন সুনেরাহ। দেশি যেকোনো রান্না তাঁর প্রিয়। ভালোবাসেন ঝুরা গরুর মাংস। এই মাংসের সঙ্গে রুটি বা পরোটা হলে তো কথাই নেই।

সুনেরাহ বলেন, ‘নানুর হাতের রান্নার প্রতি বিশেষ দুর্বলতা ছিল। আমার মা খুব ভালো রান্না করেন। তবে নানুর রান্না আমার বেশি প্রিয়। যখন অন্য কারও রান্না বা বাইরের কোনো খাবারে নানুর রান্নার স্বাদ পাই, তখন সেই খাবারকে কেমন জানি আপন আপন লাগে।’

কাজের ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত রান্না করতে পারেন না। তবে মাসে একবার হলেও সময় করে রান্নাঘরে ঢোকেন। নিজ হাতে তৈরি করেন নানা স্বাদের খাবার।

বাসায় রান্নাঘরের সব দায়িত্ব সামলান সুনেরাহর মা। ঈদের দিনও তার ব্যতিক্রম হয় না। তবে এদিন হালকা নাশতা বা ডেজার্টগুলো সুনেরাহই করেন। এবার ঈদুল আজহা কোথায় কাটাবেন, তা নিয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা হয়নি। যদি দেশে থাকেন, তবে ঈদের দিন বাসার মানুষদের জন্য বিফ স্প্যাগেটি আর ডেজার্ট তৈরি করবেন।

 সুনেরাহর রেসিপি: শামি কাবাব

উপকরণ:  হাড়ছাড়া গরুর মাংস ১ কেজি, ছোলার ডাল ১ কেজি, তেল আধা লিটার, রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, জিরা, মরিচ, এলাচি ও দারুচিনিগুঁড়া পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ; লবণ, মরিচ, ধনেপাতা পরিমাণমতো।

প্রথম আলোর অনুরোধে সুনেরাহ দিয়েছেন শামি কাবাবের রেসিপি

প্রণালি: প্রথমে কড়াইয়ে তেল দিয়ে পেঁয়াজ বাদামি করে ভাজতে হবে। এবার আদা ও রসুনবাটা দিয়ে ভালো করে কষিয়ে মাংস ও ছোলার ডাল দিন। পরিমাণমতো জিরা, এলাচি, দারুচিনি ও মরিচগুঁড়া দিয়ে পানি ঢেলে সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। সেদ্ধ হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে মাংসের মিশ্রণ ঠান্ডা করে ব্লেন্ডারে কাঁচা মরিচ, ধনেপাতাসহ ব্লেন্ড করে নিন। এবার হাতে দিয়ে ছোট ছোট কাবাবের আকৃতি দিতে হবে। কাবাবগুলো ৪ ঘণ্টার মতো ফ্রিজে রাখতে হবে। ভাজার ২ ঘণ্টা আগে বের করে নিতে হবে। ডুবো তেলে বাদামি করে কাবাবগুলো ভাজতে হবে।

 সুনেরাহর রেসিপি: ঝুরা বিফ

উপকরণ: গরুর মাংস আধা কেজি, হলুদগুঁড়া ২ টেবিল চামচ, লবণ ২ টেবিল চামচ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজবাটা ১ টেবিল চামচ, জিরাগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, মরিচগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচভাজা ৫টি, দারুচিনি ৪টি, এলাচি ৫টি, সয়াবিন তেল ৩ কাপ, পানি ৫ কাপ, পেঁয়াজকুচি এক কাপ।

সুনেরাহর রান্না করা ঝুরা বিফ

প্রণালি: মাংস ভালো করে ধুয়ে হলুদ ও লবণ দিয়ে মেখে রাখুন। এবার প্রেশার কুকারে আধা কাপ তেলে সব বাটা মসলা কষিয়ে ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে নাড়তে থাকুন। মাংস কষানো হলে এক কাপ পানি দিতে হবে। প্রেশার কুকারে দুটি সিটি দিলে আবার ঢাকনা তুলে ৪ কাপ পানি দিন। এবার হলুদ ও মরিচগুঁড়া দিন। আবার ঢেকে দিয়ে ৫টি সিটি পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, তাহলে মাংস নরম হবে। মাংস শুকিয়ে এলে আলাদা বাটিতে তুলে রাখতে হবে। আরেকটি পাত্রে তেল দিয়ে পেঁয়াজকুচি বাদামি করে ভাজতে হবে। এবার দারুচিনি, এলাচি একটু ভেজে তাতে মাংস দিয়ে অল্প আঁচে নাড়তে হবে। মাংস ঝুরা হয়ে এলে ভাজা শুকনা মরিচ হাত দিয়ে ভেঙে ছড়িয়ে দিয়ে ৫ মিনিট নাড়তে থাকুন। ভাজা ভাজা হয়ে এলে মাংস নেড়ে পরিবেশন করতে হবে।

লেখাটি প্রথম আলোর বিশেষ ম্যাগাজিন বর্ণিল খাবারদাবার ২০২৪–এ প্রকাশিত