কম খরচে পুষ্টি চাহিদা মেটাবেন কী করে

সবজি, মাছ, মাংস সবকিছুর দামই আকাশছোঁয়া। তবে খাওয়া তো বন্ধ রাখা যাবে না। সুস্থ-সবল থাকতে পুষ্টির দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। ‘তবে একটু ভেবে খাবারগুলো কিনলে ও রাঁধলে বাজার খরচ কমবে, আবার পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হবে,’ বলছিলেন পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী। এমন সবজি কিনুন, যেগুলো খোসা বা বিচিসহ খাওয়া যায়। যেমন শসা, লাউ, পটোল ইত্যাদি। এসব সবজি খোসাসহ খেতে পারেন, আবার খোসা আলাদা করে ভাজি করেও খাওয়া যায়। খোসায় অনেক পুষ্টি থাকে। এগুলোসহ খেলে কম সবজিতেও পুষ্টির চাহিদা ভালোভাবে পূরণ হবে। আবার ধরুন, মিষ্টিকুমড়ার বিচি। এতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এগুলো শুকিয়ে ভেজে খাওয়া যায়। অর্থাৎ বিচিজাতীয় খাবারগুলোও খেতে পারেন।

সবজি বেছে নিন পুষ্টির ওপর ভিত্তি করে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

শাক কেনার সময় মাথায় রাখতে হবে কোনটিতে বেশি পুষ্টি থাকে। যেমন কচুশাক, লালশাক। অন্যান্য শাকের তুলনায় কচুতে প্রচুর আয়রন। লালশাকে থাকে ভিটামিন ‘এ’। এগুলো শরীরের জন্য বেশ উপকারী। একই টাকায় তুলনা করে সবজি কিনতে গেলে লতি খেতে পারেন। পেঁপে বা চালকুমড়ার তুলনায় লতিতে বেশি পুষ্টি। আলু না কিনে গাজর কিনুন। গাজরে ভিটামিন বেশি। আলুতে থাকে কেবল কার্বোহাইড্রেট। এটি আপনার ওজন বাড়িয়ে দেবে। মূলত খাবারগুলো এমনভাবে নির্বাচন করুন, যেন অবশিষ্ট অংশ না থাকে। অনেক সবজি না কিনে বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ অল্প সবজি কেনার পরামর্শ দিলেন তামান্না চৌধুরী।

কম খরচে পুষ্টির চাহিদা পূরণে সবজি রান্নার সময় একটি ডিম দিয়ে দিতে পারেন। চীনা বাদাম বেটে ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন। মিশ্র খাবারও খাওয়া যেতে পারে। যেমন: খিচুড়ি। চাল, ডাল, সবজিমিশ্রিত থাকায় ভিটামিন, খনিজ, আমিষ, কার্বোহাইড্রেটসহ বিভিন্ন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে। আবার একসঙ্গে রান্না করা হয় বলে মসলা, তেল ইত্যাদির কম খরচ হয়। আলাদা রান্না করতে গেলে মসলার খরচ বেড়ে যায়। আবার শাপলা, কচুর ডগা, কচুর মুখী দিয়ে ডাল রান্না করলেও প্রচুর পুষ্টি পাওয়া যায়। খাবারের পরিমাণ বাড়ে। অনেকে খেতে পারেন। মাছের ক্ষেত্রে পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী বলেন, ‘ছোট মাছ আনলে মাথা আলাদা করে রাখতে পারেন। মাছটা আগে খাবেন। পরে আরেক দিন মাথা ভর্তা করে খেতে পারেন। বড় মাছের ক্ষেত্রে মাথা ও লেজটাকে রেখে দেওয়া যেতে পারে। পরে সবজি দিয়ে রান্না করে খেলেন। এভাবে দুই দিন দুই পদ হয়ে গেল। খরচটাও কমল।’

ডিম দিয়ে লাউয়ের খোসা ভাজি

মাংসের ক্ষেত্রে বিষয়টি কেমন? ‘একটি মুরগি কিনে দুই ভাগ করে রাঁধতে পারেন। প্রথম ভাগ পেঁপে দিয়ে রান্না করলেন। পরের ভাগ মুগডাল দিয়ে। ডাল ও মাংস মিলে আমিষের চাহিদা কিন্তু ভালোভাবে পূরণ হয়ে গেল। গরু, খাসির মাংস রেড মিট। এগুলো এমনিতেই স্বাস্থ্যের জন্য অপকারী। এসব মাংস এড়িয়ে যাওয়াটাই ভালো। খেলেও মাসে একবার খেতে পারেন।’ ভিটামিন ‘ডি’ আমাদের অনেক রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এই ভিটামিন খুব সহজেই রোদ থেকে পাওয়া যায়। এটি পাওয়া যায় একদম বিনা মূল্যে, প্রাকৃতিকভাবে। সম্ভব হলে বেলা ১১টা থেকে ১টার মধ্যে কিছুটা সময় রোদে কাটান। এ সময় রোদে ভিটামিন ডি বেশি থাকে। ফলের ক্ষেত্রে মৌসুমি ও দেশীয় ফলের দাম সাধারণত নাগালের মধ্যে থাকে। এ ধরনের ফল খেতে পারেন। স্বল্প খরচে পুষ্টির ঘাটতি পূরণে এ ধরনের কৌশল অবলম্বন করার পরামর্শই দিলেন পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী।