শিমবিচি, লাল আলুতে মাছের ঝোল

গ্রামে থাকতে দেখেছি, কারও বাড়িতে অতিথি অথবা কনে দেখতে এলে আম্মার ডাক পড়ত। রান্নার জন্য আম্মাকে অনুরোধ-উপরোধ করে নিয়ে যাওয়া হতো। আমার মা আয়েশা খাতুন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে থেকে নানান দেশের বিচিত্র খাবার খাই প্রতিনিয়ত। মজাও লাগে। কিন্তু আম্মার হাতের রান্না সবচেয়ে সেরা। আম্মার রান্না করা যেকোনো খাবার খেলে কী যে শান্তি পাই, বলে বোঝানো যায় না। তাই মাঝেমধ্যেই হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার জারুলিয়া গ্রামে ফোন করে জেনে নিই কীভাবে রান্না করতে হবে। আমার প্রিয় খাবারের মধ্যে একটি তাজা শিমের বিচি আর লাল আলু দিয়ে কাতলা অথবা মাগুর মাছ। আমার সঙ্গে সঙ্গে আপনারাও জেনে নিন কীভাবে রান্না করতে হবে এ মজাদার তরকারি।

গুঁড়া মশলাগুলো এভাবে আলাদা করে রাখতে পারেন
ছবি: সংগৃহীত

উপকরণ: কাতলা অথবা মাগুর মাছ। লবণ, ১ টেবিল চামচ করে মরিচগুঁড়া, ধনেগুঁড়া। ১ চা-চামচ করে জিরাগুঁড়া, হলুদগুঁড়া। পেঁয়াজবাটা ও পেঁয়াজকুচি, রসুনবাটা।‌ খোসা ছড়ানো আলু ও শিমের বিচি। আমি রান্না করেছি কাতলা মাছ দিয়ে। ফোনে মা যেভাবে আমাকে বলেছেন, সেভাবেই লিখছি।

মাছগুলো মশলা দিয়ে মাখিয়ে রাখতে হবে

‘মাছগুলো ধুয়ে পানি ঝরায়ে নে। দরকারে চিপে পানি ঝরাইয়া নিবি। এরপর এক চিমটি লবণ, মরিচগুঁড়া, হলুদগুঁড়া, রসুন ও পেঁয়াজবাটা দিয়ে ১৫ মিনিট মাখিয়ে রেখে দে। মাছ ভাজার দরকার নাই। মাছ তেলে ভাজলে আসল স্বাদ হারায়ে যায়।
‘একটি কড়াইয়ে পরিমাণমতো তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি হালকা বাদামি করে ভাজতে হবে। এ সময় সামান্য লবণ দিয়ে দিতে হবে। পেঁয়াজ ভাজা হলে আলুর টুকরাগুলো বাদামি রং ধারণ করা পর্যন্ত হালকা করে ভাজতে হবে। আলুটা একটু ভাজা হওয়ার পর পেঁয়াজবাটা, রসুনবাটা, মরিচগুঁড়া, ধনেগুঁড়া, জিরাগুঁড়া, হলুদগুঁড়া দে।’

পেঁয়াজ ভাজা হলে আলুর টুকরাগুলো বাদামি রং ধারণ করা পর্যন্ত হালকা করে ভাজতে হবে

ছোটবেলায় সবার আগে এই আলুগুলোই খেয়ে নিতাম আমরা। এত মজা লাগত!
তারপর সব মসলার উপকরণ দিয়ে কষাতে হবে। পরিমাণমতো লবণ দিতে হবে। আম্মা বলেন, ‘রান্নার একটা কমন টিপস হলো, যত ধীরে কম আগুনে করা যায়, তত মজা। তাড়াহুড়ো করলে রান্নার স্বাদ নষ্ট হয়। মসলাসহ আলু কষাতে কষাতে কড়াইয়ে ধরে গেলে একটু একটু করে পানি দিবি। কষানোর পর তেল ভেসে উঠলে শিমের বিচি দে। এ সময় আরেকটু লবণ দে।

সব মসলার উপকরণ, মাছ, শিমের বিচি আর আলু দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে

‘শিমের বিচি ও আলু অন্তত ১৫ মিনিট নাড়াচাড়া করে রান্না করে তারপর মসলা দিয়ে মাখিয়ে রাখা কাতলা অথবা মাগুর মাছগুলো ছেড়ে দে। খুন্তি দিয়ে মাছগুলো আলু আর শিমের বিচির নিচের দিকে নামিয়ে দে। ৫ মিনিট ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখে দে। ৫ মিনিট পর ঢাকনা খুলে ২ কাপ গরম পানি দিয়ে ২০ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। এর এক ফাঁকে লবণ চেখে নিতে হবে। রান্না শেষ। তরকারি একটু ঠান্ডা করে গরম ভাতের সঙ্গে খাবি। চুলা থেকে নামানোর সঙ্গে সঙ্গে তরকারি খেলে আসল স্বাদ পাওয়া যায় না।’

শিমবিচি, লাল আলুতে মাছের ঝোল