মেট্রোরেলের বদৌলতে দিয়াবাড়ি আজকাল সহজ গন্তব্য হয়ে উঠেছে। মেট্রোরেল পল্লবী স্টেশন পেরোলেই স্বস্তি পায় চোখ। কংক্রিট ছাড়িয়ে দেখা যায় খোলা সবুজ প্রান্তর আর মনোরম লেক। মেট্রোরেলের উত্তরা সেন্টার স্টেশন থেকে হাতের বাঁয়ে দিয়াবাড়ির দিকে কিছুটা পথ গেলেই বিশাল জায়গাজুড়ে শ খানেক খাবারের দোকান। সবই স্ট্রিট ফুড। জায়গাটাও বেশ রমরমা।
স্ট্রিট ফুড শুনে শুধু চটপটি, ফুচকা, মোমো মনে করলে ভুল করবেন। এসব তো আছেই, সঙ্গে পাবেন বিশেষ কয়েক ধরনের খাবার। মাঝামাঝি সারি ধরে এগিয়ে গেলে চোখে পড়ে বেশ কয়েকটি সামুদ্রিক মাছের দোকান। কী নেই? চিংড়ি থেকে শুরু করে লবস্টার, স্কুইড, কোরাল, রুপচাঁদা ছাড়াও মিলবে ছোট-বড় নানা আকারের রং-বেরঙের সামুদ্রিক মাছ।
টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখা মাছ থেকে দরদাম করে বেছে নেওয়ার পর চোখের সামনেই সেগুলো কেটেকুটে রান্না করে দিচ্ছিলেন সি ফুড লাইভ কিচেনের মমিনুল ইসলাম। সব দোকানেই এই ব্যবস্থা। মাছের দাম সম্পর্কে ধারণা দিলেন মমিনুল। আকারভেদে স্কুইড ১৫০ থেকে ৩০০, লবস্টার ২০০-৫০০ টাকা, আর রুপচাঁদা, কোরাল ইত্যাদির দাম হাজার-বারো শর মধ্যেই। এগুলো কোথা থেকে আনা হয় জিজ্ঞেস করতেই মমিনুল বলেন, ‘ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিনই কক্সবাজার থেকে বেশির ভাগ মাছ আসে।’ দামে মিলে গেলে ক্রেতার পছন্দসই মাছ ফ্রাই, ঝালফ্রাই অথবা বারবিকিউ করে দেন বিক্রেতারা।
জ্বলন্ত চুলায় কড়াইয়ের পর কড়াই সাজানো গরুর মাংস, ভুঁড়ি, খাসি, হাঁস, মুরগি ইত্যাদির ভুনা মাংসও এখানে পাওয়া যায়। খেয়াল করলাম এই দোকানগুলোর বেশির ভাগ দোকানিই নারী। স্বামী-সন্তানদের পাশে রেখেই কাজ করে যাচ্ছেন। ভুনা মাংসের সঙ্গে খাওয়ার জন্য তৈরি করছেন চিটা রুটি, চাপটি, পরোটা, চাল এবং আটার রুটি। যেকোনো রুটি বা চাপটির দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা। প্লেটপ্রতি গরুর মাংস ২০০-২৫০ টাকা, ভুঁড়িভুনা ২৫০-২৮০ টাকা, খাসি ৩০০-৩৫০ টাকা, হাঁস ২৫০-৩০০ টাকা, মুরগি ২০০ টাকা। পরোটা, নান দিয়ে মুরগি বা গরুর চাপও খেতে পারবেন। খরচ হবে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
সামনের দিকে পি ফর পিৎজার দোকানে দেখলাম উপচে পড়া ভিড়। চোখের সামনেই তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু পিৎজা। ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ১০০ টাকার মধ্যে খেতে পারবেন নানান স্বাদের পিৎজা। বেশ কয়েকটি মোমোর দোকানও আছে। পাঁচ পিসের প্লেট ১২০ থেকে ২০০ টাকা। বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই, ফ্রাইড রাইসের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা। আরও পেয়ে যাবেন নানা আকার ও মাপের দোসা থেকে শুরু করে রাজ কচুরি এবং দই ফুচকা।
চাপ্রেমীদের জন্য আছে প্রায় সব ধরনের চায়ের ব্যবস্থা। সেখানকার এক চা বিক্রেতা জামাল উদ্দিন অবশ্য খানিকটা হতাশার সুরেই বলছিলেন, গরমে চা খুব একটা পান করে না মানুষ। তবে চাপ্রেমীরও অভাব নেই, এ–ও স্বীকার করলেন। জানান, মাটির কাপে করে ঘন দুধের স্পেশাল মালাই চা খেতেই অনেকে আসেন। পানের দোকানগুলোতে চোখে পড়ল রঙিন সব মসলার সমাহার। আছে আগুন পানও। সব মিলিয়ে পুরো জায়গাই যেন উৎসব উৎসব ভাব।
আমরা গিয়েছিলাম গত রোববার বিকেলে। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসেও এত লোকের সমাগম হবে আশা করিনি। সন্ধ্যা নামতেই এই ভিড় যেন আরও বাড়তে শুরু করল। বুঝলাম, সারা দিন কাজের পর পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে এসেছেন অনেকে। মেট্রোর কারণে সুবিধাও হয়েছে। তা ছাড়া মেট্রোর নিচে পিচঢালা মসৃণ রাস্তা দিয়ে যাঁরা গাড়ি বা মোটরসাইকেলে করে আসতে চান, তাঁদের জন্য মাঠের এক পাশে আছে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। বাহন রেখে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াতে পারবেন, চেখে দেখতে পারবেন পছন্দসই খাবার।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ফিরে এসে যখন সাজিয়ে রাখা মাছের ছবি ফেসবুকের স্টোরিতে দিলাম, একজন তো জিজ্ঞেসই করে বসল, কক্সবাজার গিয়েছি কি না? বুঝলাম, হুট করে সমুদ্রের কাছে চলে যেতে না পারলেও মন চাইলে সমুদ্রের মাছ তো উপভোগ করাই যায়। আর এ জন্য উত্তম একটা জায়গা হতে পারে দিয়াবাড়ি।