নানা মসলায় গরু–খাসির মাংস

কোরবানির মাংস যে সব সময়ই নানা রকম মসলায় কষিয়ে রান্না করতে হবে, এমন নয়। হালকা মসলা দিয়েও রান্না করতে পারবেন গরু বা খাসির মাংস। স্বাদেও আসবে নতুনত্ব। রেসিপি দিয়েছেন আফরোজা নাজনীন

কাটা মসলায় গরু ভুনা

ছবি: কবির হোসেন

উপকরণ: গরুর মাংস ১ কেজি, রসুন কোয়া ২ টেবিল চামচ, আদার চাকা ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ (চাক করে কাটা) ৩ টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, ধনেগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচকুচি ২ টেবিল চামচ, জয়ফল–জয়ত্রীগুঁড়া ১ চা–চামচ, আস্ত গোলমরিচ ৭টি, গরমমসলার গুঁড়া ১ চা–চামচ, এলাচি ৭টি, দারুচিনি ৪ টুকরা, লবঙ্গ ৪টি, তেজপাতা ৩টি, পানি পরিমাণমতো, লবণ স্বাদমতো, শর্ষের তেল ১ কাপ।

প্রণালি: গরমমসলার গুঁড়া ছাড়া বাকি সব উপকরণ মাংসে দিয়ে খুব ভালো করে মাখিয়ে নিন। মাংসটি এবার চুলায় দিয়ে দিন। আস্তে আস্তে নাড়তে থাকুন। ভালো করে কষানো হলে পরিমাণমতো পানি দিয়ে ঢেকে দিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে গরমমসলার গুঁড়া ছড়িয়ে দিয়ে নামিয়ে নিন।

থাই বিফ বোন ব্রথ

উপকরণ: গরুর হাড় দেড় কেজি, লেমন গ্রাস ৩ ইঞ্চি লম্বা করে কাটা ২টি স্টিক, থাই আদা ১ ইঞ্চি, রসুন কোয়া ৫টি, ছোট পেঁয়াজ (চাক করে কাটা) ৩টি, ধনেপাতার ডাঁটি টুকরা করা ৩টি স্টিক, আস্ত গোলমরিচ ১ টেবিল চামচ, সেলারি টুকরা কাটা ৩টি স্টিক।

প্রণালি: গরুর হাড়গুলো একটি পাত্রে নিয়ে তাতে এমনভাবে পানি দিন, যাতে হাড়গুলো ডুবে যায়। বলক এলে পানির ওপর যেসব ময়লা ভেসে উঠবে, সেগুলো চামচ দিয়ে তুলে নিন। বাকি সব উপকরণ দিয়ে ঢেকে দিয়ে ঢিমে আঁচে দুই থেকে চার ঘণ্টা রান্না করুন। তারপর নামিয়ে ঠান্ডা করে ব্রথটা ছেঁকে নিন। এই ব্রথ সাত দিন পর্যন্ত নরমাল ফ্রিজে রেখে দেওয়া যাবে। এই ব্রথ ব্যবহার করে খুব সহজেই পছন্দমতো স্যুপ বানিয়ে নিতে পারবেন।

খাসির সাদা মাংস

উপকরণ: খাসির মাংস আধা কেজি, টক দই ১ কাপ, পেঁয়াজবাটা ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ৪টি, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা–চামচ, মরিচগুঁড়া আধা চা–চামচ (ঐচ্ছিক), আস্ত গরমমসলা ও তেজপাতা ৩টি, কাঠবাদামবাটা ১ টেবিল চামচ, তরল দুধ আধা কাপ, ক্রিম আধা কাপ, সাদা গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা–চামচ, আদা ও রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, পোস্তবাটা ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল ১ কাপ।

প্রণালি: ক্রিম ও দুধ ছাড়া অন্য সব উপকরণ মাংসে ভালো করে মেখে মিশিয়ে ৩০ মিনিট মেরিনেট করুন। তারপর একটা হাঁড়িতে মেরিনেট করা মাংস দিয়ে চুলায় বসিয়ে ঢিমে আঁচে রান্না করুন। ঢেকে দিন। মাঝেমধ্যে নেড়ে কষিয়ে নিন। আলাদা করে পানি দিতে হবে না। মাংস প্রায় সেদ্ধ হয়ে এলে দুধ ও ক্রিম দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে নিন। আস্ত কাঁচা মরিচ দিন। মাংস থেকে তেল বের হয়ে এলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

থাই বিফ জারকি

উপকরণ: বিফ জারকি: হাড় ও চর্বি ছাড়া গরুর মাংস ১ কেজি ( জুলিয়ান কাটা), তেল ২ টেবিল চামচ, সয়াসস ২ টেবিল চামচ, ফিশ সস ২ চা–চামচ, চিনি ২ চা–চামচ, লবণ এক চা–চামচের চার ভাগের এক ভাগ, গোলমরিচের গুঁড়া এক চা–চামচের চার ভাগের এক ভাগ।

ডিপিং সস: তেঁতুলগোলা পানি ২ চা–চামচ, ফিশ সস ২ চা–চামচ, ব্রাউন সুগার ৩ চা–চামচ, পানি ১ কাপ, লেবুর রস ১ চা–চামচ, লেবুপাতাকুচি ১টি, ধনেপাতাকুচি ১ চা–চামচ, পেঁয়াজকুচি ১টি, টেলে নেওয়া চালের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, থাই মরিচবাটা আধা চা–চামচ।

প্রণালি: একটি পাত্রে বিফ জারকির সব উপকরণ একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এর মধ্যে পাতলা লম্বা করে জুলিয়ান কাট গরুর মাংসগুলো দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে মেরিনেট করে ফ্রিজে কমপক্ষে চার ঘণ্টা রাখুন। এরপর একটা বেকিং ট্রেতে বাটার পেপার বিছিয়ে নিয়ে তার ওপর বিফ জারকিগুলো একটা একটা করে বিছিয়ে প্রিহিটেড ওভেনে ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ৩০ মিনিট বেক করে নিন। তারপর বিফ জারকিগুলো উল্টে দিয়ে আবার ৩০ মিনিট বেক করুন। বিফ জারকিগুলো একটু ভাজা ভাজা হবে, কিন্তু নরম থাকবে।

এই বিফ জারকিগুলো ডিপিং সস দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

ডিপিং সস তৈরির জন্য ১ কাপ পানি এবং ব্রাউন সুগার একসঙ্গে ভালো করে জ্বাল দিয়ে নেড়ে একটি সিরাপ বানিয়ে ঠান্ডা করে নিন। একটা পাত্রে এই সিরাপের সঙ্গে সসের অন্য সব উপকরণ একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিন।

নেহারি

উপকরণ: খাসির পায়ের নিচের অংশ ২ কেজি, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, আস্ত রসুনের কোয়া আধা কাপ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচকুচি ৬টি, তেজপাতা ৩টি, ছোট এলাচি ৫টি, বড় এলাচি ২টি, স্টার মসলা ২টি, লবঙ্গ ৫টি, দারুচিনি ৩ টুকরা, শুকনা মরিচগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা–চামচ, ধনেগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, গোলমরিচ ২০টি, পাউরুটি ২ টুকরা, পোস্তবাটা ১ টেবিল চামচ, বাদামবাটা ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল আধা কাপ।

বাগারের উপকরণ: তেল ১ কাপের চার ভাগের এক ভাগ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, রসুনকুচি ১ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ ৫টি, আদাকুচি ১ চা–চামচ, গরমমসলা আধা চা–চামচ, ভাজা জিরার গুঁড়া আধা চা–চামচ।

প্রণালি: প্রেশার কুকারে ৬ কাপ পানিতে খাসির পায়ের নিচের টুকরাগুলো দিয়ে দিন। এবার এতে পোস্তবাটা ও বাদামবাটা বাদে বাকি সব মসলা একে একে দিন। ভালো করে নেড়েচেড়ে নিন। জ্বাল বাড়িয়ে প্রেশার কুকারের ঢাকনা লাগিয়ে আধা ঘণ্টা চুলার ওপর রাখুন। চারপাশের লাল অংশ ফেলে পাউরুটি পানিতে ভিজিয়ে নিংড়ে চিপে পানি ফেলে নিন। আধা ঘণ্টা পর প্রেশার কুকারের ঢাকনা খুলে আরেকটি ছড়ানো পাত্রে ঢালুন মসলাসহ খাসির পায়াগুলো। পাত্রটি চুলায় দিয়ে পোস্তবাটা ও বাদামবাটা দিন। পেঁয়াজ গলে যাওয়ার আগপর্যন্ত ভালো করে কষান। চুলার জ্বাল জোর আঁচে থাকবে। কিছুক্ষণ পর ২ কাপ পানি দিন। পানিতে ভেজানো নরম পাউরুটি আধা কাপ পানিতে পেস্ট তৈরি করে অল্প অল্প করে দিয়ে দিন হাঁড়িতে। আরও পাঁচ মিনিট রান্না করে চুলার আঁচ কমিয়ে দিন।

আরেকটি প্যানে বাগারের জন্য তেল দিন। পেঁয়াজকুচি ভেজে নিন। পেঁয়াজের রং স্বচ্ছ হয়ে এলে রসুনকুচি দিন। ভালো করে নাড়ুন। আদাকুচি ও শুকনা মরিচ দিন। পেঁয়াজ বেরেস্তা হয়ে গেলে ২ চা–চামচ নেহারির ঝোল দিয়ে ঢেকে দিন প্যান। ২ মিনিট পর ঢাকনা খুলে বাকি নেহারিটুকু ঢেলে দিন। বলক উঠলে গরমমসলার গুঁড়া ও জিরার গুঁড়া দিয়ে ঢেকে দিন। চুলার আঁচ কমাবেন না। পাঁচ মিনিট পর চুলা বন্ধ করে আরও পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন। নেড়ে পরিবেশনের পাত্রে ঢালুন। লেবু, পেঁয়াজ বেরেস্তা, আদাকুচি ও ধনেপাতাকুচি ছিটিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার নেহারি।