শীত চলে গেছে, এসেছে ফাল্গুন। কিন্তু শীতের খাবারদাবারের আমেজ এখনো পুরোপুরি চলে যায়নি। এখনো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে শীতের সবজি, অবশ্য আর অল্প দিনই পাওয়া যাবে সেগুলো। তারপরেই বাজারে আসবে গরমের সবজি। সেগুলোর স্বাদ একেবারে আলাদা।
শীতের সবজি বাজার থেকে বিদায় নেওয়ার আগেই দেশি মাছযোগে বানিয়ে ফেলুন অসম্ভব সব সুস্বাদু খাবারদাবার। দেশি মাছের পরিচিত স্বাদে এই শেষবেলার পেঁয়াজকলি কিংবা ধনেপাতা অথবা শেষ শীতের সবজির ছোঁয়া আপনার জিবে আনবে অন্য রকম আমেজ। রেসিপি কল্পনা রহমান ও নকশা।
উপকরণ
মাগুর মাছ ৪টি, লাউ অর্ধেকটা, কুমড়ার বড়ি ১৫টি, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, কাঁচা মরিচ বাটা ১ চা-চামচ, জিরাবাটা ১ চা-চামচ, আদাবাটা ২ চা-চামচ, রসুনবাটা আধা চা-চামচ, পেঁয়াজবাটা ২ টেবিল চামচ ও তেল আধা কাপ।
মাগুর মাছ কেটে ধুয়ে লবণ মেখে রাখতে হবে পাঁচ মিনিট। কুমড়ার বড়ি অল্প তেলে ভেজে রাখুন।
এবার পাত্রে তেল দিয়ে সব বাটা ও গুঁড়া মসলা এক কাপ পানি দিয়ে কষাতে হবে। যখন মসলার কাঁচা গন্ধ চলে যাবে, তখন লাউ দিয়ে কষিয়ে নিন। ভালোভাবে কষানো হলে গরম পানি দিয়ে ঝোল করতে হবে। লাউ সেদ্ধ হয়ে এলে ভাজা বড়ি ও ভাজা মাছ দিয়ে দমে ঢাকনা দিয়ে ১০ মিনিট রান্না করতে হবে। বড়ি সেদ্ধ হলে ধনেপাতা দিয়ে ২ মিনিট চুলায় রেখে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
উপকরণ
মলা মাছ ২০০ গ্রাম, মিষ্টিআলু ২৫০ গ্রাম, তেলসহ আচার এক টেবিল চামচের তিন ভাগের দুই ভাগ, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচগুঁড়া আধা চা-চামচ, পেঁয়াজবাটা ২ টেবিল চামচ, জিরাগুঁড়া ১ চা-চামচ, তেল ৩ টেবিল চামচ, বোম্বাই মরিচ ১টি ও লবণ স্বাদমতো।
মাছের মাথা বাদ দিয়ে কাটুন। মাছ ধুয়ে লবণ ও লেবুর রসে মাখিয়ে রাখতে হবে ১০ মিনিট। মিষ্টিআলু মাছের সমান লম্বা করে কেটে নিতে হবে।
পাত্রে তেল দিয়ে সব বাটা ও গুঁড়া মসলা এক কাপ পানি দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিন। এবার মসলা দুই ভাগ করে এক ভাগে মাছ বিছিয়ে আধা রান্না করে রাখতে হবে। বাকি মসলায় আলু কষিয়ে ১ কাপ পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আলু সেদ্ধ হলে আচার দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে লবণ চেখে মাছগুলো আলুর ওপর বিছিয়ে বোম্বাই মরিচ চার ফালি করে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে পাঁচ-ছয় মিনিট মৃদু আঁচে দমে রেখে নামিয়ে রাখুন।
উপকরণ
শোল মাছের ফিলে (কিউব করে কাটা) ১ কাপ, পেঁয়াজ মোটা টুকরা ২ কাপ, ফুলকপি ছোট টুকরা আধা কাপ, আলু (কিউব) ১টা, মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, রসুনবাটা আধা চা-চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া সিকি চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ৪টি, টমেটো ২টি, পেঁয়াজপাতা সিকি কাপ, ধনেপাতার কুচি ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো ও তেল পৌনে ১ কাপ।
কিউব করে কাটা ফিলেতে সামান্য লবণ মেখে ১৫-২০ মিনিট পর ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। ফুলকপি ও আলু কিউব করে কেটে ধুয়ে ভাপ দিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজপাতা, ধনেপাতার কুচি ও টুকরা করা টমেটো বাদে মাছের সঙ্গে অন্য সব উপকরণ একত্রে মিশিয়ে লবণ ও আধা কাপ পানি দিয়ে ঢেকে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। পানি শুকিয়ে এলে পেঁয়াজপাতা, টমেটো ও ধনেপাতার কুচি দিয়ে নেড়ে মৃদু আঁচে রান্না করুন। কাঁচা মরিচ দিয়ে কিছুক্ষণ পর তেলের ওপরে উঠলে ঢেকে চুলা বন্ধ করে দিন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
উপকরণ
পুঁটি মাছ ২ কাপ, দেশি পেঁয়াজ ৮টি, রসুন ২ কোয়া, কাঁচা মরিচ ২টি, শুকনা মরিচবাটা ১ টেবিল চামচ, টমেটোকুচি ১টি, শর্ষের তেল ২ টেবিল চামচ, নারকেলবাটা আধা কাপ, লবণ স্বাদমতো, কলাপাতা ১টি, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ।
মাছ কুটে বেছে একবার ধুয়ে দিন। এবার ১ চা-চামচ লবণ মেখে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন। পেঁয়াজ, রসুন ও কাঁচা মরিচ বেটে নিন। মাছ ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। কলাপাতা বাদে সব উপকরণ একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে মেখে নিন। একটি কলাপাতা লম্বা করে কেটে ধুয়ে নিন। এবার এই পাতার এক প্রান্তে মেখে রাখা মাছের মিশ্রণ বিছিয়ে দিন। মাছের মিশ্রণ কলাপাতা দিয়ে মুড়িয়ে সুতায় বেঁধে নিন। প্যানে কলাপাতায় মোড়ানো মাছ মাঝারি আঁচে ঢেকে রান্না করুন। মৃদু আঁচে ২০ মিনিট ঢেকে রান্না করুন। ৩০ মিনিট পর সাবধানে উল্টে দিয়ে ঢেকে মৃদু আঁচে আরও ৩০ মিনিট রান্না করুন।
উপকরণ
পাবদা ৫০০ গ্রাম, সাদা শর্ষে ১ টেবিল চামচ, পোস্তদানা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, আদাবাটা সিকি চা-চামচ, রসুনবাটা সিকি চা-চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, মরিচগুঁড়া আধা চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ৩টি, ধনেপাতার কুচি ১ টেবিল চামচ, লেবুর রস আধা টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো ও শর্ষের তেল আধা কাপ।
পানিতে শর্ষে ও পোস্তদানা এক রাত ভিজিয়ে রাখুন। পানি ঝরিয়ে ১টি কাঁচা মরিচ দিয়ে বেটে নিন। মাছ ধুয়ে পানি ঝরিয়ে তাতে লবণ, লেবুর রস ও সিকি চা-চামচ হলুদ দিয়ে মেখে ওপরে অল্প লেবুর রস মেখে রেখে দিন কিছুক্ষণ। প্যানে সামান্য সাদা তেলে মাছ অল্প ভেজে নিন। অন্য একটি প্যানে শর্ষের তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি হালকা ভেজে তাতে আদা-রসুনবাটা, লবণ, বাকি হলুদগুঁড়া, মরিচগুঁড়া দিয়ে নেড়ে সামান্য পানি মিশিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। তেল ওপরে উঠলে পোস্তদানা ও শর্ষেবাটার মিশ্রণ দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষান। সামান্য পানি দিয়ে নেড়ে মাছ দিন। কিছুক্ষণ পর সাবধানে মাছ উল্টে দিন। ধনেপাতা ও কাঁচা মরিচ দিয়ে মৃদু আঁচে আরও ২ মিনিট ঢেকে রান্না করুন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
উপকরণ
লাউশাক ৫০০ গ্রাম, চিংড়ি আধা কাপ, নারকেলের দুধ ৪ কাপ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, রসুনকুচি ১ টেবিল চামচ, আদাবাটা আধা চা-চামচ, হলুদগুঁড়া সিকি চা-চামচ, দারুচিনি ২ টুকরা, তেজপাতা ৩টি, লবণ পরিমাণমতো ও তেল ৩ টেবিল চামচ।
লাউশাক বেছে ডাঁটা আলাদা করে নিন। গরম পানিতে শাক ভাপিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। চিংড়ি তেলে ভেজে তুলে রাখুন। প্যানে তেল গরম করে তেজপাতা ও দারুচিনির ফোড়ন দিয়ে রসুনকুচি সোনালি করে ভেজে পেঁয়াজকুচি, আদাবাটা ও চিংড়ি দিয়ে কষিয়ে নিন। সামান্য নারকেলের দুধ দিয়ে কষিয়ে নিন। লাউশাক দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে লবণ দিন।
এরপর নারকেলের দুধ ও কাঁচা মরিচ দিয়ে নেড়ে কিছুক্ষণ চুলায় রাখুন। ঝোল শুকিয়ে তেলের ওপরে উঠলে নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
উপকরণ
লাউশাক ৩০০ গ্রাম, চিংড়ি ২ টেবিল চামচ, আতপ চালের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, নারকেলবাটা ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজকুচি ২ টেবিল চামচ, রসুনকুচি ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ফালি ৪-৫টি, হলুদবাটা আধা চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল প্রয়োজনমতো।
শাক ধুয়ে পানি ঝরিয়ে কুচি করে নিন। কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে রসুনকুচি, পেঁয়াজকুচি, চিংড়ি, নারকেলবাটা, হলুদবাটা লবণ দিয়ে কষিয়ে নিন; কষানো হলে ১ কাপ পানি দিন। ফুটে উঠলে লাউশাক দিন। কাঁচা মরিচ দিয়ে নাড়ুন। সব মসলা মিশে গেলে এবং শাক সেদ্ধ হলে চালের গুঁড়া আধা কাপ পানিতে গুলে শাকের মধ্যে দিন। পরে গরম-গরম পরিবেশন করুন।