ছোট, বড়, শহুরে, গ্রাম্য—আম ভালোবাসেন সবাই। আমের মৌসুমে অনেকেরই তাই সংগত কারণেই ওজন যায় বেড়ে। আম ক্যালেন্ডার অনুসারে, মৌসুম যাই যাই করছে। এমন সময় জেনে নেওয়া যাক আম সম্পর্কে অন্য রকম কিছু তথ্য।
খ্রিষ্টের জন্মেরও ৩২৭ বছর আগে মহাবীর আলেকজান্ডার সিন্ধু উপত্যকায় আমবাগান দেখে মুগ্ধ হনভারতবর্ষে পাল রাজাদের আমলে আমের চাষ হতোউপমহাদেশের ইতিহাস জানায়, আম সব সময়ই রাজরাজড়াদের প্রিয় ফল ছিলসম্রাট বাবর তাঁর রাজত্বকালে আমকে ভারতের শ্রেষ্ঠ ফল হিসেবে আখ্যায়িত করেনমোগল সম্রাট আকবর ভারতের লাখবাগে এক লাখ আমের চারা রোপণ করেছিলেনআমের শত রকমফেরের মধ্যে ফজলি একটি জনপ্রিয় আম। কথিত আছে, মোগল বাদশাহ আকবরের দরবারে এক বাইজি ছিলেন—নাম ছিল ফজল বিবি। বৃদ্ধ বয়সে ফজল বিবিকে বাদশাহ তাঁর আমবাগানের এক কোণে একটা ঘর তৈরি করে থাকতে দেন। ফজল বিবির ঘর ছিল একটি আমগাছের তলায়। সেই গাছে বড় বড় আম ধরত। ফজল বিবি মারা যাওয়ার পর মানুষ ওই আমের নাম দেয় ফজলিপৃথিবীর সব দেশেই বাণিজ্যিকভাবে আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশও ব্যতিক্রম নয়। তাই বাজার থেকে আম কিনে ভালো করে ধুয়ে, কেটে খেতে হবে, কোনো সমস্যা হবে নামিয়াজাকি অ্যাগ্রিকালচারাল ইকোনমিক ফেডারেশনের হিসাব অনুযায়ী, জাপানের সূর্যডিম বা মিয়াজাকি বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। জাপানে ২০১৯ সালে এক জোড়া মিয়াজাকির দাম উঠেছিল প্রায় পাঁচ হাজার ডলার, অর্থাৎ চার লাখ টাকার বেশি। বাংলাদেশে বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে এই আম উৎপাদন করা হচ্ছে। ২ থেকে ৫ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হয়তবে জাপানের মিয়াজাকি আর বাংলাদেশের মিয়াজাকি এক নয়। জাপানে এই আমের জন্য বিশেষ নেট হাউস তৈরি করা হয়, নিয়ন্ত্রিতভাবে সূর্যের আলোর প্রবেশ করানো হয় বা মেপে মেপে পানি দেওয়া হয়—বাংলাদেশে এর কিছুই হয় না। তাই বাংলাদেশের মিয়াজাকিতে সে রকম রংও হয় না। এ কারণেই দাম কমঅনেকে বলে, আম খেলে ওজন বাড়ে। তবে আম খেলে ওজন বাড়বে নাকি কমবে, সেটা নির্ভর করবে আপনি কখন আম খাচ্ছেন, কী পরিমাণ খাচ্ছেন এবং কীভাবে খাচ্ছেন তার ওপর। তাই আম খাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে নিয়ম মেনে বুঝেশুনে আম খানতারুণ্য ধরে রাখতে আম খুবই কার্যকর। আমে থাকা ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। ফলে ত্বক হয় সতেজ ও টানটান। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ই, যা ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারীআম প্রি-বায়োটিক, ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন ৬, পটাশিয়াম, খনিজ ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদানে সমৃদ্ধ। কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান স্তন ক্যানসার ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়আমের খোসাতেও আছে ভিটামিন এ, সি, ই ও বি৬ এবং পটাশিয়ামের মতো মিনারেল। শুধু তা–ই নয়, আমের খোসা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও ফাইবারেরও দারুণ উৎস। আমের পাতাও উপকারী। যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরা যদি পাঁচ-ছয়টি আমপাতা ধুয়ে একটি পাত্রে সেদ্ধ করে ছেঁকে নিয়ে সেই পানি পান করেন, তাহলে সেটা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে