আপনি নিজে রান্না করতে পছন্দ করেন। পরিবার থেকে বন্ধুবান্ধব, সবাই আপনার রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অথচ আপনি যখন অন্যের বাসায় দাওয়াতে যান, মনে হয়, এত স্বাদের রান্না আপনি আগে কখনো খাননি। আপনিও ওই পদ বানান, কিন্তু এতটা মজা হয় না। ওই মুহূর্তে নিজের রান্নার চেয়ে সেই দাওয়াতের রান্নাকে আপনার মনে হয় অনেক বেশি মজার। এই মনে হওয়াটা আপনার একার নয়। আপনি একাই শুধু ‘খারাপ’ রান্না করেন আর বাকি সবাই ভালো রান্না করেন, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। কোন রেসিপি বা কোন মসলা ব্যবহার করেছে, এসব নিয়েও ব্যস্ত হওয়ার দরকার নেই। কেননা, এর পেছনে আছে মানুষের অদ্ভুত কিছু মনঃকৌশল, যার কারণে আপনি আপনার যে বন্ধুর রান্না খাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন। আপনার সেই বন্ধু আবার নিজের নয়; বরং আপনার রান্না খাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। কেন এমন হয়?
আগাম কোনো প্রত্যাশা না থাকা
ইংরেজ কবি ও নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বলেছিলেন, প্রত্যাশা যত কম রাখবেন, জীবনে তত ভালো থাকবেন। খাবারের ক্ষেত্রেও কথাটা সত্যি। আপনি যখন নিজে কোনো খাবার তৈরি করেন, তখন আপনার আগে থেকেই একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়ে থাকে। তাই মজা হলেও সেটা স্বাভাবিকই লাগে। কিন্তু অন্যের তৈরি করা খাবারের ক্ষেত্রে যেহেতু আগাম কোনো ধারণা থাকে না, তাই স্বাদটাও একটু বেশিই মনে হয়। আপনি খাবার তৈরির প্রক্রিয়ার ভেতরে থাকেন না, এটাও ওই খাবারটাকে আপনার কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে।
খাবারের সঙ্গে মিশে থাকা ভালোবাসা
না, বাংলা সিনেমায় দেখানো মায়ের রান্নায় মিশে থাকা ভালোবাসার ধারণাটা মোটেও মিথ্যা নয়; বরং আমরা যখন আমাদের আপনজনের তৈরি করা খাবার খাই, তখন তাদের সঙ্গের চমৎকার সম্পর্ক, সুন্দর স্মৃতি আর ভালোবাসার অনুভূতিগুলোও সেই খাবারের স্বাদকে বাড়িয়ে দেয় অনেকাংশে।
রুটিন ভাঙার আনন্দ
সাধারণ ছুটির দিনের চেয়ে স্কুল ফাঁকি দিয়ে কাটানো ছুটি যে বেশি মজা লাগত, এটি খেয়াল করেছেন নিশ্চয়? খাবারের ব্যাপারটাও তা–ই। নিজের খাবার খাওয়া, তৈরি করা, রান্না করা, সবকিছুই আসলে আমাদের জীবনের দৈনন্দিন রুটিনের একটা অংশ। অন্য কেউ রান্না করলে তখন এই রুটিনে একটু ছেদ পড়ে, ফলে আমরা খাবারটা খুব আনন্দের সঙ্গে খাই।
একটুখানি বিজ্ঞান
বিজ্ঞান বলে কোনো খাবার নিয়ে বেশি চিন্তাভাবনা করতে থাকলে, ওই খাবার খাওয়ার কৌতূহল অনেকখানি কমে যায়। একটা খাবার নিজে তৈরি করার জন্য অনেকটা সময় জ্ঞাত বা অজ্ঞাতে মাথার মধ্যে সেই খাবারের কথা ঘুরতে থাকে। অন্য কেউ তৈরি করলে এ সমস্যা থাকে না। ফলে খাওয়ার আগ্রহটা বলবৎ থাকে।
সারপ্রাইজ
সারপ্রাইজ শুধু উপহার পাওয়ার ক্ষেত্রে নয়, বরং সারপ্রাইজ জিনিসটা খাবারেও যোগ করে বাড়তি স্বাদ। একটা জিনিস নিজের হাতে বানিয়ে খাওয়ার মধ্যে অনেক পরিকল্পনা, বাজারের লিস্ট আর দিনের হিসাব–নিকাশ থাকে। কিন্তু অন্য কেউ রান্না করে খাওয়ালে তখন সেটা পরিকল্পনা ছাড়াই খাওয়া হয়। ফলাফল? অন্যের হাতের খাবার আরও বেশি খেতে ইচ্ছা করে।
গবেষণা বলছে, যে রান্নাটা আপনি করছেন, সেই একই রান্না যদি অন্য কেউ করে, তাহলে সেটার স্বাদ শতকরা ৩০ ভাগ বেড়ে যায়! মানে ৩০ শতাংশ বেশি সুস্বাদু লাগে। অন্যের রান্না করা খাবার ভালো লাগার পেছনে রান্নাসংক্রান্ত ব্যাপার কম; বরং অন্যান্য মানসিক কারণ বেশি দায়ী। কাজেই কারও খাবার ভালো লাগলেই এটা নিয়ে ঈর্ষা করা বা রেসিপি জেনে নেওয়ার ইচ্ছাটাকে নিয়ন্ত্রণ করুন। অন্যের হাতের যে খাবার খেয়ে আপনি রেসিপির জন্য মাথা কুটে মরছেন, সেই মানুষটাই আবার ওই খাবার নিজেরটা নয়, বরং আপনারটাই পছন্দ করছে। শুধুই নিজেকে ভালোবাসার এই যুগে রান্নার অজুহাতেও যদি একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে ভালোবাসতে শেখে, শিখুক না! ক্ষতি কী তাতে?
তথ্যসূত্র: ডেইলি ফ্রেশ থ্রেড