কোরিয়ান সিনেমাটা কিছুদিন আগেই দেখেছিলাম। একেবারে শুরুতে দেখা যায়, ব্যবসা করতে গিয়ে অনেক টাকা ঋণী হয়ে পড়ে এক তরুণ। টাকার জন্য সবাই হন্যে হয়ে তাঁকে খুঁজতে থাকে। এক সময় আত্মহত্যা করবে বলে শহরের সেতু থেকে সে নদীতে লাফিয়ে পড়ে। কিন্তু না মরে খানিক দূরের নির্জন এক দ্বীপে সে ভেসে ওঠে। নতুন দ্বীপে এসে তার মনে হয়, চাইলে যেকোনো সময়ই আত্মহত্যা করা যাবে, এর মধ্যে দ্বীপটা একটু ঘুরে দেখা যাক। ঘুরে দেখতে দেখতে তার খিদে পায়। গাছ থেকে ফল, লতাপাতা পেড়ে খেয়ে সে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন ঘুম থেকে উঠে নদী থেকে মাছ ধরে। পাথরে পাথর ঠুকে আগুন ধরিয়ে মাছ ঝলসে খায়। পরনের এক পোশাকেই চলতে থাকে দিনের পর দিন। পাখির বিষ্ঠা থেকে শস্যদানার বীজ সংগ্রহ করে শুরু করে কৃষিকাজ। দ্বীপে আসার সময় পরনে একটা কোট ছিল, ওটা দিয়ে ফসল রক্ষার জন্য বানিয়ে ফেলে কাকতাড়ুয়া। জীবনটা তার আর আগের মতো খারাপ লাগে না। গাছ, মাছ, পাখি, প্রকৃতির সঙ্গে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে থাকে প্রতিটা দিন। মাথা থেকে আত্মহত্যার ভূত দূর হয়ে যায়! বুঝতে পারে, বেঁচে থাকার জন্য আদতে খুব বেশি কিছুর দরকার নেই।
ফ্যাশনে একটা কথা দশকের পর দশক ধরে খুবই জনপ্রিয়, ‘লেস ইজ মোর’। এর মানে, সামান্যই যথেষ্ট। কয়েক বছর ধরে পোশাক ও সাজ—দুই ক্ষেত্রেই ‘বাড়াবাড়ি’ যেকোনো কিছু চলতি ধারার বাইরে। করোনা মহামারিকালে ঘরবন্দী জীবন অল্পে বাঁচা যে সন্তুষ্টিও দিতে পারে, সেটি আরও একবার শিখিয়ে দিয়েছিল হাতেকলমে। খাওয়াদাওয়াতেও কিন্তু একই নিয়ম খাটে। রুটি, সবজি, ভাত, ডাল, আলুভর্তা, ডিম ভাজি, ফ্রিজ থেকে এক পোটলা ছোট মাছ বের করে চচ্চড়ি...এতেই চলে যেতে পারে সপ্তাহ। ডাল, আলুভর্তা, ডিম ভাজি দিয়ে গরম ভাত খাওয়ার যে মজা, সেটাও চেখে দেখতে পারেন। সঙ্গে একটি শুকনা মরিচ আর আধা চা-চামচ ঘি হলে তো কথাই নেই! যেকোনো সবজির খোসা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ভাজি বা ভর্তা করে খেতে পারেন। যেমন লাউ রান্না করে খোসা ভাজি করে খেলেন। সেখানে চিংড়ি শুঁটকি বা সামান্য গুঁড়া চিংড়ি দিলেও স্বাদ বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। আবার কাঁচকলার খোসা সেদ্ধ করে বেটে ভর্তা করে লবণ-মরিচ দিয়ে মাখিয়ে গরম-গরম ভাতের সঙ্গে খেতেও লাগে বেশ। কাঁঠালের মৌসুম যায়নি। অনেকের ঘরেই কাঁঠালের বিচি আছে। সেটিও ভর্তা বা ভাজি করে খেতে ভালো লাগবে।
রেসিপিবিদ জেবুন্নেসা বেগম জানালেন, তাঁর বাসার সামনেই ভ্যানে কাঁচাবাজার নিয়ে আসেন বিক্রেতা। সেখান থেকে ইদানীং প্রয়োজনীয় সবজি কিনছেন। ঘর থেকে দুই পা ফেললেই মুদিদোকান। সেখান থেকেই ডিম, আলু, আদা, রসুন কিনতে পারছেন। তিনি বলেন, ‘সবসময় যে রেসিপি দেখে উপকরণ সংগ্রহ করে রান্না করতে হবে, বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। হাতের কাছে যা কিছু আছে, সেসব দিয়ে রান্না চাপিয়ে দেওয়াও একটা শিল্প। বাড়িতে চাল আছে, ডাল আছে, দু–একটা সবজি দিয়ে পাতলা খিচুরি রান্না করতে পারেন। ঘরের শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই খেতে পারবেন। খেতে ভালো লাগবে, পুষ্টিও মিলবে। ভর্তা, ভাজি, কোরমা, তরকারি—নানান রকমভাবে খাওয়া যায় ডিম। এখন তো অনেকের ফ্রিজেই কোরবানির মাংস আছে। চাইলে গরুর মাংসের সঙ্গে পেঁপে, আলু, সয়াবিনের বড়ি, মেটে আলু, মানকচু, ফুলকপি, পটল এসবও যোগ করতে পারেন। সহজ কথায়, বাড়িতে যেসব উপকরণ আছে, সেসব দিয়েই সহজে রান্না করা সম্ভব নানান পদ।