ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের জালালপুর এলাকায় ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল, জালালপুর, পাবনা ৬৬০০’ দিকনির্দেশনা দেওয়া একটি সাইনবোর্ড চোখ পড়ল। বোর্ডের এই নির্দেশনা ধরে যেতেই মিলল একটি হোটেল। নাম ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’। নামটি শুনলে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া একটি ওয়েব সিরিজের কথা মনে পড়ে। তবে সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে কল্লোল লাহিড়ীর লেখা উপন্যাসের কল্যাণে ২০২০ সাল থেকেই নামটি পরিচিতি। ‘কুমড়ো ফুলের বড়া’, ‘বিউলির ডাল’, ‘ছ্যাঁচড়া’, ‘আম–তেল’, ‘মালপোয়া’, ‘চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল’, ‘চন্দ্রপুলি’এবং ‘কচুবাটা’ নামে ছিল উপন্যাসের মোট আটটি অধ্যায়। সেসব পদসহ উপন্যাসে উল্লেখিত হারিয়ে যেতে বসা প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী আরও অনেক খাবার ফিরিয়ে এনেছে এই হোটেল।
দুপুর হওয়ার আগ থেকেই বাড়তে থাকে ভিড়। পাবনা জেলা শহর এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে থাকেন ভোজনরসিক মানুষেরা। রিকশা, অটো, বাইক ও গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করেন নানা পদের মুখরোচক খাবারের জন্য। ধীরে ধীরে আসতে থাকে নানা পদ। খাবার যাঁরা পরিবেশন করেন, তাঁদের পোশাকেও রয়েছে ভিন্নতা। মেয়েরা পরেছেন লালপাড় সাদা শাড়ি আর ছেলেরা লাল রঙে ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’লেখা সাদা টি-শার্ট। স্টিলের থালার ওপর কলাপাতায় পরিবেশন করা খাবারেও ফুটে ওঠে আদি বাঙালিয়ানা। অতিরিক্ত ভাত দেওয়া হচ্ছে স্টিলের বালতি করে।
উপন্যাসের সঙ্গে মিল রেখে একটি বোর্ডে চক দিয়ে লেখা থাকে দুপুর ও রাতের মেনু এবং তার মূল্যতালিকা। সেই বোর্ডে একেক সময় যুক্ত হয় একেক পদ। কখনো আগে থেকেই যোগ করা মেনু হঠাৎ বদলে যায়। এরই মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে গেছে বেশ কিছু পদ, প্রতিদিন সময়ের আগেই যা ফুরিয়ে যাচ্ছে। নারকেল দিয়ে কচুবাটা, আম দিয়ে নলা মাছ, কুমড়োর ছক্কা, পারশে মাছের ঝোল, আম-তেলের বেগুনভাজাসহ বিভিন্ন ধরনের ভর্তার সুনাম এখন ভোজনরসিকদের কাছে।
স্বল্প জায়গায় স্বল্প পরিসরে শুরু করা এই হোটেলে এখন জায়গা পাওয়ায় দুষ্কর। তবু ভিন্ন স্বাদের কিছু খাবারের স্বাদ নেওয়ার জন্য সময় নিয়ে সবাই অপেক্ষা করে। বইয়ের পাতা বা রুপালি পর্দা থেকে বাস্তবে পরিণত হওয়া হোটেলটির বর্তমান বাস্তবচিত্র অনেকটা এমন।
‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ তৈরির পেছনের গল্প জানতে চাইলে স্বত্বাধিকারী সোহানী হোসেন বলেন, ‘হারিয়ে যেতে বসা প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কিছু বাংলা খাবারের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের পরিচয় ঘটানো ও কম খরচে সাধারণ মানুষের খাবারের সুযোগ সৃষ্টি করতেই এই হোটেল। প্রথমে বাসায় আমি রান্নাগুলো করার চেষ্টা করি। প্রতিদিন নিজে এসব রান্নার তদারকি এবং খাবার পরিবেশনের সময় উপস্থিত থাকার চেষ্টা করেছি। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকা ও চলতি পথের মানুষ স্বল্প খরচে এখানে পেটপুরে খেতে পারলেই আমার সার্থকতা।’
উপন্যাসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরও জানান, ‘উপন্যাসের প্রথম অধ্যায়ে “কুমড়ো ফুলের বড়া”তে ইন্দুবালা বলেছেন, “দুপুরের অতিথি হলো মেঘ না চাইতে জল। তাকে পেটপুরে না খাওয়ালে গেরস্তের অমঙ্গল হবে। মাঠভরা ধান হবে না। গোলাভরা ফসল উঠবে না।” আবার “ছ্যাঁচড়া”অধ্যায়ে পড়েছি, তাঁর কাছে মানুষ মানে ছিল জীব। তিনি পেট ভরে ভাত খাইয়ে জীবে প্রেম করতেন। আমিও তা–ই করার চেষ্টা করছি।’