পদটির নাম দুধে লাউপাতা। দুধ দিয়ে লাউপাতা? হ্যাঁ, তাই-ই। কয়েক দিন আগেই নিরামিষের এ পদ খেয়েছিলাম দেবযানী ঘোষের কলাবাগানের বাড়িতে। দেবযানী ঘোষ বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারের বর্তমান মালিক দীপক ঘোষের সহধর্মিণী। চার পুরুষ ধরে তাঁদের মিষ্টির ব্যবসা। দুধে লাউপাতার এ তরকারি গরম ভাতে মাখিয়ে খাওয়ার পর মনে হলো, এ পদ না খেলে জানতামই না, নিরামিষ কতটা সুস্বাদু হতে পারে! অথচ এ রান্নায় পেঁয়াজ, রসুন, আদা, জিরা, কাঁচামরিচ—কোনো মসলাই ব্যবহার করা হয়নি। রান্নাটাও একদম সহজ।
১৯৯৮ সালে দেবযানী ঘোষের যখন বিয়ে হয়, তখন সবে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। তাঁর ভাষায়, বাবার বাড়িতে থাকতে তিনি কোনো দিন গ্লাসে পানি ঢেলেও খাননি, খুন্তি ধরা তো দূরের কথা। সব রান্না শেখা বিয়ের পর শাশুড়ির হাতে। শাশুড়ির কাছ থেকেই শিখেছিলেন লাউশাকের এ পদ। তাঁদের বাড়িতে কারও দাওয়াত থাকলে পারিবারিক ঐতিহ্যবাহী এ পদ খাওয়ার টেবিলে থাকবেই। রেসিপিটি তাঁর থেকেই নেওয়া। সুস্বাদু এ পদ আমার বাসার সবাই যাতে চেখে দেখতে পারে, সে জন্য আমিও করেছিলাম। আমাকে রান্নায় সাহায্য করেছে দীপক ঘোষ ও দেবযানী ঘোষের একমাত্র মেয়ে ত্রয়ী ঘোষ।
যা যা লাগবে
৩০০ গ্রাম লাউশাক, আধা চা–চামচ কালিজিরা, লবণ পরিমাণমতো, দুই টেবিল চামচ সয়াবিন তেল (দেবযানী ঘোষ অবশ্য সূর্যমুখী তেলে রান্নাটা করেছিলেন। তাঁদের বাড়িতে সূর্যমুখী তেলে রান্না হয়), চারটি শুকনা মরিচ, দুই পোয়া দুধ, আধা কাপ দুধের সর, আধা কাপ চালের গুঁড়া, পাঁচ-সাতটি ডালের বড়ি ও দুই চা–চামচ চিনি।
যেভাবে রান্না করবেন
প্রথমে হালকা আঁচে বড়িগুলো লাল করে ভেজে নিন। আমি বড়িগুলো ভেজে পাটার ওপর রেখে নোড়া দিয়ে আলতো আঘাতে ভেঙে নিয়েছি। এমনভাবে ভেঙেছি, যাতে একটা বড়ি তিন থেকে চার খণ্ড হয়। এরপর কড়াইয়ে তেল নিয়ে তেল গরম হলে তাতে আধা চা–চামচ পরিমাণ কালিজিরা আর চারটা শুকনা মরিচ ছেড়ে দিন। আগে বেছে কেটে ধুয়ে রাখা শাক ও শাকের নরম ডাঁটা দিন। পরিমাণমতো লবণ ছিটিয়ে দিন।
শাক পানি ছাড়বে। সেটা শুকিয়ে এলে দুধ, বড়ি দিয়ে ঢেকে দিন। আমি তিন পোয়া দুধ কমিয়ে দুই পোয়া করে রেখেছিলাম। দুধ ঢেলে আঁচ কমিয়ে দিন। ঝোলটা কমে এলে এক কাপ দুধ, আধা কাপ পানি আর আধা কাপ চালের গুঁড়ার মিশ্রণ ঢেলে দিন। সর যোগ করুন। ঝোলটা মাখো মাখো হয়ে এলে দুই চা–চামচ চিনি ছিটিয়ে দিন। আরও পাঁচ মিনিট দমে রাখুন। নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন। মরিচ কম খেলে চারটার জায়গায় দুটি শুকনা মরিচ ব্যবহার করুন। কেননা, নাড়াচাড়ায় আস্ত শুকনা মরিচ ভেঙে ঝালটা বেরিয়ে পড়ে। তখন মুখে একটু ঝালঝাল লাগতে পারে।
দেবযানী ঘোষ জানিয়েছিলেন, এ রেসিপিতে গাজর, শিম, ফুলকপিও ছোট ছোট করে কেটে দেওয়া যেতে পারে। আর কেউ যদি দুধের সর না খায় বা সর পাওয়া না যায়, সে ক্ষেত্রে এ রান্নায় ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্রিম বাজারে কিনতে পাওয়া যাবে।