ছবি: লেখক
ছবি: লেখক

উৎসবে ইলিশ, ইলিশের উৎসব

সার্বিকভাবে উৎসবের এ গল্প ৩০ হাজার কোটি টাকার। বর্তমানে আমাদের জাতীয় বাজেটের ১ শতাংশের ওপরে। এই পরিমাণটা ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছানো সম্ভব, অন্তত বিজ্ঞান সেটাই বলছে। পৃথিবীজুড়ে বাঙালিকে পরিচয় করানোর পঞ্চম আইকনখ্যাত বাংলাদেশি পেটেন্ট (জিআই) পাওয়া জলের রুপালি শস্য ইলিশের কথা বলছি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয়ে পরিচালিত এক গবেষণা বলছে, ইলিশই পৃথিবীর একমাত্র মাছ, যার ধর্মীয়, সামাজিক ও লোকসাংস্কৃতিক মূল্যমান আড়াই হাজার কোটি টাকার ওপরে।

সার্বিকভাবে উৎসবের এ গল্প ৩০ হাজার কোটি টাকার। বর্তমানে আমাদের জাতীয় বাজেটের ১ শতাংশের ওপরে। এই পরিমাণটা ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছানো সম্ভব, অন্তত বিজ্ঞান সেটাই বলছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয়ে পরিচালিত এক গবেষণা বলছে, ইলিশই পৃথিবীর একমাত্র মাছ, যার ধর্মীয়, সামাজিক ও লোকসাংস্কৃতিক মূল্যমান আড়াই হাজার কোটি টাকার ওপরে।

যুগে যুগে ইতিহাসের পাতায় পাতায় বাঙালিদের নানান উৎসবে ইলিশের ম-ম গন্ধে মেতে ওঠা গল্পের শেষ নেই। মাছে-ভাতে বাঙালিখ্যাত জাতিটি রকমারি মৎস্য, বিশেষ করে ইলিশ আহারে বুঁদ হয়ে ভোজনরসিক থেকে ভোজনশিল্পীতে খ্যাতি পেয়েছে। এ জাতির খাওয়াখাদাওয়ার রসিকতা আর ঐতিহ্য দেখে বিখ্যাত লেখক বুদ্ধদেব বসু ‘ভোজনশিল্পী বাঙালি’ নামে একটা বই-ই রচনা করে ফেলেছেন। সেখানে তিনি ইলিশের গুণগান আর উৎসবে–ইতিহাসে ইলিশের নানান অনুষঙ্গ পেড়ে বসেছেন।

যশোরের চৌগাছার ইলিশমারি নীলকুঠির অত্যাচার-পীড়নের গল্প সর্বজনবিদিত। বাংলার মসনদে ছোটলাটের আবির্ভাব-পরবর্তী সময়ে ইলিশমারি নীলকুঠিকেন্দ্রিক এই অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই সময় ছোটলাট-পত্নী লেডি কেসি ইলিশের ভক্ত হয়ে ওঠেন। তিনি কলকাতার গভর্নর হাউসে এক প্রীতিভোজ উৎসবে দাওয়াত পেয়েছিলেন। সেখানে অনেক কিছু খেয়েছেন, সঙ্গে ছিল বাংলার বিখ্যাত ইলিশ। পরবর্তীকালে তাঁর লেখনীতে বাংলার ইলিশ ও সুগন্ধি চালের বিস্তর প্রশংসার গল্প শুনতে পাই।

ইলিশই পৃথিবীর একমাত্র মাছ, যার ধর্মীয়, সামাজিক ও লোকসাংস্কৃতিক মূল্যমান আড়াই হাজার কোটি টাকার ওপরে

ইতিহাসের আরও এক ইলিশ-প্রীতিভোজের গল্প শুনতে পাই বিখ্যাত প্রাবন্ধিক বুদ্ধদেব বসুর লেখনীতে। সেখানে তিনি নিজেই আপ্যায়িত হয়ে বলেছেন ‘রজতবর্ণ মনোহরদর্শন মৎস্যকুলরাজ মহান ইলিশ। একদেহে এতটা প্রতিভা ধারণ করে যে শুধু তাকে দিয়েই তৈরি হতে পারে একটি পঞ্চপদি নানা স্বাদযুক্ত ভোজনের মতো ভোজন।—অর্থাৎ এই ভোজন উৎসবের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধুই ইলিশ।’ বুদ্ধদেব বসুর পঞ্চপদি ইলিশ এখন পঞ্চাশ পদ পেরিয়ে শতপদ ব্যঞ্জনের উপাখ্যান ছড়াচ্ছে বাংলার আনাচকানাচে।

ইলিশই একমাত্র উৎসবের মাছ, যাকে ঘিরে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে এককভাবে বিখ্যাত তিন-তিনটি রন্ধন প্রণালির বই, যার প্রতিটিতেই শতপদের ইলিশ রান্নার পদ্ধতির উল্লেখ রয়েছে। ১৯৭১-পরবর্তী ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত রাষ্ট্র প্রধান ইলিশের রাজকীয় প্রীতিভোজ করিয়েছেন এবং নিজেও করেছেন। এমনি এক ইলিশ উৎসবের ঘটনা ঘটে ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্যে এক নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। এই রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ উৎসবে শেখ হাসিনা নিজ হাতে রাষ্ট্রপতির অনেক পছন্দের খাবার ভাপা ইলিশ রান্না করেছিলেন। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ওই সব ইলিশ ছিল ঢাকা থেকে বয়ে নেওয়া পদ্মার ইলিশ। রাজকীয় ভোজন উৎসবে ইলিশের জন্য এটি এক গর্বের সংযোজন, ভালোবাসার ইতিহাস।

রাজকীয় ইতিহাস ছেড়ে এবার বাংলার ধর্মীয় ও লোকসাংস্কৃতিক উৎসবে ইলিশ উপাখ্যানের দিকে একটু নজর দিই। বাঙালি হিন্দু পরিবার সরস্বতী, লক্ষ্মী ও দুর্গাপূজায় জোড়া ইলিশ কেনাকে অতি শুভ লক্ষণ হিসেবে দেখে। তারা এসব পূজায় দেবীকে জোড়া ইলিশ উৎসর্গ করে। অনেকে আবার রান্না ইলিশে ভোগ দিয়ে থাকেন। লেখিকা আলপনা ঘোষ ‘ভোজনবিলাসে কলকাতা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, কলকাতার উল্লেখযোগ্য প্রাচীনতম দুর্গাপূজার মধ্যে একটি ১০৮২ সালে কেদারনাথ চট্টোপাধ্যায় আগরপাড়ায় মাটির ঠাকুরদালানে চালু হয়। এ ছাড়া ৫৫০ বছরেরও অধিককাল আগে নদীয়া জেলার চাঁদনিবাড়িতে এবং ১৬৬২ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার ভাগীরথী নদীর তীরের জঙ্গপুরের ঘোষালবাড়িতে শুরু হয় আরও দুটো প্রাচীনতম দুর্গাপূজা উৎসব। এসব উৎসবে দশমীতে পান্তা ভাত এবং ইলিশ মাছের ভোগ দেওয়ার রীতি উল্লেখ রয়েছে। দশমীর আগের রাতে ইলিশ মাছ রান্না করে সকাল সকাল দেবীকে ভোগ দিয়ে তারপর বাড়ির মেয়েরা উপোস ভাঙত।

ইলিশ শুধুই মাছ নয়, সংস্কৃতিও বটে

পান্তা ভাত আর ইলিশের প্রসঙ্গ এলে চলে আসে বাংলা নববর্ষের কথা। ১৯৮৩ সালে কতিপয় আগ্রহী সাংবাদিক বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পান্তা ভাত ও ইলিশ ভাজি খাওয়ার রীতি শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বাংলা নববর্ষে পান্তা-ইলিশ খাওয়া এক বিরাট উৎসবে রূপ নেয়। এ দেশের মানুষ বাছবিচারহীনভাবে নববর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে জাটকা ও মা ইলিশ নিধনের যজ্ঞে মেতে ওঠে। ইলিশের বাজার গরম হতে থাকে। মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যায় বাঙালির রসনাতৃপ্তির এই মহান ইলিশ।

যা-ই হোক, বাঙালি উৎসবপ্রবণ জাতি বলেই বারো মাসে তেরো পার্বণ পেরিয়ে আরও নতুন নতুন উৎসব-পার্বণে মেতে ওঠে। সব পার্বণ বা উৎসবে ইলিশ খাওয়ার রীতি চালু না থাকলেও বিবাহ উৎসব, দুর্গা-সরস্বতী-লক্ষ্মীপূজা, জামাইষষ্ঠী, বর্ষাপার্বণ ইত্যাকার সব আয়োজনে ইলিশ নিয়ে মাতামাতি দুই বাংলাতেই দেখা যায়। ড. অতুল সুর ‘ভারতে বিবাহের ইতিহাস’ গ্রন্থের মাধ্যমে জানাচ্ছেন, বাঙালির বিয়েতে মাছ অপরিহার্য। ভোজপর্বে পাঁচ ‘ম’-এর মধ্যে মাছ হলো অন্যতম। আদিকালে ধনিকশ্রেণির রোহিত মৎস্য বা রুই মাছ ছিল প্রিয়। আর ইলিশ ছিল সবার জন্য।

বিয়ের বরযাত্রীভোজ অনুষ্ঠানে বরকে একটি প্রমাণ সাইজের ইলিশ ভাজি করে খেতে দেওয়া হয়েছে

তারা বংশপরম্পরায় বিবাহতত্ত্বে, পাকাদেখা অনুষ্ঠানে, গায়েহলুদ, ক্ষীর খাওয়া ও বরযাত্রী প্রীতিভোজে এই মাছ খাওয়ানোর রীতি পালন করে আসছে। বিশেষ করে বরযাত্রীভোজ অনুষ্ঠানে বরকে একটি প্রমাণ সাইজের ইলিশ ভাজি করে খেতে দেওয়া; এ রীতির মানানসই অঙ্গ। বৃহত্তর বরিশাল, নদীয়া জেলাসহ পদ্মা অববাহিকার মানুষের মধ্যে এই রীতি এখনো দেখা যায়। আর পশ্চিমবঙ্গে জামাইষষ্ঠী উৎসব ইলিশ ছাড়া অচল। বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে টেলিভিশনের রান্নাবিষয়ক বড় বড় অনুষ্ঠানে ইলিশের রাজকীয় দখলদারিত্ব কেউই নজর এড়িয়ে যেতে পারে না।

ইলিশ আসলে শুধুই মাছ নয়, ইলিশ সংস্কৃতিও বটে। বর্ষার রিমঝিম শব্দে বাঙালি ইলিশ নিয়ে চিরকালই মেতেছে আর আড্ডা দিয়েছে। বর্ষার ইলিশ ভাজি আর খিচুড়ির গন্ধে গ্রামবাংলা ‘মৎস্যগন্ধা নারী’র খ্যাতি পেয়েছে সেই অনাদিকাল থেকে। মাতাল করা বর্ষাদিনে ঝাল ঝাল করে ভাপা ইলিশ দিয়ে ধোঁয়া ওঠা গরম-গরম সফেদ ভাত বাঙালির চিরায়ত খাদ্যসংস্কৃতিরই অঙ্গ। ইলিশের এসব ব্যঞ্জন আসলে স্বর্গসুখের ডাকনাম।

ইলিশ উৎসব এখন আর বাঙালি হেঁশেলেই আবদ্ধ নেই। আটপৌরে হেঁশেল থেকে বেরিয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে কিংবা পাঁচতারকা হোটেল-রেস্তোরাঁর জাঁকালো সব আয়োজন নিয়ে ভোজনরসিকদের ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে এক লোলুপ তাড়না সৃষ্টি করে চলেছে। তাই সময় কাটানোর বাহানা নিয়ে এসব রেস্তোরাঁয় বাঙালি বাঙালিতে মাথায় ঠোকর খেয়ে বলে ওঠে, আরে ভাই ইলিশ বলে কথা! পশ্চিমবঙ্গে চটকদার আর আকর্ষণীয় নাম (যেমন সুন্দরবন ইলিশ উৎসব) দিয়ে প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের ইলিশ উৎসব করতে দেখা যাচ্ছে। এসব আয়োজন এক থেকে পনেরো দিন, এমনকি মাসব্যাপীও চলতে দেখা যায়।

চাঁদপুর ইলিশ বাজার

উৎসবের এসব গল্প চলমান রাখতে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে ইলিশের অন্য রকম এক উৎসব। বর্তমানে চাঁদপুর ও বরগুনা জেলা আলাদা আলাদাভাবে ইলিশ উৎসব উদ্‌যাপন করছে।

‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর জেলা’ ব্র্যান্ডিং কার্যক্রমের আওতায় ২০০৯ সাল থেকে চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠন ও জেলা প্রশাসন সপ্তাহব্যাপী ইলিশ উৎসব উদ্‌যাপন করে আসছে। গত বছর তারা ১১তম ইলিশ উৎসব উদ্‌যাপন করে।

ভোলা ইলিশ চত্ত্বর

‘ইলিশের জেলা বরগুনা’ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসন ও জেলা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম প্রথমবারের মতো ইলিশ উৎসব আয়োজন করে। এ দুটি ইলিশ উৎসবের মূল টার্গেট হলো জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণ এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। এই উৎসবে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ইলিশ মাছসংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের আলোচনা, সাহিত্যপঠন ও লিখন এবং বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইলিশ ধরা নিষিদ্ধকাল শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে এই দুটি উৎসব আয়োজন করা হয়ে থাকে। এখানে ইলিশ–জেলে থেকে শুরু করে সব ধরনের স্টেকহোল্ডার, এমনকি ব্যাপক মাত্রায় ভোক্তার উপস্থিতি দেখা যায়। আর ভোজনরসিকদের তাৎক্ষণিক তৃপ্তি মেটানোর অবারিত সুযোগ থাকে। এ দুটি জেলা তাদের মতো করে মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষায় নতুন এক ইলিশের উৎসব শুরু করেছে। কাজেই উৎসব এখন আর কেবল ভোগেই সীমাবদ্ধ নেই, সংরক্ষণের দিকেও এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলার মধ্যে কমপক্ষে ১০টি ‘অধিক’ গুরুত্বপূর্ণ জেলায় ইলিশের এই কার্যক্রম অচিরেই শুরু করা উচিত। বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য অধিদপ্তর ও ওয়ার্ল্ডফিশ যৌথভাবে ‘ইলিশ প্রজনন উৎসব’ নামে নতুন একটি উৎসব শুরু করেছে। ২০১৬ সাল থেকে এই উৎসব শুরু হয় এবং এখন পর্যন্ত এটি চলছে। ইলিশ ধরা নিষিদ্ধকাল অবধি এটি চলতে থাকে, যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো মা ইলিশ সংরক্ষণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং ইলিশ সংরক্ষণ আইন কঠোর হাতে কার্যকর করা।

মৎস্য অধিদপ্তর ‘হিলশা ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যান’ নামে একটি বৃহৎ কর্মকৌশল হাতে নিয়ে তার বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে ৪৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ ছয়টি অভয়াশ্রম, ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্রগুলোয় ২২ দিন পর্যন্ত (অক্টোবর মাসের ভরা পূর্ণিমাতে) ইলিশ ধরা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় ইলিশ পরিবহন, সরবরাহ, বিক্রয় ও সংরক্ষণ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এটির কঠোর বাস্তবায়ন হচ্ছে।

বাংলাদেশের আইকনিক খাবার ইলিশ–খিচুড়ি

বাদল দিনের মাতাল করা ইলশেগুঁড়ির রিমঝিম শব্দের আয়োজন প্রায় শেষ প্রান্তে। জেলের জালভরে উঠছে প্রচুর ইলিশ। ইলিশে ইলিশে বাজার সয়লাব। বাঙালি দাঁতে ধার দিয়ে বসেছে ইলিশ খাওয়ার হরেক আয়োজন নিয়ে। ঠিক যেভাবে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্য সিরাজগঞ্জের আসাদউদ্দৌলা সিরাজীর বাড়িতে ঘটা করে ইলিশ খাওয়ার আয়োজনটা করা হয়েছিল। যা–ই হোক, যে গল্পটা শুরু হয়েছিল ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশাল অঙ্ক দিয়ে, অনতিবিলম্বে সেটা ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার বিজ্ঞানটাও আমাদের হাতেই রয়েছে। ২০১৫ সালের একটা গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল থেকে জানা গেছে, ১৫ দিন মা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধকালে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ইলিশের প্রজনন সফলতা পাওয়া গেছে। যার ফলে ৩০ হাজার ৮৯৭ কোটি জাটকার উৎপাদন নতুনভাবে হিলশা ফিশারিতে সংযুক্ত হয়েছে। বর্তমানে ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ এবং এই সময়ে যদি একই হারে প্রজনন–সফলতা পাওয়া যায়, তাহলে নতুন সংযুক্ত জাটকার পরিমাণ হবে দেড় গুণ।

ফিশ পপুলেশন ডিনামিক্স এবং হিলশা ফিশারিজ ম্যানেজমেন্টের অনেক ফ্যাক্টর, কো-ফ্যাক্টরকে হিসাবের মধ্যে রাখলেও ইলিশের উৎপাদন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সহজেই অনুমেয়। ২০০২-০৩ অর্থবছরে আমাদের ইলিশের উৎপাদন ছিল মাত্র ১ দশমিক ৯৯ লাখ মেট্রিক টন। বিগত ১৬ বছরের নানামুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে বর্তমানে ৫ দশমিক ৩৩ লাখ মেট্রিক টনে (মৎস্য অধিদপ্তর ২০২০) উন্নীত হতে পেরেছি আমরা। সুতরাং সময় এসেছে আরও এগিয়ে যাওয়ার।

উৎসবে ইলিশ পেতে ইলিশের উৎসবে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই কেবল আমাদের পাত আর ইলিশের জাত রক্ষা হবে। মৎসগন্ধা গ্রামে হবে ইলিশের উৎসব।

লেখক: মৎস্য বিশেষজ্ঞ, খুলনা

nirrahaman05@gmail.com