নতুন উদ্যমে ফিরেছে ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টগুলো

ভোজনরসিক বাঙালির রেস্টুরেন্টে খাবার খাওয়া কতটা প্রিয় তা বোঝা যায় করোনাকালে ঘরবন্দীদের অভিজ্ঞতা শুনলে। এই যেমন সৈয়দ এরশাদ হোসেন বললেন, ‘তিন মাস পর্যন্ত আমরা বাইরের কোনো খাবার খেতে পারিনি। কিছু জায়গায়, যেখানে অনলাইনে অর্ডার করা সম্ভব, সেখানে অর্ডার করে খেয়েছি, সেই রেস্টুরেন্টের সংখ্যাও কম ছিল। যখন তিন মাস পর এলাম রেস্টুরেন্টে; মনে হলো যে তিন মাস নয়, যেন তিন বছর হয়ে গেছে।’

আমাদের খাদ্যতালিকায় ফাস্ট ফুড যে কত বড় একটা জায়গা দখল করে আছে, তা-ও বোঝা যায় কারও কারও কথায়। যেমনটি বলছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র, ‘ফাস্ট ফুডটা নিত্যদিনের সঙ্গী। যদিও মহামারি একটা ব্যাধি আছে, করোনা। এই সময়টাতে সব রকমের স্বাস্থ্যবিধি নিয়মকানুন মেনেই যে রেস্টুরেন্টগুলো খোলা আছে, সেগুলোতেই আসা প্রেফার করি।’

স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরব হচ্ছে রেস্টুরেন্টগুলো

করোনার কারণে সাধারণ ছুটি চলছিল সারা দেশে। সে সময় রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ছিল খুবই ঝুঁকিতে। সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর ধীরে ধীরে রেস্টুরেন্টগুলো খুলেছে। এর মধ্যে ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টগুলো দ্রুতই ফিরছে ব্যবসায়। সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রেস্টুরেন্টে গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে অনেকটাই সার্থক তারা। সম্পূর্ণ না হলেও ধীরে ধীরে পুষিয়ে যাচ্ছে অবরুদ্ধ সময়ের ক্ষতি। পিৎজা হার্টের আর জি এম ফাইজুল ইসলাম বলেন, ‘লকডাউনের সময় আমাদের বিক্রি কম ছিল। কারণ আমাদের ডাইনিং সার্ভিসটা বন্ধ ছিল। কিন্তু যখন থেকে আমাদের ডাইনিং সার্ভিস চালু হয়েছে, তখন থেকে আমাদের বিক্রি বাড়ছে।’

যে সময়টায় ব্যবসা গুটিয়ে বসে থাকার কথা ছিল, অনলাইনের বদৌলতে সে সময় কিছুটা ব্যবসা হয়েছে। ভোজনরসিকেরা খাবার পেয়েছেন হোম ডেলিভারির মাধ্যমে। ব্যবসা না হলেও কর্মচারীদের বেতন এবং আনুষঙ্গিক খরচ অনেকটাই জোগান পেয়েছিল অনলাইন ডেলিভারি সুযোগ থাকায়।

বার্গার কিং গুলশানের ম্যানেজার শাহরিয়ার নাজিম বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর পর প্রায় দুই মাস আমাদের ৭০ ভাগ ফল ডাউন করেছিল। কোভিড-১৯-এর আগে আমাদের প্রায় ৪০ ভাগ বিক্রি ছিল অনলাইনে, যা কোভিড-১৯-এর পরে বেড়ে হয়েছে ৬০ ভাগ।’

পঞ্চাশোর্ধ্ব জিল্লুর রহিম। সংসার চালান বাসায় খাবার সরবরাহ করার অনলাইন মাধ্যম ফুডপান্ডার রাইডার হিসেবে কাজ করে। করোনা-পরবর্তী সময়ে এ পেশায় এসেছেন তিনি। তবে এখন যে পরিমাণ অর্ডার পাচ্ছেন, তাতে তিনি ভালোই আছেন।
করোনায় অবরুদ্ধ সময়ের পরে কিছুটা স্বাভাবিকতার ছোঁয়া পেয়েছে ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টগুলো। সম্পূর্ণ পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরতে না পারলেও অনেকেই আশা করছেন, জনসমাগম ফিরবে আগের মতোই। আর অনলাইন? সেটাও গতিশীলতা পেয়েছে এই অবরুদ্ধ সময়ে এসে। স্বাভাবিকতার অন্বেষণে ধীরে ধীরে পথ পেয়েছে ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টগুলো।