মাংসের বিকল্প, খরচও কম, কী খাবেন

বুদ্ধি খাটিয়ে এসব খাবার থেকেই প্রোটিনের চাহিদা মেটানো যায়
বুদ্ধি খাটিয়ে এসব খাবার থেকেই প্রোটিনের চাহিদা মেটানো যায়

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এক মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম জায়গাভেদে কেজিতে প্রায় ১০০ টাকাও বেড়েছে। বাজারে বিক্রি হওয়া দেশি, সোনালিসহ সব জাতের মুরগিরই দাম বেড়েছে। গরু বা খাসির মাংসের দামও চড়া। নিম্নবিত্ত পরিবারে মাংস দিয়ে প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর অন্যতম জায়গা ছিল ব্রয়লার। দাম বাড়ায় সেখান থেকেও হাত গুটিয়ে নিচ্ছে মধ্য ও নিম্নবিত্ত। তবে সুস্থ–সবল থেকে নিজের শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে হলে সঠিক পরিমাণে খাবার খাওয়ার বিকল্প নেই।

মুরগির মাংস প্রথম শ্রেণির প্রোটিনের অন্যতম উৎস। ১০০ গ্রাম চামড়া ছাড়া মুরগির বুকের মাংসে ২২ দশমিক ৩ গ্রামের মতো প্রোটিন পাওয়া যায়। প্রথম শ্রেণির আমিষ হওয়ার কারণে এতে সব কটি অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিডই পাওয়া যায়। কিন্তু তার মানে এই নয়, মুরগি ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাওয়ায় এই ঘাটতি পূরণ করা যাবে না। মুরগির মাংসের প্রোটিন আমরা অন্য অনেক খাবার থেকেও পূরণ করতে পারি। তাই বিকল্প ভাবতে হবে, যাতে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে আবার পয়সাও খরচ হবে কম। অনেকেই মনে করেন, দামি খাবার মানেই পুষ্টিকর খাবার। কিন্তু বাজার করার সময় একটু ভেবেচিন্তে নিলে বাজারের খরচ ও পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।

আমাদের শরীরের দৈনিক ভিত্তিতে অ্যামিনো অ্যাসিড প্রয়োজন, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে, স্বাস্থ্যকর শরীরের বিকাশ ও বৃদ্ধি বজায় রাখতে সহায়তা করে। প্রথম শ্রেণির প্রোটিন বনাম দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিনের মধ্যে সহজ পার্থক্য হলো, দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন উদ্ভিদে পাওয়া যায় আর প্রথম শ্রেণির প্রোটিন প্রাণীতে। প্রথম শ্রেণির প্রোটিনে প্রয়োজনীয় সব অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে আর দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিনে এক–দুই বা ততোধিক অ্যামিনো অ্যাসিডের ঘাটতি থাকতে পারে।

ডাল, ছোলা, বাদাম, শিমের বিচি, শুকনা মটর, সয়াবিন ইত্যাদিতে দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন পাওয়া যায়। এসব খাবার প্রয়োজনীয় প্রোটিনের জোগান দিতে পারে। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলার ডালে ২০ দশমিক ২ গ্রাম, সেদ্ধ ছোলায় ১০ গ্রাম, মাষকলাইয়ের ডালে ২২ দশমিক ৩ গ্রাম, মুগ ডালে ২৩ দশমিক ৭ গ্রাম, মসুর ডালে ২৭ দশমিক ৭ গ্রাম, মটর ডালে ২২ দশমিক ১ গ্রাম, সয়াবিনে ৩২ দশমিক ৯ গ্রাম, চিনাবাদামে ২২ দশমিক ৫ গ্রাম, মিষ্টিকুমড়ার বিচিতে ২৫ দশমিক ১ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।

প্রতিদিন একটা ডিম খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।

শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব কটি অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিড ডিম ছাড়া অন্য কোনো খাদ্যে এককভাবে পাওয়া যায় না। তাই প্রতিদিন একটা ডিম খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। সেটাও দুষ্প্রাপ্য হলে ভাতের সঙ্গে ডাল মিশিয়ে অ্যামিনো অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। চাল, রুটি, যব ইত্যাদি শস্যদানাতেও প্রোটিন রয়েছে। চালে যে অ্যামিনো অ্যাসিড সীমিত পরিমাণে থাকে, ডালে তা পাওয়া যায় পর্যাপ্ত। আবার ডালে যে অ্যামিনো অ্যাসিডের পরিমাণ সীমিত, চালে তা যথেষ্ট। সুতরাং শস্যদানার সঙ্গে ডাল বা ডালজাতীয় খাদ্য মিশিয়ে খাওয়া হলে প্রোটিনের চাহিদা মাংস ছাড়াও পূরণ করা সম্ভব।

ডাল ও চিনাবাদাম ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন। মিশ্র খাবারও খাওয়া যেতে পারে, যেমন খিচুড়ি। চাল, ডাল, সবজি মিশ্রিত থাকায় ভিটামিন, খনিজ, আমিষ, কার্বোহাইড্রেটসহ বিভিন্ন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে। আবার একসঙ্গে রান্না করা হয় বলে মসলা, তেল ইত্যাদির খরচও হয় কিছুটা কম।

আবার সয়াবিন, শিমের বিচি মাংসের মতো রান্না করে খেতে পারেন। দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন হলেও এগুলো থেকে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। মিষ্টিকুমড়ার বিচি আমরা অনেকেই ফেলে দিই কিন্তু মিষ্টিকুমড়ার বিচি শুকিয়ে ভেজে খেতে পারেন। এতেও অনেকটা আমিষের চাহিদা মিটে যাবে।

খাবারের তালিকায় ছোট মাছও রাখতে পারেন। এগুলো প্রথম শ্রেণির প্রোটিন, খরচ কমাতে ছোট মাছ কিনে মাথা আলাদা করে রাখতে পারেন। মাছটা আগে খাবেন। আরেক দিন মাথা ভর্তা করে খেতে পারেন। বড় মাছের ক্ষেত্রে মাথা ও লেজটাকে রেখে দেওয়া যেতে পারে। পরে সবজি দিয়ে রান্না করে খেলেন। এভাবে দুই দিন দুই পদ হয়ে গেল। আবার চাইলে বড় মাছের মাথা বা লেজ ভর্তা করেও খাওয়া যায়।

এভাবে হিসাব করে বাজার করলে আর রান্নার সময় একটু মাথা খাটালে প্রোটিনের চাহিদাও পূরণ হবে আবার খরচটাও কমবে।