নানা পদের ইফতারি

সামনেই পবিত্র রমজান মাস। বাড়িতে বানানো হবে নানা রকম ইফতারি। চেনা পদের ইফতারিতে চাইলে আনা যায় নতুনত্ব। রেসিপি দিয়েছেন ফাতেমা আজিজ
চিংড়ির পেঁয়াজু
চিংড়ির পেঁয়াজু

চিংড়ির পেঁয়াজু

উপকরণ: মসুর ডাল ১ কাপের চার ভাগের তিন ভাগ, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, হলুদগুঁড়া ৩ সিকি চা-চামচ, কাঁচা মরিচকুচি ৪/৫টি, লবণ সোয়া চা-চামচ, খাওয়ার সোডা (ইচ্ছা) আধা চা-চামচ, চিংড়ি মাছ বাটা আধা কাপ, মরিচগুঁড়া ৩ সিকি চা-চামচ, পুদিনাপাতার কুচি ৪ টেবিল চামচ, গরমমসলার গুঁড়া আধা চা-চামচ, তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি: ডাল ভালো করে ধুয়ে ডুবো পানিতে ৩/৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। পেঁয়াজ খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে কুচি করে নিন। পানি ঝরিয়ে ডাল বেটে নিন। একটি পাত্রে পেঁয়াজের সঙ্গে হলুদ, মরিচ ও গরমমসলার গুঁড়া, কাঁচা মরিচ, পুদিনাপাতার কুচি ও লবণ দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। ডাল ও চিংড়ি মাছ মিশিয়ে নিন এবার। কড়াইয়ে তেল গরম করুন। তেল গরম হলে হাতের চার আঙুল দিয়ে ডাল ও চিংড়ির মিশ্রণ উঁচিয়ে নিয়ে বুড়ো আঙুল দিয়ে চ্যাপ্টা করে পেঁয়াজু তেলে ছাড়ুন। এভাবে বেশ কয়েকটি পেঁয়াজু একসঙ্গে ডুবো তেলে ভাজুন। পেঁয়াজু মুচমুচে ভাজা হলে তেল ছেঁকে উঠিয়ে কিচেন পেপারে বা টিস্যু পেপারের ওপরে রাখুন। মুড়ি ও ছোলার সঙ্গে পরিবেশন করুন।

ফ্রুট পাঞ্চ

ফ্রুট পাঞ্চ

উপকরণ: সবুজ আপেল (কিউব করে কাটা) এক কাপ, সবুজ আঙুর (অর্ধেক করে কেটে নিতে হবে) আধা কাপ, কালো আঙুর অথবা লাল আঙুর (অর্ধেক করে কেটে নিতে হবে) আধা কাপ, পাকা আম (কিউব করে কাটা) ১ কাপ, তরমুজ (কিউব করে কাটা) পরিমাণমতো, কমলা খোসা ছাড়িয়ে কোষগুলো খুলে নিতে হবে অাঁশের ভেতর থেকে, ট্যাং পানিতে গুলে নেওয়া ৫০০ এমএল, চায়ের লিকার এক কাপ, মাল্টা বা কমলার জুস ৫০০ এমএল, স্বচ্ছ সোডাযুক্ত কোমল পানীয় এক লিটার, চিনি সিকি কাপ, পাকা আম (কিউব করে কাটা) ১ কাপ, পুদিনাপাতা সাজানোর জন্য।


প্রণালি: কিউব করে কাটা ফলগুলোতে লেবুর রস মেখে রেখে দিন। একটি পাত্রে চায়ের লিকার, ট্যাং, চিনি ও লবণ মিশিয়ে ফলের মধ্যে ঢেলে দিন। ফলের সঙ্গে ট্যাং লিকারের মিশ্রণ আলতোভাবে মিশিয়ে নাড়ুন। এবারে ১০ বা ১৫ মিনিট পরপর মাল্টা বা কমলার জুস ফলের পাত্রে অল্প অল্প করে ঢেলে মিশিয়ে নিন। পরিবেশনের আগে পরিবেশন গ্লাস বা কাপে ঢেলে ঠান্ডা কোমল পানীয় ঢেলে পুদিনাপাতা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

পুঁইপাতার বেগুনি

পুঁইপাতার বেগুনি
বেগুন ও পুঁইশাকের জন্য উপকরণ: বেগুন পাতলা স্লাইস করে কেটে নেওয়া ৬টি, লবণ পরিমাণমতো, লাল মরিচের গুঁড়া সিকি চা-চামচ, হলুদ ও মরিচের গুঁড়া সিকি চা-চামচ।

মিশ্রণের জন্য উপকরণ: ময়দা ১ কাপের চার ভাগের তিন ভাগ অথবা তিন সিকি কাপ, বেসন সিকি কাপ, বেসন দুই টেবিল চামচ, বেকিং পাউডার আধা চা-চামচ, বেকিং সোডা সিকি চা-চামচ, মরিচের গুঁড়া এক চা-চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, ভাজা জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ, লবণ তিন সিকি চা-চামচ, আদাবাটা সিকি চা-চামচ, রসুনবাটা সিকি চা-চামচ, ঠান্ডা পানি তিন সিকি কাপ।

প্রণালি: বেগুন পাতলা লম্বা করে কেটে লবণ মেখে ১৫-২০ মিনিট রেখে ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। পুঁইশাক পাতা ডাঁটা থেকে আলাদা করে নিয়ে ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে সামান্য লবণ মেখে হালকা ঝাঁকিয়ে নিন। একটি গামলায় ময়দার সঙ্গে বেসন, লবণ, বেকিং পাউডার ও বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন ভালো করে। এভাবে ঠান্ডা পানি বাদে অন্য সব উপকরণ একত্রে মিশিয়ে নিন। এবারে ঠান্ডা পানি দিয়ে ঘন মসৃণ মিশ্রণ তৈরি করুন। বেগুনে লবণ, হলুদ ও মরিচের গুঁড়া মেখে নিন। এবারে একেকটি পুঁইশাক পাতায় কোনাকুনি করে একটি করে বেগুনের স্লাইস বিছিয়ে মুড়ে নিন। কড়াইয়ে তেল গরম করে মাঝারি আঁচে পুঁইপাতায় মোড়ানো বেগুনগুলো বেসনের ঘন মিশ্রণে ডুবিয়ে ডুবো তেলে মচমচে করে ভাজুন। তেল ছেঁকে উঠিয়ে টিস্যু পেপারে ওপরে রাখুন। সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

ফলের চাট

ফলের চাট
উপকরণ: পাকা কলা (গোল করে কাটা) ৪টি, পাকা পেয়ারা (কিউব করে কাটা) ১টি, লেবু ২টি, পাকা আম (কিউব করে কাটা) ২টি, সবুজ আঙুর সিকি কাপ, কালো আঙুর সিকি কাপ, লাল আপেল ১টি (কিউব করে কাটা), তরমুজ (কিউব করে কাটা) দেড় কাপ, আনার দানা (ঐচ্ছিক) সিকি কাপ, কমলা (খোসা ছাড়িয়ে কোষগুলো খোলস থেকে বের করে নেওয়া) ১ কাপ, আনারস (কিউব করে কাটা) ১ কাপ, লবণ আধা চা-চামচ বা স্বাদমতো, ভাজা জিরার গুঁড়া ১ চা-চামচ, চাট মসলা পাউডার ১ চা-চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, চিনি ১ টেবিল চামচ, পুদিনাপাতার কুচি এক টেবিল চামচ।

প্রণালি: একটি বোলে সব উপকরণ একত্রে মিশিয়ে নিন। ঢেকে ২-৩ ঘণ্টা রেফ্রিজারেটরে রেখে দিন। পরিবেশন পাত্রে বা গ্লাসে পরিবেশন করুন।

ছোলার চাট

ছোলার চাট

উপকরণ: ছোলা আধা কেজি, শুকনা মরিচ ৪টি, জিরা ১ টেবিল চামচ, পাঁচফোড়ন ২ চা-চামচ, এলাচি ৪টি, আদাবাটা ১ চা-চামচ, আদাকুচি ২ চা-চামচ, মরিচগুঁড়া ২ চা-চামচ, চিনাবাদাম সিকি কাপ, তেঁতুল আধা কাপ, চিনি আধা কাপ বা স্বাদমতো, তেল আধা কাপ, আলু তিন শ গ্রাম, তেজপাতা ১টি, ধনে ১ টেবিল চামচ, দারুচিনি (২ সেন্টিমিটার) ৩টি, লবঙ্গ ২টি, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কিশমিশ দেড় টেবিল চামচ, চিনাবাদাম (অর্ধচূর্ণ) সাজানোর জন্য, পেঁয়াজ স্লাইস ৪টি, লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি: ছোলা ধুয়ে সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। আরেকবার ভালো করে ধুয়ে ডুবো পানিতে সেদ্ধ করে নিন। ছোলা বেশি পুরোনো হলো সামান্য খাওয়ার সোডা দিয়ে সেদ্ধ করুন। আলু সেদ্ধ করে ছোট কিউব করে কেটে নিন। শুকনা মরিচ, তেজপাতা, জিরা, ধনে, পাঁচফোড়ন, দারুচিনি, এলাচি ও লবঙ্গ আলাদা করে হালকা টেলে গুঁড়া করে নিন। কিশমিশ ধুয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ২ কাপ পানিতে তেঁতুল ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তেঁতুল ছেনে মাড় বের করুন। এই মাড়ের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে রাখুন। প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ বেরেস্তা করে তুলে রাখুন। আদাকুচি লালচে করে ভেজে তুলে রাখতে হবে। বাকি তেলে ভাজা গুঁড়া মসলা, বেরেস্তা ও ভাজা আদা ঝুরি বাদে অন্যান্য মসলা দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন।

মসলা থেকে তেল ছাড়া শুরু করলে আলু ও ছোলা দিয়ে মিশিয়ে নাড়ুন। লবণ দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে নিয়ে ডুবো পানিতে ২০ মিনিট মাঝারি আঁচে ফুটিয়ে নিন। ছোলা সেদ্ধ হলে তেঁতুলের মাড় ও পরিমাণমতো গরম পানি দিয়ে মিশিয়ে রান্না করুন। ঘন হয়ে এলে কিশমিশ ও চিনাবাদাম দিয়ে নাড়ুন। ভাজা গুঁড়া মসলা ও বেরেস্তা ও আদা ভাজা ছিটিয়ে আলতোভাবে নেড়ে চুলা বন্ধ করে দিন। টমেটো, শসা, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচকুচি, আদাকুচি, ধনেপাতাকুচি দিয়ে সালাদ তৈরি করে চাট মসলা মিশিয়ে পরিবেশন করুন।

ফুলুরি

ফুলুরি

উপকরণ: বেসন ১ কাপ, বেকিং পাউডার দেড় চা-চামচ, লবণ আধা চা-চামচ, ভাজা জিরার গুঁড়া আধা চা-চামচ, পুদিনাপাতার কুচি ২ টেবিল চামচ, তেল ভাজার জন্য, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, মরিচগুঁড়া আধা চা-চামচ, আদাবাটা সিকি চা-চামচ, পেঁয়াজকুচি ২টি, কাঁচা মরিচের কুচি ১ টেবিল চামচ।

প্রণালি: একটি গামলায় পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচের কুচি, লবণ, ধনেপাতার কুচি হাত দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে মেখে নিন। অন্য একটি শুকনা পাত্রে বেসনের সঙ্গে বেকিং পাউডার মিশিয়ে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ ও ধনেপাতার মিশ্রণে দিন। এবারে এগুলোর সঙ্গে হলুদ, মরিচ ও ভাজা জিরার গুঁড়া এবং আধা কাপ পানি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে একটি মসৃণ মিশ্রণ তৈরি করুন। কড়াইয়ে তেল গরম করে এক টেবিল চামচ বেসনের গোলা ছাড়ুন। সঙ্গে সঙ্গে ফুলে ভেসে ওপরে উঠলে বুঝে নিতে হবে তেলের তাপ ঠিক আছে। কড়া আঁচে একসঙ্গে পাঁচ/ছয়টি ফুলুরি মচমচে করে ভেজে তেল ছেঁকে উঠিয়ে টিস্যু পেপারের ওপরে রাখুন। পালংশাক, পুঁইশাক বা অন্য কোনো শাকপাতা কুচি করেও বেসনের সঙ্গে মিশিয়ে ফুলুরি তৈরি করা যায়। তেঁতুল ও পুদিনাপাতার চাটনির সঙ্গে পরিবেশন করুন।

জালি কাবাব

জালি কাবাব
উপকরণ: গরুর মাংসের কিমা আধা কেজি, পাউরুটি ২ স্লাইস, টমেটো সস ২ টেবিল চামচ, পেঁপে বাটা আধা চা-চামচ, পোস্তা দানা বাটা ১ টেবিল চামচ, মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, পুদিনাপাতার কুচি ১ চা-চামচ, লেবুর রস ২ চা-চামচ, জয়ত্রীগুঁড়া সিকি চা-চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, এলাচিগুঁড়া তিনটি, দারুচিনিগুঁড়া এক টুকরা, লবঙ্গগুঁড়া ১টি, আদাবাটা ১ চা-চামচ, ডিম ২টি, ব্রেডক্রাম্ব এক কাপ, বেরেস্তা ছয় টেবিল চামচ, রসুনবাটা আধা চা-চামচ, কাঁচা মরিচের কুচি দু–তিনটা, লবণ পরিমাণমতো, তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি: পাউরুটি পানিতে ভিজিয়ে নিংড়ে নিন। তেল, ডিম ও ব্রেডক্রাম্ব বাদে অন্য সব উপকরণ একত্রে মিশিয়ে ভালো করে মেখে নিন। মাংস আট ভাগ করুন। প্রতিটি ভাগ হাতের তালুতে ব্রেডক্রাম্বে গড়িয়ে ফেটানো ডিমে ডুবিয়ে ডুবো তেলে ছাড়ুন। তেলে ছাড়ার পর কাবাবের উভয় পিঠ ভাজার সময় আরও ডিম ছিটিয়ে দিন। তেল ছেঁকে উঠিয়ে কিচেন পেপারে রাখুন। সাজিয়ে পরিবেশন করুন।